যেভাবে সংস্কার করা সংবিধান পাস হবে, জানা গেলো

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০২ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিশ্রুত উদ্দেশ্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এবং ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আলোকে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাসহ ৭ উদ্দেশ্যে সংবিধান সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ। আর এ সংস্কার করা সংবিধান পাস বা অনুমোদন দিতে কোন নির্বাচিত সরকার বা পার্লামেন্টের প্রয়োজন হবে না, এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ সংবিধানের বৈধতা দেবে বলে জানিয়েছেন সংস্কার কমিটির অন্যতম সদস্য শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মাহফুজ আলম।
রবিবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে সংবিধান সংস্কার বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটি এসব তথ্য জানায়।
এ সময় সংবিধান সংস্কার কমিটির সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইকরামুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট ড. শরীফ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার এম মঈন আলম ফিরোজী, লেখক ফিরোজ আহমেদ, লেখক ও মানবাধিকার কর্মী মো. মুস্তাইন বিল্লাহ এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মাহফুজ আলম।
সংস্কার কমিটির প্রধান ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, বর্তমান সংবিধান পর্যালোচনাসহ জনআকাঙ্খার প্রতিফলনের জন্য সংবিধানের সামগ্রিক সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিমার্জন, পুনর্বিন্যাস এবং পুনর্লিখন। কমিশন সংস্কারের সুপারিশ তৈরির জন্য বিভিন্ন অংশীজনদের মতামত ও প্রস্তাব নেয়া হবে। পাশাপাশি কমিশন সাধারণ নাগরিকদের মতামত ও প্রস্তাব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সংগ্রহ করবে।
আরো পড়ুন: ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে এলো নতুন নির্দেশনা
ড. আলী রীয়াজ জানায়, মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) থেকে এই ওয়েবসাইট কার্যকর হবে, প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এই ঠিকানা জানানো হবে। এর ব্যাপক প্রচারের জন্য আমরা গণমাধ্যমগুলোর প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করব লিখিত মতামত এবং সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানোর জন্য। সরকার বিভিন্ন কমিশনের কাছ থেকে পাওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে।
সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকছে না বাদ দিয়ে প্রস্তাব করা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটির বিষয়েও অংশীজনদের মতামত ও প্রস্তাব নেয়া হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, সাধারণ নাগরিকদের মতামত নেয়া হবে।
সরকার ব্যবস্থা ৫ বছরের বদলে চার বছর হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবেও সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধান রাজনৈতিক দল, আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার মতামতকে প্রাধান্য দেবার কথা বলেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস, মেয়াদ ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, অপসারণ, মেয়াদ এসব বিষয়েও সংস্কার কমিটি প্রস্তাব করবে বলেও জানান তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন এই পর্যায়ে সংবিধান বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, সিভিল সোসাইটির সংগঠনসমূহের প্রতিনিধি, সিভিল সোসাইটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, পেশাজীবী সংগঠনসমূহের প্রতিনিধি, তরুণ চিন্তাবিদ, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং তাদের কাছে থেকে লিখিত প্রস্তাব আহ্বান করবে। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। আমরা আশা করছি যে আগামী সপ্তাহ থেকেই অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে সক্ষম হবো এবং আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তাব জমা দেয়া সম্ভব হবে। এর পরে বর্তমান সরকার এটি অনুমোদনের বিষয়ে বিবেচনা করবেন।
আরো পড়ুন: গণঅভ্যুত্থানে আহত ৭ জনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলো তুরস্ক
আলী রীয়াজ আরো বলেছেন, যেসব ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা দল জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সক্রিয়ভাবে হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থেকেছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যাকাণ্ড ও নিপীড়নকে সমর্থন করেছে, ফ্যাসিবাদী কার্যক্রমকে বৈধতা দানে সাহায্য করেছে কমিশন সেইসব ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার প্রস্তাবের সুপারিশ তৈরিতে যুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন দেশের বর্তমান সংবিধানকে সমসাময়িক করার কথা বলেছেন বলেও জানান ড. আলী রীয়াজ।
এ সময় তিনি সাংবিধানিক সংস্কারের ৭টি উদ্দেশ্য জানান। এসবের মধ্যে আছে- ১. দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রতিশ্রুত উদ্দেশ্য সাম্য, ২. মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এবং ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আলোকে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা; ৩. ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জনআকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানো, ৪. রাজনীতি এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় সর্বস্তরে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরার ব্যবস্থা, ৫. ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার উত্থান রোধ, ৬. রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ- নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগকে পৃথককরা ও ক্ষমতার ভারসাম্য, ৭. রাষ্ট্র ক্ষমতা ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বিকেন্দ্রীকরণ ও পর্যাপ্ত ক্ষমতায়ন, রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক এবং আইন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকর স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিতকরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়াই হবে সংবিধান সংস্কারের উদ্দেশ্য।