আবাসিক ভবনের নিচ তলায় চলে রূপনগরের কার্যক্রম

ইমরান রহমান
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০১৮, ০২:৩২ পিএম

মাঝারি আকারের সাইনবোর্ডটা খেয়াল না করলে ৭তলা ভবনটিকে পুরোপুরি মধ্যবিত্তের আবাসন বলেই মনে হবে। কিন্তু ওই ভবনের নিচতলা ভাড়া নিয়েই কোনো রকমে চলছে রূপনগর থানার কার্যক্রম। ভবনের সামনে বা নিচে গাড়ি পার্ক করার মতো কোনো জায়গা নেই। ফলে রাস্তা দখল করে এবং অন্যান্য ভবনের সামনে রাখা হয় থানার টহল গাড়ি, মোটরসাইকেল এবং বিভিন্ন মামলায় আটককৃত গাড়িগুলো। জায়গার অভাবে বিশুদ্ধ পানির ট্যাংকও রাখা হয়েছে থানার পাশের সড়কে। অভ্যাগতের সংখ্যা একাধিক হলে থানার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। রয়েছে জিডি ও মামলার বিনিময়ে টাকা নেয়ার অভিযোগও। এ ছাড়া জনবল সংকট ও আবাসিক সমস্যা চরমে বলে জানিয়েছেন থানা সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৩ জুন রাতে সরেজমিন দেখা যায়, ভেতরে জায়গা না হওয়ায় থানার সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে একটি পারিবারিক ঝামেলার মীমাংসা করছেন মাহতাব নামে এক পুলিশ সদস্য। প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে ৮-১০ জন লোক দাঁড়িয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। পরে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ২৬ নম্বর রোড থেকে আসা ওই পরিবারটি বাসায় চলে যায়।কিছুক্ষণ পর থানার পাশের বাড়ির গেটের সামনে এক মহিলাকে বসে কান্না করতে দেখা যায়। কি কারণে থানায় এসেছেন? জানতে চাইলে ওই মহিলা বলেন, তার মা তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছেন না। এ বিষয়ে থানায় জিডি করলেও পুলিশ কোনো সহায়তা করছে না। জিডি করতে কোনো টাকা লেগেছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কাছ থেকে ১৫০ টাকা নিছে। এরপর ওই মহিলা ওসিকে বিষয়টি জানালে ওসি আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক মহিলা অভিযোগ করেন, ২ দিন আগে মামলা করতে তার কাছ থেকেও ৩০০ টাকা নেয়া হয়।
থানার বিভিন্ন সমস্যা ও অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রূপনগর থানার ওসি মো. শেখ শাহ আলম থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন্সের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। পরে ইন্সপেক্টর (অপারেশন্স) মো. মোকাম্মেল হক ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের থানায় জিডি কিংবা মামলার বিনিময়ে কোনো টাকা নেয়া হয় না। যদি এ ধরনের নির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, নিজস্ব ভবন না থাকাই রূপনগর থানার সবচেয়ে বড় সমস্যা। তবে, ইস্টার্ন হাউজিংয়ে থানার জন্য ২০ কাঠা জমি বরাদ্দ আছে। সরকারি বাজেট পেলে সেখানে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এর পাশাপাশি আরো কিছু জনবল বাড়ানো দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
থানার কর্মকর্তারা জানান, ইমব্যাংকমেন্ট প্লাস রোড, বিরুলিয়া, সারুলিয়া, উত্তর উলুমারা, দ্বিগুণ, চাকদ্বিগুণ, গোড়ান চাটবাড়ি, ইস্টার্ন হাউজিং, আগুনডা, রোজ গার্ডেন, চিড়িয়াখানা, রূপালি হাউজিং, ঝিলপাড় বস্তি, আরিফাবাদ, দুয়ারিপাড়া, পূরবী, বিএসআইসি, শিয়ালদি, আলোকদি ও পিডিবি কলোনি নিয়ে রূপনগর থানা গঠিত। এ থানায় ১ জন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (ওসি), ২ জন ইন্সপেক্টর, ২১ জন এসআই, ২৫ জন এএসআই ও ৩৫ জন কন্সটেবল রয়েছে। থানাটিতে প্রতি মাসে ২০-২৫টি মামলা হয়। যার মধ্যে ৬০ শতাংশ মাদক ও ২০ শতাংশ নারী নির্যাতন মামলা। থানা সূত্র জানায়, এই থানা এলাকায় ১৬টি গার্মেন্টস থাকায় নারী নির্যাতনের হার বেশি।