যে কারণে দেশ ছাড়ার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যোগাযোগ করেননি শেখ হাসিনা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৪ পিএম

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার প্রচণ্ড জনরোষে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। দেশ ছাড়ার আগে তিনি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাননি দাবি করে ‘অভিমানের সুরে’ রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, ‘তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আমাকে কিছুই বলে গেলেন না।’ কী কারণে রাষ্ট্রপতিকে কিছু না বলেই শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেছেন তা উঠে এসেছে দেশের এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
সংবাদমাধ্যমটির রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’- এ প্রকাশিত ‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ওই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছিল। অন্তত দু’টি বিষয় নিয়ে দেখা-সাক্ষাৎ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দুজনের মধ্যে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ ও শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে বঙ্গভবন আর গণভবনের মধ্যে চিঠি চালাচালি চলছিল। রীতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেলে দেশে ফেরার পর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা যায় চীন ও ভারত সফরের পর। সম্পর্কের অবনতি এমনটাই ঘটেছিল যে, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনের দিকে পা-ই বাড়াননি। এই যখন অবস্থা, তখনই বিচারক নিয়োগের প্রশ্নটি সামনে আসে। গণভবন বা আইন মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা দেখে প্রেসিডেন্ট বিরক্ত হন।’
আরো পড়ুন : চুপ্পুর রাষ্ট্রপতি পদে থাকার অধিকার নেই
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪ প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে সামগ্রিকতা নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া উল্লেখ রয়েছে। নিয়োগের পদ্ধতি স্পষ্ট না থাকায় দীর্ঘদিন থেকে প্রথাগতভাবে নিয়োগ হয়ে আসছে। বিষয়টি লিখিত না থাকলেও আলোচনাক্রমে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পরামর্শ করার নিয়ম চালু আছে। প্রেসিডেন্টই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এই নিয়ম ভঙ্গ করে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে বঙ্গভবনে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। সারসংক্ষেপ বহনকারী ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের জন্য চাপ দিতে থাকেন। এতে বিরক্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট পাল্টা একটি চিঠি পাঠান সই না করেই। এতে তিনি বলেন, যেভাবে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে তাতে প্রেসিডেন্টের এখতিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘আমি কিছুই জানি না, অথচ আমাকেই চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে হবে। প্রচলিত নিয়মনীতি উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্টকেই পুতুল বানানো হয়েছে। শুধুমাত্র আমার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম কেন? দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া উপেক্ষা করার কী অর্থ আছে’।
ওই প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, আইনমন্ত্রী প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পরামর্শ করারও প্রয়োজন মনে করেননি। সবমিলিয়ে প্রেসিডেন্ট ব্যথিত হন-এটাও উল্লেখ ছিল চিঠিতে। এই চিঠির অনুলিপি দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীর দপ্তরে। ওদিকে প্রচলিত শ্রম আইন নিয়েও ভিন্নমত দেখা দেয়। আলোচনা না করে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষর নেয়ার জন্য সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। এতে প্রেসিডেন্ট মনঃক্ষুণ্ন হন। এতে করেই বঙ্গভবন ও গণভবনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। সম্ভবত এসব কারণেই হাসিনা ৫ই আগস্ট ক্ষমতা ও দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টেলিফোনেও কোনো যোগাযোগ করেননি।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতিকে কিছু না জনিয়েই ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে মো. সাহাবুদ্দিন সাংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।’