নতুন বছর উদযাপনে আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানো বন্ধের সুপারিশ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
ইংরেজি নববর্ষের রাতে আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানোর কারণে বায়ু ও শব্দ দূষণ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ২০২৩ সালে ৩৬ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে ৩৫ শতাংশ বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পাওয়ার পর, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) নববর্ষ উদযাপনকে পরিবেশবান্ধব করতে আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানো বন্ধের সুপারিশ করেছে।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই সুপারিশ করা হয়। নববর্ষ উদযাপনের সময় আতশবাজি পোড়ানোর কারণে বায়ু ও শব্দ দূষণের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ এবং আতশবাজি ও ফানুস মুক্ত নববর্ষ উদযাপনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ক্যাপসের চেয়ারম্যান ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ২০১৭ থেকে ২০২৪ এই সময়ের মধ্যে বায়ুমান সূচক কখনই ভালো অবস্থানে ছিল না। বায়ুমান সূচক ৫০ এর নিচে থাকলে ভাল বায়ু বলা হয়, কিন্তু গত ৭ বছরে ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারিতে কখনও এই সূচক ৫০ এর নিচে ছিল না।
তবে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২১-২২ সালে করোনাকালে আতশবাজি ও ফানুস পোড়ানোর পরিমাণ কম ছিল।
শব্দদূষণ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মজুমদার বলেন, ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের কারণে শুধু বায়ু দূষণই হচ্ছে না, বরং মারাত্মক শব্দ দূষণও সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি জানান, ৩০ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ৩১ ডিসেম্বর ১টার মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় শব্দের মাত্রা ৪৮ ডেসিবেল থেকে ৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত পৌঁছায়, তবে রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে শব্দের মাত্রা ৮৫ ডেসিবেল থেকে ১১০ ডেসিবেল পর্যন্ত পৌঁছায়, যা শিল্প এলাকার জন্য নির্ধারিত ৭০ ডেসিবল সীমা অতিক্রম করে। ২০২৪ সালের প্রথম ঘণ্টায় শব্দ দূষণ আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং অধিকাংশ সময় শব্দের মাত্রা ৮০ থেকে ৯০ ডেসিবেল ছিল।
ক্যাপসের গবেষণায় দেখা যায়, গত ৭ বছরে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত গড়ে ৯০ শতাংশ সময় শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবল অতিক্রম করেছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
এক্ষেত্রে, ক্যাপস পরিবেশ সুরক্ষা ও আনন্দ উদযাপনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে ৬টি সুপারিশ করেছে:
১. দূষণ সৃষ্টিকারী আতশবাজি ও ফানুসের আমদানি, উৎপাদন, বিক্রয় ও সরবরাহে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।
২. আতশবাজি ও ফানুসের পরিবর্তে আলোকসজ্জা, প্রার্থনায় অংশগ্রহণ এবং সীমিত শব্দে দেশীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যেতে পারে।
৩. গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিবেশ সুরক্ষার বার্তা ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করতে হবে।
৪. শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ এবং অন্যান্য পরিবেশ সুরক্ষা আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৫. নববর্ষ উদযাপনের সময় পশু-পাখি এবং বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার জন্য সুরক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
৬. দূষণ নির্ধারণ এবং তার প্রভাব কমানোর জন্য গবেষণায় আরও বেশি তহবিল বরাদ্দ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম. শহিদুল ইসলাম, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, অরন্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রকিবুল হাসান মুকুল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. রাশেদুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ।