কোটা সংস্কার আন্দোলন
দেশ বদলালেও বদলায়নি যাদের চরিত্র

সাইফুল ইসলাম শান্ত
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:২৮ পিএম

লিখেছেন সাইফুল ইসলাম শান্ত। গ্রাফিক্স: ভোরের কাগজ টিম
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার পক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) সমাবেশ করার খেসারত দিচ্ছেন সেখানকার প্রবাসীরা। বাংলাদেশে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫৭ বাংলাদেশিকে দীর্ঘ মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। সেই সাথে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা আবেদন বাতিল হচ্ছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। যাদের ভিসা আগেই ইস্যু হয়েছে, তারাও আমিরাতে প্রবেশে নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সদ্য বিদায়ী ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ইউএই থেকে। দেশটি থেকে গত অর্থবছরে ৪৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এই বিশাল প্রবাসী আয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে মজবুত করছে। তবে কোটা আন্দোলনকে হাতিয়ার বানিয়ে এই শ্রমবাজারকে ধ্বংসের পায়তারা করছে দেশ বিরোধী একটি চক্র। দেশ বদলালেও বদলায়নি যাদের চরিত্র।
আমিরাতের সরকারি বার্তা সংস্থা ডব্লিউএএমের তথ্যমতে, বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে কিছু বাংলাদেশি নাগরিক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। এতে আমিরাতের আইন অনুযায়ী বিভিন্ন মেয়াদে ৫৭ বাংলাদেশিকে সাজা দিয়েছে দেশটির আদালত। এদের মধ্যে তিন জনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর এবং একজনকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। কারাদণ্ড শেষে সবাইকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আদেশও দিয়েছে আবুধাবির আদালত।
আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা যখন কোনো দেশে যাবো সেই দেশের আইন অবশ্যই আমাদের মেনে চলতে হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অননুমোদিত বিক্ষোভ নিষিদ্ধ। দেশটির দণ্ডবিধিতে বিদেশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য বা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বিপন্ন করাকেও অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের তথ্যমতে, দুবাইতে বিক্ষোভের ঘটনায় তিন ক্যাটাগরিতে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ অবস্থায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিসা বন্ধ না হলেও, আবেদনকৃত ভিসা প্রত্যাখ্যান হওয়ার হার প্রায় ৯৫ শতাংশ। যাদের ভিসা আগে ইস্যু হয়েছে, তারাও আমিরাতে প্রবেশে নানা ধরনের বিড়ম্বনায় মুখে পড়ছেন বলে জানা গেছে।
কিছু ‘অতি উৎসাহী’ প্রবাসী দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে নিজেরা যেমন শাস্তির মুখে পড়েছেন, সেই সাথে সেখানে থাকা হাজার হাজার বাংলাদেশীদের বিপদে ফেলেছেন। এখন এর দায় সরকারও নিবে না বলে জানিয়েছে। আমার মতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্টকারীদের দায় নেয়াও উচিৎ হবে না।
বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান তাদের পক্ষে নয় বলে স্পষ্ট করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেছেন, সে দেশের আইন অনুযায়ী বিচার হয়েছে। সেই রাষ্ট্র তাদের নিয়মে চলবে। সেখানে আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। তবে আমি বলব, সেই দেশে বসবাস করে সে দেশের আইন ভঙ্গ করেছে তাদের শাস্তি হয়েছে, তাদের পক্ষে আমরা না। তারা আইন অমান্য করে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করলে দেশের ক্ষতি হবে। এটা কারও কাম্য হতে পারে না। যারা দেশের ক্ষতি করে তারা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু।
পরিশেষে একটা কথা আমাদের মাথায় রাখতে হবে, সবার আগে দেশ। নিজ দেশের সুনাম রক্ষা করা আমাদের সবারই দায়িত্ব। কয়েকজনের ভুলের মাশুল যেন পুরো দেশকে দিতে না হয় এটাই কাম্য।
লেখক: সাইফুল ইসলাম শান্ত, সাংবাদিক ও কলামিস্ট