গণহত্যার বিচার নিয়ে জুরিস্ট ইউনিয়নকে যা জানালেন উপদেষ্টা নাহিদ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৯ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই মাসের গণহত্যার বিচার বিশ্বমঞ্চে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার যে গণহত্যা চালিয়েছে, তা একেবারেই কল্পনাতীত। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক চান এই গণহত্যার বিচার হোক, এবং অন্তর্বর্তী সরকার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে তা সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে এই গণহত্যার বিচার করে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায়।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের দপ্তরে তুরস্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক জুরিস্ট ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকালে প্রতিনিধিদলকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে তৈরি করা ভিডিও ‘জুলাই অনির্বাণ’ দেখানো হয়।
নাহিদ ইসলাম জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ৫ আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশে থেকে পালিয়ে গেছেন স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। এরপর তিন দিনের জন্য কোনো সরকার না থাকায় অনেক ফ্যাসিস্ট সমর্থক দেশের বাইরে পালানোর সুযোগ পেয়েছিল। তিনি বলেন, "আমরা গণহত্যার বিচারের কাজ শুরু করেছি, এবং প্রাথমিক পর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলছে।"
জুলাই গণহত্যার বিচারের সময়কাল ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে এই বিচার দ্রুততম সময়ে অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে সম্পন্ন হবে। তবে তিনি নিশ্চিত করেন যে, এই বিচার কখনোই প্রতিশোধমূলক হবে না, কারণ "বিচার মানে ন্যায়বিচার।" তিনি আরো বলেন, গণহত্যার বিচারের বিষয়ে ফ্যাসিস্ট বিরোধী সকল রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
এদিকে, প্রতিনিধিদলের সদস্যরা মন্তব্য করেন, জুলাই গণহত্যা একটি সুস্পষ্ট অপরাধ এবং এর শাস্তি হওয়া উচিত। তারা নৈতিকভাবে এই বিচারের পক্ষে এবং বাংলাদেশ সরকারকে এই বিচারের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, "এই বিচার প্রক্রিয়াটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের নির্যাতিত মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, বরং বিশ্বের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের পরিণাম হিসেবে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রয়োজন।" তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর এই বিচার প্রক্রিয়ার ওপর রয়েছে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে।
তিনি বলেন, "আন্তর্জাতিক জুরিস্ট ইউনিয়নের পরামর্শ, সহযোগিতা এবং অভিজ্ঞতা গ্রহণ করতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রস্তুত।"
এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, আইসিটি পলিসি অ্যাডভাইজার ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তুরস্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক জুরিস্ট ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলে ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, তুরস্কের গণঅভ্যুত্থানে বিচারিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চিফ প্রসিকিউটর, তুরস্কের একাধিক সাবেক সংসদ সদস্য, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি, এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাংলাদেশি প্রসিকিউটররা।
আন্তর্জাতিক জুরিস্ট ইউনিয়ন বিশ্বের ৪০টি দেশে আইনজীবী, শিক্ষাবিদ এবং প্রসিকিউশন এক্সপার্টদের সঙ্গে কাজ করে এবং বাংলাদেশের কিছু আইনজীবীও তাদের সঙ্গে কাজ করছেন।