উত্তরা পূর্ব থানার ওসির রমরমা বখরা বাণিজ্য

ইমরান রহমান
প্রকাশ: ২২ জুন ২০১৮, ০২:৫৬ পিএম

রাজধানীর উত্তরার ২, ৪, ৬ ও ৮ নম্বর সেক্টর নিয়ে গঠিত উত্তরা পূর্ব থানা। ২ নম্বর সেক্টরে র্যাব-১ ও এপিবিএনের সদরদপ্তর ও ব্যারাক। ৮ নম্বর সেক্টরে সরকারি কোয়ার্টার। ৪ ও ৬ নম্বর সেক্টর আবাসিক এলাকা। যেখানে উচ্চবিত্তের বসবাসই বেশি। আর এই দুই সেক্টর ঘিরে গড়ে উঠেছে ফুটপাত। পুরো থানা এলাকায় অবাধে চলছে অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। রয়েছে আবাসিক এলাকায় নিষিদ্ধ থাকা ৩টি ড্রাইভিং স্কুল। চলছে রাস্তার জায়গা দখল করে ইট-বালুর ব্যবসা ও দুটি লেগুনা স্ট্যান্ড। এসব কিছুর পেছনেই রয়েছে উত্তরা পূর্ব থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকীর বখরা বাণিজ্য।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় ১ হাজার ৫০টি অবৈধ অটোরিকশা চলাচল করে। এসব অটোরিকশা থেকে সকালে ১০০ ও বিকালে ২০ টাকা করে চাঁদা উঠায় লাইনম্যান আবু সাঈদ। আবু সাঈদ কাজ করে মকলেস সরকারের নেতৃত্বে। এই মকলেস সরকার ওসিকে মাসে ৩০ হাজার টাকা বখরা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে এই অবৈধ যান। আজমপুর ও আবদুল্লাহপুরে রয়েছে ২টি লেগুনা স্ট্যান্ড। আজমপুরের লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে কাউছারের নেতৃত্বে টাকা ওঠায় লাইনম্যান তারেক। আবদুল্লাহপুরের লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে মো. লিটনের নেতৃত্বে টাকা ওঠায় লাইনম্যান সুলতান। এই দুই স্ট্যান্ড থেকে মাসে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা পান ওসি। আজমপুর ও আবদুল্লাহপুরে রয়েছে একাধিক ফুটপাত স্পট। যেখানে ফল, কাপড়, জুতা থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করা হয়।
ফুটপাত ব্যবসায়ীরা জানায়, আজমপুর থেকে টাকা ওঠায় লাইনম্যান আতিক। আবদুল্লাহপুর থেকেও টাকা ওঠায় অন্য এক লাইনম্যান। এই দুই এলাকার প্রায় ২০০ দোকান থেকে ওঠানো চাঁদার টাকার অর্ধেক চলে যায় ওসির পকেটে। এ ছাড়াও ওসির নেতৃত্বে রাস্তার পাশে অবৈধভাবে ইট-বালু ব্যবসা বসানো হয়েছে। আবাসিক এলাকা হলেও রয়েছে ৩টি ড্রাইভিং স্কুল। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে থানা থেকে ২০০ গজ দূরেই দেখা গেছে পতিতাদের উপস্থিতি। এসব অপকর্ম থেকে নেয়া বখরাই ওসির আয়ের উৎস বলে সূত্রের খবর।
এসব বিষয়ে জানতে থানায় গেলে ওসি নূরে আলম সিদ্দিকীকে পাওয়া যায়নি। পরে তার সরকারি নম্বরে ফোন দিলে, থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) পরিতোষ চন্দ্র বলেন, ওসি স্যার ৪ দিনের ছুটিতে আছে। পরে তার সঙ্গে দেখা করে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার সঙ্গেই কথা বলুন। এসব বিষয়ে কথা বলতে আমি আগ্রহী নই। এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, কিছু অনিয়ম ঘটে এটা স্বাভাবিক। তবে এর সঙ্গে ওসি স্যার জড়িত কিনা সেটা আমার জানা নেই। পরে ওসির ব্যক্তিগত নম্বর চাইলে তিনি সেটি দিতে রাজি হননি। ওসি ৪ দিনের ছুটিতে থাকায় পরে দফায় দফায় চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, থানাটির নিজস্ব ৪তলা ভবন থাকায় অন্য থানাগুলোর মতো তেমন সমস্যা নেই। রয়েছে পর্যাপ্ত জনবল ও গাড়ি। আবাসিক ব্যবস্থাও ভালো। তবে, পুলিশ অফিসারদের জন্য মোটরসাইকেল হলে ভালো হতো বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। থানা সূত্র জানায়, এ থানায় প্রতি মাসে গড়ে ২০-২৫টি মামলা হয়। যার বেশির ভাগই মাদক সংশ্লিষ্ট।