জাতীয় নির্বাচনে ৩ দিনের ছুটি চায় গণ অধিকার পরিষদ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১২ পিএম

গণ অধিকার পরিষদ। ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নির্বাচনে তিনদিন ছুটিসহ ১৭টি সুপারিশ প্রদান করেছে গণ অধিকার পরিষদ। সোমবার (২৫ নভেম্বর) নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাছে ই-মেইলে এসব সুপারিশ করেছে দলটি। দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
রাশেদ খাঁন বলেন, গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের দলগুলোর বিচার শেষ হওয়ার আগে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেয়া যাবে না এমন সুপারিশ করেছে গণ অধিকার পরিষদ।
নবগঠিত নির্বাচন কমিশন নিয়ে নিজেদের প্রত্যাশা নিয়ে তিনি বলেন, নতুন গঠিত নির্বাচন কমিশন আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন করবে বলে আশা করছি। কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে হবে। নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশের দাবিও জানান তিনি।
গণ অধিকার পরিষদের ১৭ সুপারিশ-
১) অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানে নির্বাচনকালীন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্তকরণ এবং সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা গঠিত হবে।
২) জুলাই বিপ্লবে গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান যুক্তকরণ।
৩) নির্বাচন কমিশনের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো। সেক্ষেত্রে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পাশাপাশি আট বিভাগে আটজন নিয়োগ দান করা।
৪) নির্বাচন কমিশন গঠনের বর্তমান বিতর্কিত সার্চ কমিটির প্রক্রিয়া বাতিল করে রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি গঠনে আইন প্রণয়ন করা। সার্চ কমিটি কমিশনের সদস্য সংখ্যা দ্বিগুণ চূড়ান্ত করে গণমাধ্যমে প্রচার ও গণশুনানির মাধ্যমে নাম চূড়ান্ত করবেন। রাষ্ট্রপতি উক্ত নাম থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ প্রধান করবেন। একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের সচিব নিয়োগ।
৫) দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ এবং উচ্চকক্ষে ১০০ ও নিম্নকক্ষে আসন ৩০০। নিম্নকক্ষে সরাসরি ভোটে এবং উচ্চকক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্তভোটে সংখ্যানুপাতিক হারে আসন নির্ধারণ।
৬) সংরক্ষিত আসন বাতিল করে সব আসনে সরাসরি নির্বাচন। স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ, অর্থপাচারকারী, মাফিয়াদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার বিধান যুক্তকরণ।
৭) ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করা। প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রদানসহ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিধান যুক্তকরণ।
৮) নির্বাচনে কোনো প্রার্থী, ভোটার, সমর্থক, প্রার্থীর এজেন্ট নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার, নির্বাচন বিঘ্নিত হয়— এমন অনিয়ম, বিশৃঙ্খলায় জড়িত হলে ১০ বছরের জেল ও ১ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা। জেলা জজদের নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তিকরণ।
৯) রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্বাচনে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার না করা। এবং ভোট গ্রহণের অন্তত ৭ থেকে ১০ দিন পূর্বে সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিকট প্রদান।
১০) প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিংবা অন্যান্য কমিশনার নির্বাচনে কোনো পক্ষপাতমূলক ভূমিকা ও নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা প্রমাণিত হলে ১০ বছরের জেল এবং ১০ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা।
১১) নির্বাচনের কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পন্নকরণে নির্বাচন কমিশনের স্বতন্ত্র ক্যাডার ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ। নির্বাচনকালীন সময়ে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যাস্ত করা এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ভোটে অনিয়ম, কারচুপি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে শাস্তিপ্রাপ্ত কাউকে আদালতের অনুমতি ব্যতীত শাস্তি প্রত্যাহার না করা।
১২) জাতীয় পরিচয়পত্রের সব কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনে ন্যাস্ত করার পাশাপাশি এর নিরাপত্তা বিধানে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা প্রদান করা।
১৩) জাতীয় নির্বাচনের দিনসহ আগের আগের ও পরেরদিন মিলিয়ে নির্বাচনের সময় ছুটি তিন দিন করা।
১৪) নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন প্রাপ্তিতে ন্যূনতম জেলা, উপজেলায় কার্যক্রম নেই— এমন নামসর্বস্ব দলের নিবন্ধন করে রাজনীতিতে কালো টাকা, পেশীশক্তির হ্রাস ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে প্রকৃত রাজনৈতিক দলসমূহের জন্য বাৎসরিক বরাদ্দ প্রদান। নির্বাচনে প্রার্থীদের পোস্টার ছাপিয়ে দেওয়া এবং গণমাধ্যমে প্রচারণার ব্যবস্থা করা।
১৫) স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিল করে নির্দলীয় রাখা। জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া বন্ধ করা এবং ৫০শতাংশের নিচে ভোট পড়লে পুনরায় নির্বাচন দেয়া।
১৬) গুরুতর অনিয়ম, কেন্দ্র দখলসহ নৈরাজ্যকর অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ভোট গ্রহণ বন্ধ করতে পারবেন। একইভাবে যেকোন নির্বাচন বাতিল ও স্থগিত করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের থাকবে।
১৭) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নির্বাচনকালীন সময়ে সামরিক বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্তর্ভুক্তকরণ। নির্বাচনি কর্মকর্তা বিশেষ আইন ১৯৯১ এ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চতকরণ।
আরো পড়ুন: সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে যা ‘পদক্ষেপ’ নিতে বললেন নূরুল কবির
আরো পড়ুন: মোটরসাইকেল চলাচলে নতুন নির্দেশনা