এমপি পদ কি হারাচ্ছেন হাজী সেলিম

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২১, ০৭:৩৭ পিএম

ফাইল ছবি
দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ায় সংসদ সদস্য (এমপি) পদ হারাতে হতে পারে হাজী মোহাম্মদ সেলিমের। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রাখার নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।
মঙ্গলবার এই রায়ের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ভোরের কাগজকে বলেছেন, হাজী সেলিম ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত, হাইকোর্টে তাতে ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং সংবিধানের ‘আর্টিকেট ৬৬ এর ২ উপধারা ডি’ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ১০ বছরের কোন সাজাপ্রাপ্ত আসামীর সংসদ সদস্যপদ থাকে না।
হাইকোর্টের রায় নিশ্চয় সংসদকে অবগত করা হবে, তখন স্পিকার এ সিদ্ধান্ত নেবেন বলে মন্তব্য করেন দুদকের এ আইনজীবী। তিনি আরো বলেন, হাজী সেলিমের আইনজীবীরা বলেছেন, তারা সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগে আপিল করবেন, এ সুযোগ তাদের রয়েছে। তবে এ আপিলের সঙ্গে এটার কোন সম্পর্ক নেই। কেননা আপিলে কখনো দণ্ড স্থগিত হয় না। এ সাজা এখন থেকে কার্যকর হবে। তিনি বলেন, স্পিকারের হাতে যদি নিম্ম আদালতের রায় থাকে তাহলে স্পিকারের উচিত হাজী সেলিমের আসন শুন্য ঘোষণা করা। কেননা আপিল বিভাগ কখনো দণ্ড স্থগিত করে না। তাই সংবিধান অনুযায়ী তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না বলে জানান খুরশীদ আলম খান।
তবে এ বিষয়ে স্পিকারের কোন মন্তব্য পাওয়া না গেলেও সংসদের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান ভোরের কাগজকে জানান, হাইকোর্টের সাজার রায় যদি সংসদে স্পিাকার বরাবর পাঠানো হয়, তখন তিনি সংবিধান মোতাবেক হাজী সেলিমের সংসদ সদস্য পদ থাকবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ভোরের কাগজকে এ প্রসঙ্গে বলেন, দুর্নীতির জন্য হাইকোর্টে তার সাজা হয়েছে ১০ বছরের। এটি দীর্ঘদিন আগে দুদকের করা মামলা। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে হাজী সেলিম সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রিভিউ করার জন্য আপিল করতে পারেন। সেখানে কি রায় হয় সেটি দেখা দরকার। সেখানে সময় ক্ষেপণ হবে। তাই এক্ষুনি হাজী সেলিমের সংসদ সদস্যপদ থাকছে না এমন কথা বলা যাচ্ছে না। দেখা যাক তারা যদি আবেদন করে, তার শুনানীতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কি রায় দেন।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিশিষ্ট আইনজীব শাহদীন মালিক ভোরের কাগজকে জানান, হাজী সেলিম ইতোপূর্বে ১০ বছরের সাজা মাথায় নিযে দুবার এমপি হয়েছেন। তখন তো তার এমপি পদ নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। এবারেও তার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন বা রিভিউর সুযোগ রয়েছে। সুতরাং সেখানেও রায় হতে কতদিন লাগে, সেটাও বিবেচনায় রাখা দরকার। তিনি বলেন, ইতোপূর্বে তিন চারজন এমপির সাজা হলেও আপিল করে তারা সংসদ সদস্য পদে টিকে ছিলেন। এমন রেকর্ড তো আমাদের সংসদের ইতিহাসে রয়েছে। তবে পাপুলের সদস্য বাতিলের সদস্য পদ কেন বাতিল হয়েছে তা আপনারা সবাই জানেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১৩ বছরের দ-ের মামলার আপিলের ওপর শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৯ মার্চ দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে লালবাগ থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে ১৩ বছরের কারাদ- দেন বিচারিক আদালত। কারাদ-ের পাশাপাশি তাকে ২০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট তার সাজা বাতিল করেন। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক।
ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে হাইকোর্টে ওই আপিল (হাজী সেলিমের) পুনরায় শুনানি করতে বলা হয়। এরপর প্রায় পাঁচ বছর ওই আপিলের শুনানি হয়নি। আজ এ রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। তবে যেহেতু এটি ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে হাইকোর্ট পূণরিভিউ করে রায় দিয়েছেন সেহেতু এ রায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বহাল থাকার সম্ভাবনা বেশী বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।