শীতের অসুখ ও সচেতনতা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০১৭, ১১:৫০ এএম
ইতোমধ্যে শীত চলে এসেছে। শহরে শীত একটু কম লাগলেও গ্রাম এলাকায় পুরোদমে পড়ছে শীত। ঘুম থেকে উঠলেই দেখা যায় কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতি, আর সবুজ ঘাসে জমেআছে বিন্দু বিন্দু শিশির।
শীতের শুরুর এই সময়টা উপভোগ্য হলেও দেখা দিতে পারে বাড়তি কিছুস্বাস্থ্য সমস্যা। তাই এ সময়ে প্রয়োজন হয় কিছুটা বাড়তি সতর্কতা। শুষ্কআবহাওয়ার সাথে কম তাপমাত্রার সংযোজন আর ধূলোবালির তীব্র উপদ্রব, সবমিলিয়েই সৃষ্টি করে কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা।
ঋতুর এ পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছু রোগ দেখা দেয়, যা প্রতিরোধ সম্ভব যদি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমরা সচেতনথাকি। নিয়মের একটু অনিয়ম হলেই শরীর নামের যন্ত্রটি বেঁকে বসে। সে আরস্বাভাবিক থাকতে চায় না। ফলে আমাদের বিভিন্ন রোগের সম্মুখীন হতে হয়। আবার পুরনো কোনো অসুখও নতুন করে দেখা দিতে পারে। যা জীবনের ঝুঁকি হয়েওদাঁড়ায়।
শীতের রোগ : সর্দিকাশি, ভাইরাস জ্বর, টনসিলের প্রদাহ, শ্বাসতন্ত্রের অ্যাজমা ছাড়া হাত-পা ফেটে যাওয়া, মুখে-জিহ্বায় ঘা, বিভিন্ন চর্মরোগেরমধ্যে খোসপাঁচড়া ইত্যাদি বেশি দেখা দেয়। বয়স্কদের হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, পুরনো কাশি ইত্যাদি জটিলতার সৃষ্টি করে, শিশুদের সর্দিকাশি, ভাইরাস জ্বর, নিউমোনিয়া, টনসিলে প্রদাহ ইত্যাদি বেশি হয়ে তাকে। শীতের এই ঠাণ্ডার প্রকটতার প্রধান কারণ বাইরের ঠাণ্ডা নয় বরং ঘরের ভেতরের জনবহুলতা এবং সংক্রমণের সম্ভাবনা। শীতের অসুখগুলো রাস্তাঘাটের ধুলাবালি, দূষিত বাতাস, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে জীবনযাপনের জন্য দায়ী।
সর্দিকাশি ও ভাইরাস জ্বর : রাইনো ভাইরাস এর জন্য দায়ী। জ্বর, মাথাব্যথা, মাতা ভারী বোধ হওয়া সাথে প্রচণ্ড হাঁচি, নাক দিয়ে অনবরত পানিঝরা, খুশখুশি কাশি হয়ে থাকে। জ্বর, মাথাব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেটবা সিরাপ বয়সানুসারে দিনে তিন বার খাওয়ার পর দেওয়া হয়। বর্তমানেমেফেনামিক অ্যাসিড যেমন পনটিন ফামিক ইত্যাদি বেশি ব্যবহার হয়ে তাকে। বেশিতাপমাত্রায় মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে, শরীর স্পঞ্জ করতে হবে। হাঁচি-কাশির জন্যহিসটামিন, সিটিরিজিন, ওরাটিডিন, লরাটিডিন, কিটোটিফেন গ্রুপের ওষুধ দেওয়াহয় একটি করে দিন দুই বার।
শিশুদের জন্য সিরাপ বয়সানুসারে দিনে দুই বার দেওয়া হয়ে থাকে। সাথে আদা চা, তুলসী পাতার রস, লেবু, মধু খুব ভালো কাজ করে।
টনসিলে প্রদাহ, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ : পুরোনো সমস্যা নতুন করে অথবানতুনভাবে দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথারজন্য ব্যথানাশক ওষুধ, অ্যালার্জির কারণ হলে অ্যান্টিহিস্টামিন গ্রুপের ওষুধখেতে হবে। সেই সাথে হালকা গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গরগরা করতে হবে। কখনোকাপড় জড়িয়ে গলা গরম রাখা হয়।
নিউমোনিয়া : ০-৫ বছরের শিশুদের হয়ে থাকে। শ্বাস নিতে কষ্ট, শব্দহওয়া, বুকের ভেতরের দিকে দেবে যাওয়া, কাশির সাথে হালকা জ্বর হতে পারে।চিকিৎসকের পরামর্শে বয়স এবং ওজন অনুসারে অ্যান্টিবায়োটিক, শ্বাসকষ্টলাঘবের জন্য ব্রংকোইলেটর (সালবিউটামল, থিওফাইলিন) এক চামচ করে দিনে তিনবার, অ্যালার্জির জন্য এক চামচ দিনে দুই বার এবং জ্বর ১০০ ডিগ্রির বেশি হলেপ্যারাসিটামল সিরাপ দিনে তিন বার দিতে হবে।
রোগীর অবস্থা বিপজ্জনক হলে (খাওয়া বন্ধ করা, নিস্তেজ হওয়া) অতি সত্বরহাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। শ্বাসকষ্ট বেশি হলে গ্যাস দিতে হবে।
ব্রংকাইটিস : ফুসফুসে প্রদাহের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শেঅ্যান্টিবায়োটিক। কাশির জন্য কফ এক্সপোরেন্ট, সালবিউটামল, অ্যামাইনোফাইসিনদেওয়া হয়।
জিহ্বায়-মুখের কোনায় ঘা : খাদ্যে ভিটামিন বি২, আয়রনের অভাব হলেঠোঁটের কোনায় ঘা হয়ে থাকে। প্রচুর শাকসবজি, ফল খাওয়া উচিত। এর জন্যট্যাবলেট, রাইবোফোবিন, মালটিভিটামিন ট্যাবলেট, ড্রপ ব্যবহার করা হয়।
হাত-পা ফেটে যাওয়া : অতিরিক্ত ধুলাবালি থেকে দূরে থাকতে হবে। পিওর ভ্যাজলিন, গ্লিসারিন ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকর।
হাঁপানি : বয়স্কদের মধ্যে যারা হাঁপানিতে ভুগছেন, বিশেষ করে ঠাণ্ডাঅ্যালার্জি যাদের আছে শীতে এর প্রকোপ বেশি বাড়ে। গুরুতর সমস্যায় ইনহেলার, অক্সিজেন ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া সালবিউটামল, ভেনটোলিন, অ্যাসাইনোফাইথিন ট্যাবলেট সব সময় খেতে হয়। শ্বাসকষ্টের সাথে কাশি থাকলেঅ্যান্টিহিস্টামিন, কিটোটিফেন জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। দীর্ঘ সময়ের রোগীহরে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। রোগীর মাথার দিক উঁচুতে রেখে আলো বাতাসচলাচল করে এমন ঘরে রাখতে হবে। ঠাণ্ডা, ধুলাবালি, অ্যালার্জি থেকে দূরেরাখতে হবে।
খোসপাঁচড়া : শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, বস্তি এলাকা, ঘনবসতি, নিম্নস্তরেরঅপরিচ্ছন্ন পরিবেশে এ রোগ হয়ে তাকে। সাবান দিয়ে ঘষে শরীরের সব ফুসকুড়িউঠিয়ে ফেলতে হবে। শরীর শুকিয়ে ২০% বেনজাইন বেনজয়েট ইমালসন বা ০.৫%পারমেথ্রিন (লরিক্স, লট্রিক্স, সানবেক্স) গলার নিচ থেকে সব শরীরে লাগাতেহবে। বেনজাইন বেনজয়েট পরপর তিন দিন, পারমেথ্রিন এক দিন লাগিয়ে ভালো করেগোসল করতে হবে। ব্যবহার্য কাপড়, বিছানা সাবান দিয়ে সিদ্ধ করে ধুতে হবে।অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে ইনফেকশন থাকলে। চুলকানির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিনদিনে তিন বার দিতে হবে।
শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে বাড়ে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে, তাতে সাধারণ অসুখ থেকে নিজেদের নিজেরাই রক্ষা করা সম্ভব।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরের এক বিশাল কর্মক্ষেত্র, যার সমষ্টি দশ লাখকোটি শ্বেতরক্ত কণিকা। সুষম খাদ্য, নিয়মিত শরীরচর্চা, মানসিক কষ্ট লাঘব, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কাজেই সব দিক খেয়াল রেখে জীবন যাপনকরলে আমরা ছোটখাটো অনেক অসুখ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।