ভারতীয় হাইকমিশনকে ইনকিলাব মঞ্চের স্মারকলিপি প্রদান

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৮ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, আজমির শরিফ দখলের পাঁয়তারা, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও সীমান্ত হত্যা বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনকে স্মারকলিপি দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে চারটায় রাজধানী ঢাকার গুলশান-২-এ ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে তিনজন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ভারতীয় দূতাবাসে যায় এবং স্মারকলিপি প্রদান করে।
প্রতিনিধিদলের সদস্যের মধ্যে ছিলেন- ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি, কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল জাবের এবং ঢাবি শাখা ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব ফাতেমা তাসনিম জুমা। ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি গ্রহণ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ভারতে সংখ্যালঘুদের প্রতি অসহিষ্ণুতা এবং ঘৃণা এখন চরমে। এই বিষয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ উদ্বিগ্ন। ভারতে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বর্তমান সরকার বিদেশী কূটনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নিজস্ব নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও হিন্দুত্ববাদী জনতা নির্বিচারে মুসলিম, খ্রিস্টান এবং দলিত সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালাচ্ছে। এমনকি তারা ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনকে রেহাই দেয়নি।
এতে আরো বলা হয়, হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিবিদদের দ্বারা ধর্মীয় স্থানগুলি যেমন, বিশিষ্ট গীর্জা এবং আজমীর শরীফ দরগাহের মতো উপাসনালয়গুলি ভেঙে দেয়ার ক্রমাগত হুমকি এই অঞ্চলের অসহিষ্ণুতাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশ ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে যত সমীকরণ
স্মারকলিপিতে ভারত সরকারের কাছে নিকটতম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশী নাগরিকদের উদ্বেগ স্বীকার করা এবং শান্তি রক্ষার স্বার্থে সংকট সমাধানে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এর আগে গুলশান দুই নম্বর গোল চত্বর থেকে একটি প্রতিবাদী র্যালি শুরু হয়। পরে পুলিশ তাদের পথরোধ করে। পরে তিনজন প্রতিনিধি ভারতীয় দূতাবাসে গেলে আন্দোলনকারীরা একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
সমাবেশে বক্তরা বলেন, ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তাদের গণমাধ্যম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চরম মিথ্যা ও উসকানিমূলক সংবাদ প্রচার করে বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাই বাংলাদেশ ধ্বংসের পাঁয়তারা করেছে তারা।
আরো পড়ুন: ইতিহাসে প্রথম: ভারতীয়দের জন্য ভিসা সীমিত করলো বাংলাদেশ
এসময় ভারত সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ আর কোনো দিন ভারতের তাঁবেদারি করবে না। ষড়যন্ত্র করলে কঠোর জবাব দেয়া হবে বলেও জানান বক্তারা।
স্মারকিলিপিতে ইনকিলাব মঞ্চ ছয় দফা দাবি উল্লেখ করে। ছয় দফা দাবি হলো-
১. আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা এবং ভারতীয় সরকারকে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন, কর্মকর্তা, তাদের পরিবারের সদস্য এবং তাদের সম্পত্তির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা
২. ভবিষ্যতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা এবং তদন্তের মাধ্যমে পূর্ববর্তী সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের বিচার করা; মণিপুরের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য বন্ধ করা এবং সেখানে সংঘাত নিরসনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতা সহায়তা ইউনিটের হস্তক্ষেপ চাওয়া
৩. দলিত সম্প্রদায়, খ্রিস্টান, মুসলিম, শিখ এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বৈষম্য ও সহিংসতা বন্ধ করা
৪. ধর্মীয় স্থান যেমন গীর্জা, মসজিদ এবং মাজারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা
৫. আজমির শরীফ দরগাহ ধ্বংস করার ক্রমবর্ধমান হুমকির অবসান ঘটাতে সরকারকে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়া
৬. হিন্দুত্ববাদী জনতার হাতে ধর্মীয় ও জাতিগত সহিংসতার শিকারদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করা।