ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা: আতঙ্কের মাঝেও ১০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৭ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা: আতঙ্কের মাঝেও ১০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য গত ১৫ বছরে সরকারের পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণের অভাবে এ খাত ব্যাপকভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছে। পরিবহন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হঠাৎ করে এই যান নিষিদ্ধ করলে বহু পরিবার অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে। তাই এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার উত্থান
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা তৈরির কারখানাগুলো ঘুরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সময় সংবাদ। মুগদা, মান্ডা, গোড়ান, কামরাঙ্গীরচর, এবং কেরানীগঞ্জে এসব কারখানায় তৈরি হচ্ছে তিন চাকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বডি। কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগান এলাকায় অর্ধশতাধিক ওয়ার্কশপে প্রতিদিন শত শত অটোরিকশা তৈরি হচ্ছে।
কামরাঙ্গীরচরের এক কারিগর জানান, কাজের চাপ বেশি থাকলে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি অটোরিকশা তৈরি হয়। অন্য আরেক কারিগর বলেন, ঢাকার বাইরের চাহিদার জন্য এসব অটোরিকশা তৈরি করা হচ্ছে। এ খাতে বর্তমানে ৫০০ থেকে ৬০০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে।
প্রধান যন্ত্রাংশ এবং বাজার
অটোরিকশার প্রধান যন্ত্রাংশ ব্যাটারি এবং মোটরের বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়াম মার্কেটে। চীন থেকে আমদানি করা এই যন্ত্রাংশের জন্য এলসি খুলে শুল্ক পরিশোধ করা হয়। ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তুলছেন, যদি এই যান অবৈধ হয়, তাহলে যন্ত্রাংশ আমদানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে কেন।
এক ব্যবসায়ীর বক্তব্য, চীনা যন্ত্রাংশ ছাড়া এ যান তৈরি সম্ভব নয়। সরকার এ খাত থেকে অন্যান্য খাতের তুলনায় বেশি রাজস্ব আদায় করছে।
চালকদের ঋণের বোঝা
বেশিরভাগ অটোচালকই বড় বড় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এই যান কিনেছেন। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে তারা চরম আর্থিক সমস্যার মুখে পড়বেন। এক চালক জানান, “আশা” সমিতি থেকে নেয়া ঋণ মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। আরেকজন চালক বলেন, ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে অটোরিকশা কিনেছি। নিষেধাজ্ঞা এলে ঋণ শোধ করব কীভাবে?
বিশ্লেষকদের মতামত
বুয়েটের সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ মো. হাদিউজ্জামান জানান, গত ১৫ বছরে অটোরিকশার বাজার ১০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। শুধু ঢাকা শহরেই বর্তমানে ৮ থেকে ১০ লাখ অটোরিকশা চলাচল করছে। তিনি বলেন, এই যান রাতারাতি নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়। এটি বিজ্ঞানভিত্তিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
সংস্কার ও নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা
পরিবহন বিশ্লেষক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা অটোরিকশা নিষিদ্ধ না করে, ত্রুটি সংশোধন এবং চলাচলের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন। পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি ব্যবহার এবং ব্যাটারি ডাম্পিং নীতিমালা প্রণয়নের ওপরও জোর দেয়া হয়েছে।
মো. হাদিউজ্জামান আরো বলেন, অটোরিকশার ব্যাপকতা নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। হঠাৎ করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে এর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব চরম হবে।
অটোরিকশা খাত একদিকে যেমন পরিবহন নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে এটি লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। তাই সরকারের উচিত এ সমস্যার সমাধানে দ্রুত কার্যকর সংস্কার এবং নীতিমালা প্রণয়ন করা