×

মতামত

তারুণ্যের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ই-সিগারেট

Icon

জাহিদ হোসাইন খান

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:৪২ পিএম

তারুণ্যের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ই-সিগারেট

জাহিদ হোসাইন খান, গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

   

এবছরের ডিসেম্বরের ১ তারিখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট (মাদক পরীক্ষা) কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ডোপ টেস্ট জানা যাচ্ছে কে মাদকে আসক্ত বা কে নয়, কিন্তু মাদক থামানোর কোন উপায় আছে কি? প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, মাদকসেবীদের অর্ধেকের বেশি কিশোর–তরুণ। (জুন, ২০২৩, প্রথম আলো)

তরুণদের মাদকে আসক্তির দিকে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ই-সিগারেট। সাধারণভাবে ই-সিগারেট নিকোটিনের সঙ্গে বিভিন্ন ফলের ফ্লেভার মিশিয়ে তৈরি করা হয়, তরুণদের মধ্যে এক নতুন আসক্তির ঝোঁক তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ক্ষতিকর প্রভাব সাধারণ সিগারেটের চেয়েও মারাত্মক। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অভিজাত এলাকার দোকান এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে ই-সিগারেটের সহজলভ্যতা তরুণদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের এক গবেষণা জানায়, ই-সিগারেটের দ্বৈত ব্যবহার হৃদরোগের ঝুঁকি ৫০০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।

ই-সিগারেট ব্যাটারিচালিত একটি ডিভাইস, যা নিকোটিন ও বিভিন্ন রাসায়নিক মিশ্রিত তরল তাপ দিয়ে বাষ্পে রূপান্তরিত করে। এতে প্রোপেলিন গ্লাইসল, গ্লিসারিন এবং সুগন্ধযুক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এসব উপাদান শ্বাসতন্ত্র, যকৃত ও কিডনির দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন ফ্লেভারযুক্ত ই-সিগারেট তরুণ-তরুণীদের বেশি আকৃষ্ট করছে। শখের বসে ই-সিগারেট ব্যবহার শুরু করলেও পরবর্তীতে এটি ধূমপানের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশে ই-সিগারেটের বিক্রি নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট কোনও আইন নেই। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ই-সিগারেট বিক্রির একটি বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। বিশ্বের ১০৯টি দেশে ই-সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ বা কঠোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

ই-সিগারেট, সিগারেটসহ বিভিন্ন মাদক তরুণদের যক্ষ্মাসহ বিভিন্ন ফুসফুস-ঘটিত রোগের সংক্রমণ করছে। প্রতিবেশী ভারত ও নেপালসহ অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে। তবে বাংলাদেশে এমন আইন না থাকায় তামাক কোম্পানিগুলো এই সুযোগ নিচ্ছে। ই-সিগারেটের অন্যতম প্রধান উপাদান নিকোটিন, যা একটি উচ্চমাত্রার আসক্তি সৃষ্টিকারী পদার্থ। নিকোটিন সিগারেটের মতো ই-সিগারেটেও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে এবং মস্তিষ্কের সেরোটোনিন ও ডোপামিন নিঃসরণে প্রভাব ফেলে। এটি বিশেষত তরুণদের জন্য বিপজ্জনক, কারণ তাদের মস্তিষ্ক তখনো পূর্ণাঙ্গভাবে বিকশিত হয়নি। 

ফলে নিকোটিনের কারণে মস্তিষ্কের বিকাশ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং স্মৃতি, মনোযোগ ও শেখার সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেট ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের নিকোটিনের প্রতি আসক্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়ে। যে জিনিস ঝুঁকি বাড়ায়, তা বন্ধে সরকারের পদক্ষেপ নেই কেন?

ই-সিগারেটের তরল দ্রবণ সাধারণত প্রোপেলিন গ্লাইকল, গ্লিসারিন, এবং বিভিন্ন স্বাদযুক্ত রাসায়নিক বা ফ্লেভার দিয়ে তৈরি করা হয়। এগুলো গরম হয়ে বাষ্পে রূপান্তরিত হয়, যা ব্যবহারকারীরা গ্রহণ করেন। তবে এই দ্রবণগুলোর বেশ কিছু উপাদান শ্বাসযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। প্রোপেলিন গ্লাইকল ও গ্লিসারিন শ্বাসতন্ত্রের কোষে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্ষতি এবং দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। 

কিছু ফ্লেভারযুক্ত ই-সিগারেটে ডায়াসেটাইল নামক একটি রাসায়নিক পাওয়া গেছে, যা ফুসফুসে "পপকর্ন লাং" নামে পরিচিত একধরনের বিরল ও ক্ষতিকারক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ই-সিগারেটের বাষ্পে ফর্মালডিহাইড এবং অ্যাক্রোলিনের মতো ক্যানসার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে। এই পদার্থগুলো ই-সিগারেটের তরল গরম করার সময় উৎপন্ন হয় এবং ফুসফুসের টিস্যুতে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা নিয়মিত ই-সিগারেট ব্যবহার করেন, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। বিশেষ করে, যারা একই সঙ্গে সাধারণ সিগারেটও সেবন করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেশি।

আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ই-সিগারেট ব্যবহারের ফলে শ্বাসনালীতে প্রদাহ এবং কণ্ঠনালির সংক্রমণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে এটি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে, শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বাড়ায় এবং গুরুতর শ্বাসযন্ত্র-জনিত রোগের কারণ হতে পারে। এই তথ্যগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, ই-সিগারেট কেবল সাধারণ সিগারেটের একটি বিকল্প নয়, বরং তা শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নতুন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

ই-সিগারেট ‘কম ক্ষতিকর’ পণ্য নয় বরং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ই-সিগারেটের ব্যবহারে কিশোর-তরুণদের ধূমপানের প্রবণতা দুই থেকে ছয় গুণ বাড়ছে। ২০০৫ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ই-সিগারেটের বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। আইন হালনাগাদ করে ই-সিগারেট আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। ই-সিগারেটের সহজলভ্যতা ও এর বিপজ্জনক প্রভাব নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তরুণ প্রজন্ম আরও বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ই-সিগারেটের ব্যবহার নিয়ে তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে প্রচার চালানো এবং আইনি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এর ব্যবহার সীমিত করা প্রয়োজন।

লেখক: জাহিদ হোসাইন খান, গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইমেইল: [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App