রোড ক্র্যাশে হতাহতের তথ্য প্রকাশে গরমিল

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
‘রোড ক্র্যাশে’ হতাহতের যে তথ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত হয় তার সংখ্যার যেমন তারতম্য রয়েছে। তেমনি পার্থক্য রয়েছে এর গুনগত মান নিয়েও। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, অ-পরীক্ষিত ও বহুমূখী সুচকের ব্যবহার, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতির ভিন্নতা, পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় ভিন্ন ভিন্ন ডাটাবেজ তৈরি, যথাযথ তথ্য বিশ্লেষণের অপ্রতুলতা ইত্যাদি এর উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত। সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাবে সড়ক নিরাপত্তাকে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে অগ্রাধিকার দেয়া এবং কার্যকর কর্ম-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা কর্তৃক ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি অনুযায়ী রোড ক্র্যাশে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ১১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ মারা যায় এবং প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয়। যা প্রতি মিনিটে ২ জন ও প্রতিদিন ৩২০০ জনের বেশি যাদের বেশিরভাগই শিশু এবং উপার্জনক্ষম। বিশ্বের অন্যান্য নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর মতই বাংলাদেশেও মানুষের মৃত্যু এবং ইনজুরির অন্যতম প্রধান কারণ ‘রোড ক্র্যাশ’; যা দেশের স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির উপর বিরাট বোঝা।
রোড ক্র্যাশ তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি শক্তিশালীকরণের উদ্দেশ্যে সোম এবং মঙ্গলবার দুই দিনব্যাপী এক র্কমশালায় এসব তথ্য জানান বিশিষ্টজনেরা। র্কমশালাটি আয়োজন করেছে নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনসিডিসি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সার্বিক সহায়তায় সেমিনারের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এর আরটিআই প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ ইউনিট।
প্রথম দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য উইং, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ সরকার চালক, পথচারী এবং সাইক্লিস্টদের জন্য সড়ককে নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। তিনি আরো বলেন যে, রোড ক্র্যাশ বিষয়ক তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির ত্রুটিগুলো দূর করতে প্রয়োজনীয় সবধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য উইং, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে সড়ক দুর্ঘটনা (রোড ক্র্যাশ) বিষয়ক রেজু্যুলেশন নেয়া হয়েছে, চলতি দশককে ‘ডিকেড অফ অ্যাকশন ফর রোড সেফটি ২০২১-২০৩০’ ঘোষণা করা হয়েছে। যাতে বাংলাদেশ সরকার একাত্মতা প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
র্কমশালার উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ জাকির হোসেন, এনসিডিসি। ডব্লিউএইচও ডেপুটি রিপ্রেজেনটেটিভ ড. রাজেশ নারওয়াল তার বক্তব্যে বলেন, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়টি নিশ্চিত করা একক কোন প্রতিষ্ঠানের কাজ নয়, এটি নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সরকারের এ উদ্যোগের সাথে সংযুক্ত হতে পেরে আনন্দিত। র্কমশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিআইপিআরবি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. একেএম ফজলুর রহমান।
দিনব্যাপী বিভিন্ন অংশগ্রহণকারী সংস্থা- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দপ্তরের বিশেষজ্ঞগণ, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), মেডিকেল ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিআইপিআরবি, থাইল্যান্ড সরকারের প্রতিনিধি সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের সড়ক দুর্ঘটনা (রোড ক্র্যাশ) বিষয়ক তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উপস্থাপন করেন।
অতিথিদের অংশগ্রহণে দলীয় কাজ উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে র্কমশালার দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে মুক্ত আলোচনা ও রোড সেফটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণের মতামত নেয়া হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে রোড সেফটি বিষয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের জন্য কম্প্রিহেনসিভ ডাটাবেইজ তৈরি করা, তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি, রোড ক্র্যাশ সংক্রান্ত সার্ভিলেন্স সিস্টেম তৈরি, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদনের বাইরে সংঘঠিত হওয়া রোড ক্র্যাশে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি নির্ধারণ করা, জাতীয় পরিকল্পনায় রোড ক্র্যাশের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়ার রাজনৈতিক সদিচ্ছা, রোড ক্র্যাশ জনিত কারণে মৃত্যুর সংজ্ঞা নির্ধারন করা, সর্বোপরি রোড ক্র্যাশ তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি লীড এজেন্সী নির্ধারণ করা- এ সুপারিশমালাগুলো আলোচনায় উঠে আসে।
অধ্যাপক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডাঃ সৈয়দ জাকির হোসেন সেমিনারের সমাপ্তি ঘোষনা করেন। একইসঙ্গে কর্মশালালব্ধ সুপারিশমালাগুলো রোড ক্র্যাশ বিষয়ক তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিকে সমৃদ্ধ করতে যথার্থ ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ লক্ষ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে সক্রিয় অবদান রাখার আহবান জানান।