নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল নির্মানের ফলে বেনাপোল বন্দরের দক্ষতা অনেকাংশে বাড়বে। বন্দরের যানজট নিরসন হবে এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বাড়বে। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সকালে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনালের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। 

উপদেষ্টা বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে স্থলপথের সিংহভাগ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। এ প্রকল্পটি বাস্থবায়নের ফলে বেনাপোল স্থলবন্দরের দক্ষতা অনেকাংশেই বাড়বে। আমদানি-রপ্তানি কাজে নিয়োজিত যানের টার্নএ্যারাউন্ড টাইম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। একই সঙ্গে বন্দরের যানজট নিরসন হবে এবং দক্ষতা বাড়ার ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বাড়বে। 

তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক এবং ৪৫০ থেকে ৫০০টি বাংলাদেশি পণ্যবাহী ট্রাক এই বন্দরে আগমন করে। কিন্তু বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশের পর ব্যবহারযোগ্য কোন টার্মিনাল না থাকায় অধিকাংশ পণ্যবাহী ট্রাক রাস্তার ওপর অবস্থান করতো। ফলে সেখানে সার্বক্ষণিক যানজটের কারণে স্বাভাবিক আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতো। নবনির্মিত কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালটি নির্মাণের ফলে পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের পর এ টার্মিনালে নিরাপদে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। 

আরো পড়ুন: ভারতে বসে শেখ হাসিনার বিবৃতি, ভালো চোখে দেখছে না অন্তর্বর্তী সরকার

উপদেষ্টা কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল উদ্বোধন ও পরিদর্শন শেষে দুপুরে স্থলবন্দরের কর্মকর্তাকর্মচারীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। মতবিনিময় সভায় নৌপরিবহন উপদেষ্টা স্থলবন্দরের ইক্যুইপমেন্ট সরবরাহ, আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধিকরণ, বন্দরের অভ্যন্তরে যানজট নিরসন, নতুন ওয়্যারহাউজ/শেড নির্মাণ, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইক্যুইপমেন্ট হ্যান্ডলিংয়ের ব্যবস্থাকরণ, বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারকরণ ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেন। তিনি দুর্নীতি নির্মুলকরণ ও বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারতীয় অংশের চেয়ে উন্নত সেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

বেনাপোল স্থলবন্দরে নবনির্মিত কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনালটি ৪১ একর জমি অধিগ্রহণ করে নির্মাণ করা হয়েছে। টার্মিনালটিতে এক সঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৫০০টি ট্রাক ধারণের সক্ষমতা রয়েছে। এখানে পার্কিং ইয়ার্ড, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, সকল সংস্থার কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য কার্গো ভবন, টার্মিনাল ব্যবহারকারীদের বন্দর সেবা ভবন, নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য আধুনিক ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা ও সিসিটিভি স্থাপন, আধুনিক মানের ওয়াশ ব্লক, ১০০ মেট্রিকটন সক্ষমতার ওয়েব্রীজ স্কেল ও ড্রেনেজ সিস্টেমসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। 

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, যশোর জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলামসহ অন্যান্য সরকারি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

উল্লেখ্য, বেনাপোল স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, যানজট নিরসন এবং স্থলপথে বানিজ্যিক কার্যক্রম সম্প্রসারণে ২০২২ সালে ৩২৯ দশমিক ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনালটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।