পুরোনো শাড়ি পরে ইলিয়াসপত্মীকে জড়িয়ে ধরে যা বলেন শেখ হাসিনা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:২৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে খুন করা হয় সিলেট অঞ্চলে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এম ইলিয়াস আলীকে। হত্যার পর খুনিচক্র ইলিয়াস আলীর লাশ যমুনা নদীতে ফেলে দেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিতে র্যাব সদস্য সার্জেন্ট তাহেরুল ইসলাম ইলিয়াস আলীকে অপহরণের পর লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য দেন।
গুম তদন্ত কমিশন সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে এসএসএফ-এর মহাপরিচালক ছিলেন লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সওরাওয়ার্দী। তার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ডিজিএফআইর তৎকালীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে ইলিয়াস আলীকে গুম করার নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। অথচ পরবর্তী সময়ে ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে ডেকে এনে নাটকও করেছিলেন।
পুরাতন শাড়ি পরে জড়িয়ে ধরেছিলেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও কন্যাকে। এসময় ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে অপহরণ করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধের জের হিসেবে এটা করা হয়েছে বলে ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে অবহিত করেছিলেন শেখ হাসিনা। এ নিয়ে সোমবার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা। প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর ইলিয়াস আলী গুম ও হত্যার আদিঅন্ত তুলে ধরা হয়েছে।
১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিতে র্যাবের সদস্য সার্জেন্ট তাহেরুল ইসলাম বলেন, জিয়াউল আহসানের নির্দেশে ঘটনার রাতে শেরাটন হোটেল থেকে তিনি ইলিয়াস আলীকে অনুসরণ করেন। মহাখালী পৌঁছার পর জিয়াউল আহসান নিজেই আরেকটি টিম নিয়ে ইলিয়াস আলীর গাড়ি অনুসরণ করেন। ইলিয়াস আলীর গাড়ি বনানীর ২ নং সড়কের বাসার সামনে পৌঁছার আগেই বনানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনে থেকে তাকে তুলে নেয়া হয়। ইলিয়াস আলীর সঙ্গে তার ড্রাইভার আনসারকেও অপহরণ করা হয়। গাড়িটি জলখাবার হোটেলের সামনে দিয়ে বনানীর ২ নম্বর সড়কে ঢোকার পরে এই অপহরণের ঘটনা ঘটে। ট্রাইব্যুনাল সূত্র আরো জানায়, ইলিয়াসকে হত্যা ছাড়াও র্যাবের জিয়াউল আহসানের কিলিং স্কোয়াডের এক সদস্য একদিনে ১১ জন এবং আরেক র্যাব সদস্য ১৩ জনকে খুন করেছিল।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল সন্ধ্যার পর দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ইলিয়াস আলী সভা করেন তৎকালীন শেরাটন হোটেলে (বর্তমান ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল)। সভা শেষ করে রাত ১১টায় তিনি বের হন এবং গাড়িতে করে বাসায় ফিরছিলেন। অপহরণের লক্ষ্যে জিয়াউলের নির্দেশে শেরাটন থেকেই অনুসরণ করছিলেন র্যাবের সদস্য সার্জেন্ট তাহেরুল ইসলাম। পরবর্তীতে তাকে চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত টিম। তাকে তদন্ত কমিটিতে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৬৪ ধারায় তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, আমার দায়িত্ব ছিল শেরাটন থেকে অনুসরণ এবং বেতার বার্তায় গতিপথ জিয়াউল স্যারকে জানানো। নির্দেশনা অনুযায়ী, তিনি ইলিয়াস আলীর গাড়ি অনুসরণ এবং প্রতিটি মুহূর্তে গাড়ির গতিপথ জিয়াকে অবহিত করা। মহাখালী পৌঁছার পর ইলিয়াস আলীর গাড়ি সরাসরি অনুসরণ শুরু করেন জিয়ার টিম। মহাখালী জলখাবার হোটেলের অদূরে বনানীর ২ নম্বর সড়কে গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে থামানোর পর ড্রাইভার আনসারসহ ইলিয়াস আলীকে অপহরণ করে এই টিমের সদস্যরা। এরপরই জিয়া তাহেরুলকে বলেন, ‘তোমার ডিউটি শেষ, চলে যাও।’ নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব শেষে তিনি ফিরে যান। জিয়ার টিম ইলিয়াস আলীকে নিয়ে যাওয়ার পর কী হয়েছে সেটা তিনি বলতে পারবেন না। ’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইলিয়াস আলীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছিল। হত্যার পর তৎকালীন র্যাব কর্মকর্তা এবং পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীতে পদোন্নতি পেয়ে মেজর জেনারেল হওয়া জিয়াউল আহসান অফিসে ফিরে স্বস্তি ও আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আজ বড় একটি অপারেশনে সাকসেসফুল হলাম। শেষ করে তাকে যমুনায় ফেলে দিয়ে এসেছি। জিয়া এ কথাও বলেন যে, ইলিয়াস আলী অপারেশনের কথা ঊর্ধ্বতনকে জানিয়েছি। ঊর্ধ্বতন বলতে তিনি মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকি কিংবা শেখ হাসিনাকে বুঝিয়েছেন বলে সূত্রের ধারণা।
আরো পড়ুন: ইলিয়াসকে কখন কীভাবে গুম করা হয়, ফাঁস করলেন অপহরণে জড়িত র্যাব সদস্য