সাক্ষাৎকারে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাইফুল আলম
পরিবহন সেক্টরের ৬ লাখ পরিবার নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা নেই

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৩ পিএম

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো এদেশে পরিবহন খাত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পায়নি। টার্মিনালগুলো আধুনিক করা হয়নি। সরকার চাইলে বহুতল টার্মিনাল করতে পারে। এতে পরিবহন সেক্টর কাউন্টার, ওয়ার্কশপসহ সংশ্লিষ্ট সবকিছু অন্তর্ভুক্ত করা যায়। একসময় পরিবহন মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠিত হয় বিআরটিএ। স্বাধীনতার এতো বছর পরও পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিকরা সরকারি সাহায্য সহযোগীতা থেকে বঞ্চিত। শ্রমিকরা পুরোপুরি অবহেলিত। অথচ দেশের ছয় লক্ষাধিক পরিবার এই খাতের উপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেন রোডে বোরাক টাওয়ার কার্যালয়ে ভোরের কাগজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে সড়ক পরিবহনের গুরুত্ব বারে। এরশাদের সরকারের শাসনামল থেকে রাস্তার পরিধি বাড়ে। পরিবহন জগতে আরামদায়ক-আধুনিক বাস যোগ হয়েছে বেসরকারি উদ্যোগে। কিন্তু সরকার এই খাতে সঠিক ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়নি। বরং এই খাত থেকে সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা ইজারার টাকা নিচ্ছে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম ভোরের কাগজকে বলেন, টার্মিনালগুলো গড়ে উঠার পরই এতে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা তৈরি হয়। সেখান থেকেই চাঁদাবাজির যোগসূত্র হয়। গত ১৬-১৭ বছর আওয়ামী লীগ সরকার পরিবহন সেক্টরকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করেছে। ট্রেড ইউনিয়নের কোনো নিয়ম না মেনে দলীয় নেতাকর্মীরা এই সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করেছে। তাদের অনেকে এখন ভোল পাল্টে টার্মিনালসহ পরিবহন সেক্টরে পূর্বের ন্যায় চাঁদাবাজির চেষ্টা করছে।
অপপ্রচার চালিয়ে তারা ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫ আগষ্টের দুদিন আগেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি কার্যালয় তালা মেরে পূর্বের নেতৃত্ব পালিয়ে যায়। এর পর পরিবহন মালিকরা তলবি সভা ডাকলে কাউন্সিলররা সরাসরি উপস্থিত থেকে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেন। সভায় পরিবহণ সেক্টরে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ শুরু করেন নেতৃবৃন্দ।
এশিয়া, একতা, এয়ারকন, ইউনাইটেড এক্সপ্রেস ও মতলব এক্সপ্রেসের মালিক সাইফুল বলেন, মালিক সমিতির গঠনতন্ত্রে মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের যৌথ স্বাক্ষরে গণপরিবহন পরিচালনা ব্যয়/ সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা আছে। এতে প্রতিটি গণপরিবহন থেকে প্রতিদিন সব খাত মিলিয়ে ৬০টাকা করে নেয়ার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু এই সুযোগকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে অনেকে চাঁদাবাজির চেষ্টা করে। সেজন্য গত ১৪ আগস্ট থেকে নির্ধারিত ৬০ টাকা করে নেয়াও বন্ধ রয়েছে। সায়েদাবাদ-মহাখালী-ফুলবাড়িয়া-গুলিস্তান টার্মিনালে যাতে চাঁদাবাজি না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা যৌথ বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের পর সমন্বয় করে কাজ করছে মালিক সমিতি। গাবতলীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় ও সহযোগীতা করছে মালিক-শ্রমিক সংগঠন।
মালিক ও কোনো শ্রমিক সংগঠন পরিবহণ থেকে টাকা/চাঁদা তুলতে পারবে না জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি রুটের মালিকরা নিজ দায়িত্বে সমিতিকে অবগত করে তাদের অফিস পরিচালনার জন্য (ভাড়া, ওয়েবিল, স্টাফ বেতন) ব্যয় নিবেন মালিকদের কাছ থেকে। যার লিখিত প্রমাণ থাকতে হবে। পরিবহণ সেক্টরের বদনাম-দুর্নাম ঘুচাতে মালিক-শ্রমিক ও প্রশাসন সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
সাইফুল আলম বলেছেন, একটি চক্র পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। তারা দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চায়। তারা সুযোগ সন্ধানী অপরাধীচক্র। এদেরকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো বেশি তৎপর হতে হবে। পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকরা এদের ব্যাপারে সজাগ রয়েছে। তবে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এই সেক্টরে স্বচ্ছতা আনতে সবার আন্তরিক সহযোগিতা দরকার।