আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার থাকবে না: ড. বদিউল আলম

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:০৮ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
অতীতে যে সব নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী অপরাধ করেছেন তা তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তির মুখোমুখি করার সুপারিশ করেছেন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। এছাড়াও ইসি গঠন আইন পরিবর্তন করে দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে কমিশন গঠন এবং আগামী নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার থাকবে না বলে জানান তিনি।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ খান মিলনায়তনে ‘সংস্কার কমিশনের অগ্রাধীকার ভিত্তিক প্রতিবেদন ও তারপর কি?’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা আশা করছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে নির্বাচন ব্যবস্থা থাকলে ২-৩ টার্মেই মানুষ তাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। তখন সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা একটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হবে। সেই আকাঙ্ক্ষা থেকেই এই সংস্কারের প্রস্তাব করা হচ্ছে এবং একই সঙ্গে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করারও প্রস্তাব করার কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা একটা খসড়া প্রস্তাবনা দিয়েছি, আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেব। তবে তার পরে এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেগুলোর মধ্যে কতগুলো সংস্কার প্রস্তাব মেনে নেবেন সেটা তাদের বিষয়।
আরো পড়ুন: সংস্কার নিয়ে যে আশ্বাস দিলেন আসিফ নজরুল
আগে সংস্কার নাকি আগে নির্বাচন এমন প্রশ্নের জবাবে ড. বদিউল আলম বলেন, এর আগেও আমরা বলেছি নির্বাচন হলে তো আগেই হতে পারতো। সংস্কার করাই হচ্ছে নির্বাচনের জন্য। আমরা চাচ্ছি নির্বাচন যেন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়। এখন যে অপরিচ্ছন্ন মাঠ এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সেজন্য সংস্কার করতেই হবে। এই সংস্কারের পরে আশা করি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। এর মাধ্যমে (সংস্কার) আমাদের মধ্যে একটি সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ইউনিয়ন পর্যায়ে কয়েক দফা নির্বাচন দেয়া হবে কি না জানতে চাইলে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের অন্যতম দাবি ছিল সংস্কার। বিষয়টি আমরা হয়তো কেউ ভুলে গেছি, আবার কেউ বলার চেষ্টা করছে যে, সংস্কার আরো পরে হলেও হবে। আবার কেউ বলছেন, স্বৈরাচার যেন ফিরে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর কোনো দিন নয় এই স্বৈরাচার, কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা, ফ্যাসিবাদ যেন ফিরে না আসে। তার জন্যই সংস্কার দরকার। তাই সংস্কারের পক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের গণমাধ্যম এখানে খুবই ভালো ভূমিকা পালন করছে।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে খসড়া কিছু মতামত জমা দেয়ার কথা জানিয়ে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, সেখানে আমরা বলেছি, নো ইভিএম এবং ইভিএম যারা করেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। একইসঙ্গে গত কয়েকটি নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, আইন অনুযায়ী তাদের প্রত্যেকেরই ২ থেকে ৭ বছর শাস্তি হওয়ার কথা জানিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শাস্তির বিধান থাকলেও উল্লেখযোগ্যভাবে কারোরই শাস্তি হয়নি। আর আগামী নির্বাচনগুলোতে ‘না ভোটের’ বিধান যুক্ত করার বিষয়েও প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরো পড়ুন: বঙ্গভবনে সেদিন কাঁপছিলেন রাষ্ট্রপতি!
কমিশন প্রধান বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, নিজেদের প্রতি নিজেদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। ৫৩-৫৪ বছরেও আমরা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত করতে পারিনি। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছে। এখন কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করে আগাছাগুলো পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, নির্বাচনী মাঠকে সমতল করা। এর মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। আর পরবর্তী যে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারাও মনে রাখবে যে, কী প্রেক্ষাপটে তারা ক্ষমতায় এসেছে।
কমিশনের অন্যতম সদস্য ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, স্থানীয় সরকারের কোথাও তিন ওয়ার্ড নিয়ে একজন নারী কাউন্সিলর সিস্টেম আমরা বাতিল করে নারীদের জন্য তিনটি নির্দিষ্ট ওয়ার্ড সংরক্ষিত করার প্রস্তাব করবো। আর জাতীয় নির্বাচনেও নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টির স্থলে ১০০টি আসন বরাদ্দ করা এবং মোট ৪০০ আসনের এই ১০০টিতে শুধুমাত্র নারীরাই সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে বিজয়ী হয়ে আসবেন। এটা ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে প্রতি ৫ বছর অন্তর পরিবর্তন হবে। এছাড়া তিনি স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান পদটি সরাসরি নির্বাচন না দিয়ে কাউন্সিলর বা মেম্বাররাই তাদের মধ্যে থেকে সংসদীয় পদ্ধতি মতে একজনকে চেয়ারম্যান মনোনীত করবেন এ সুপারিশ করছি।