বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের ধর্ষণের অভিযোগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বক্তব্য, যা জানা যাচ্ছে

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৪৫ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
গত আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। এরই প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘এখন পুরো বিশ্বের সামনে এভাবেই প্রকাশ হলো এই রিপোর্ট যে বাংলাদেশে প্রতি দিন হিন্দু সনাতনী নারীদের ধর্ষিত অত্যাচারিত হতে হচ্ছে ওখানকার মুসলমানদের দ্বারা। কট্টরপন্থী দ্বারা নয়, কারণ মুসলিম মানেই এক দুজন ছাড়া সবাই কট্টর নেগেটিভ তালিবানি মেন্টালিটির’ শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান (ফ্যাক্ট চেক) রিউমর স্ক্যানার। তাদের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি ভুয়া।
রিউমর স্ক্যানার জানায়, বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের ধর্ষণের অভিযোগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বক্তব্য প্রদানের ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং এটি ২০১৮ সালে ভিন্ন ঘটনা নিয়ে ব্রিটিশ এমপি লর্ড পিয়ারসনের বক্তব্যের ভিডিও। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৮ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের (হাউজ অব লডস) এক অধিবেশনে তিনি এই শতাব্দীর ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি শেতাঙ্গ নারীকে পুরুষদের (বেশিরভাগ মুসলিম) দ্বারা ধর্ষণের দাবি নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে সংসদ অধিবেশনে এক ব্যক্তিকে বলতে শোন যায়, এই শতাব্দীতে মুসলিম (বেশিরভাগ) পুরুষদের দ্বারা ২ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি শেতাঙ্গ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। উক্ত ভিডিওটিতে এই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কিছু বলতে শোনা যায়নি।
বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সৌদি আরবের গণমাধ্যম ARAB NEWS এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৩০ জুলাই ‘UK peer accused of Islamophobia for ‘power of the womb’ comments in debate on counter-terrorism’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে যুক্ত ছবিটির সঙ্গে আলোচিত ভিডিওটির একটি দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সংসদে ভাষণ দেওয়া এই ব্যক্তির নাম লর্ড পিয়ারসন। তিনি একজন মুসলিম বিদ্বেষী ব্রিটিশ সংসদ সদস্য। পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে আলোচিত এই সংসদ সদস্যের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর ‘House of Lords Question by Lord Pearson on Grooming/Rape gangs’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একটি দীর্ঘ সংস্করণ খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী ও ভিডিওটির বক্তব্য থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের (হাউজ অব লডস) এক অধিবেশনে নারীদের ওপরে হওয়া নির্যাতন নিয়ে তিনি বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, এই শতাব্দীর ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি শেতাঙ্গ নারী পুরুষদের (বেশিরভাগ মুসলিম) দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। উক্ত ভিডিওটিতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তাকে কোনো বক্তব্য প্রদান করতে দেখা যায়নি। অর্থাৎ, এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এর সঙ্গে আলোচিত দাবিটির কোনো সম্পর্ক নেই।
উল্লেখ্য, গত ৩ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের হাউস অফ কমন্সে লেবার এমপি ব্যারি গার্ডিনার বাংলাদেশের হিন্দুদের নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। সেখানে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়। সুতরাং, ২০১৮ সালে ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের হিন্দু নারীদের নির্যাতনের ঘটনায় সংসদে ব্রিটিশ এমপির বক্তব্যের ভিডিও দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।