আমাকে উপদেষ্টা বানানোর জন্য অহরহ কল আসছে: হিরো আলম

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম বলেছেন, অহরহ মানুষ আমাকে ফোন করে উপদেষ্টা হওয়ার কথা বলছেন। তবে আমার উপদেষ্টা হওয়ার কোনো আগ্রহ নেই। গত দুই দিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ আমাকে ফোন দিচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বলা হচ্ছে, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর চেয়ে আমি অনেক ভালো। ফারুকী যদি হতে পারে, আমি কি দোষ করলাম? সম্প্রতি বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করেন তিনি।
ফারুকীকে উপদেষ্টা করার প্রসঙ্গে হিরো আলম বলেন, আমি কথা বলতে পারি, মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। এগুলোই তো জনগণ চায়। ফারুকী ভাই কী হিসেবে উপদেষ্টা হলেন? জনগণ কেন কথাটা তুলে ধরছেন? ফারুকী ভাই কি ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন? ছিলেন না। দেশের জনগণের জন্য তিনি কি কাজ করেছেন? উনি নাটক-সিনেমা নিয়ে আছেন। ভিপি নুর (নুরুল হক নুর) ভাই, আন্দালিব রহমান পার্থ ভাই, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভী এরকম আরো যারা ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন, যারা আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবার থেকে (উপদেষ্টা) হতে পারতেন।
ফারুকীর প্রসঙ্গে আলোচিত ইউটিউবার বলেন, তারা জনগণের জন্য কাজ করেতে ভয় করেন। তারা কীভাবে উপদেষ্টা হন এটা সবার প্রশ্ন। আপনি রাজপথে নিজের বুকটা পেতে দিলেন না কেন? বললেন না কেন আপনারা মারবেন না, আমার একটা ছাত্রকে গুলি করার আগে আমার বুকে গুলি চালান। তাহলে বলতাম ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন।
দেশের কোনো জায়গায় দুর্যোগ হলে তাকে (ফারুকী) আমি এক পোটলা মুড়ি নিয়ে গিয়ে পাশে দাঁড়াতে দেখিনি। কোথাও একটা লোক বিপদে পড়লে তাদের প্রতিবাদমূলক কথা বলতে দেখিনি। কারণ তারা জানেন যদি দেশের মানুষের জন্য কথা বলেন, তাহলে তাদের নাটক-সিনেমা বন্ধ করে দেবে।
বাংলাদেশের রাজনীতির প্রসঙ্গে হিরো আলম বলেন, আজ পাঁচ বছরের জন্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, দলটি চলে গেলে বিএনপি ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগকে পেটাচ্ছে। না হলে জেলখানায় ভরছে। আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বিএনপিকে পেটাচ্ছে, জেলে ভরছে। তাহলে রাজনীতি যারা করেন তাদের ভবিষ্যৎ কি? তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে নোংরা হয়ে গেছে।
উপদেষ্টা হওয়ার জন্য ফোন পাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, হিরো আলমকে শুরু থেকেই অনেক লোক দেখতে পারেন না। আমি এ জায়গায় এসে কথা বলছি নিজের যোগ্যতায়। কেউ আমাকে যদি সহযোগিতা করতেন, সাহস দিতেন, তাহলে দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারতাম। ইতোমধ্যে অহরহ কল আসছে। বলছে আমরা উপদেষ্টা হিসেবে আপানাকে দেখতে চাই। এরকম বহু কথা বলছে ফোন করে। অফার আসলেই তো গ্রহণ করা সম্ভব না। উপদেষ্টা দিতে চাইলেও আমি নেব না। কারণ তখন জনগণ বলবে ওর (হিরো আলম) যোগ্যতা নেই। যেহেতু যোগ্যতা নেই, তাই হিরো আলমের রাজনীতিতে ফেরারও সুযোগ নেই।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন হিরো আলম। পরে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। হিরো আলম গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি বগুড়া-৪ (কাহালু ও নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (একতারা প্রতীক) হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এতে জাসদের এ কে এম রেজাউল করিমের কাছে ৮৩৪ ভোটে হেরে যান তিনি।
এরপর ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আলোচনায় আসেন হিরো আলম। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে হেরে গেলেও নির্বাচনের দিন তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। তখন এ হামলার নিন্দা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাস ও হাইকমিশন। বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসও হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে টুইট করেছিলেন।
এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন হিরো আলম। যাচাই-বাছাইয়ের দুই দফায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। পরে উচ্চ আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। ওইবার সিংহ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন হিরো আলম। তবে নির্বাচনের দিন কারচুপি ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি।