বাবাকে নিয়ে লেখা কঠিন কাজ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০১৯, ০৭:১৩ পিএম

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সৈনিক বিনোদ বিহারী চৌধুরীর সাথে কামাল লোহানী

কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্লোগান, ১৯৬৪
স্কুল-কলেজ জীবনে আমি জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলতাম। এইচএসসি পাস করে বিদেশে গেছি উচ্চতর পড়াশুনার জন্য। সত্তর দশকের শেষে- আশির দশকের শুরুতে একজন মেয়ের পক্ষে এগুলো করা সম্ভব হতো না, যদি না বাবা-মা সেগুলো সমর্থন করতেন, বিশেষ করে বাবা।
আমার বাবা, কামাল লোহানী, ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করেছেন, পেশাগত জীবনে সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন আর নানা ধরনের সাংগঠনিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। এখনো তিনি বিভিন্ন সংগঠন পরিচালনা করছেন, সমাজ-দেশের প্রয়োজনে পথে নামছেন।
[caption id="attachment_147064" align="alignnone" width="700"]
স্কুল-কলেজ জীবনে আমি জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলতাম। এইচএসসি পাস করে বিদেশে গেছি উচ্চতর পড়াশুনার জন্য। সত্তর দশকের শেষে- আশির দশকের শুরুতে একজন মেয়ের পক্ষে এগুলো করা সম্ভব হতো না, যদি না বাবা-মা সেগুলো সমর্থন করতেন, বিশেষ করে বাবা।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বাবারা পরিবারে কর্তৃত্ব করবেন- এটাই স্বাভাবিক। আমার বাবা সেটা তো করেনইনি, উপরন্তু বিভিন্ন সময়ে আমাকে খেলার জায়গায় নিয়ে যাওয়া, ঢাকার বাইরে আমার সাথে যাওয়া এগুলো করেছেন। বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন।
পরিবারে সময় কম দেয়া বাবাদের মজ্জাগত একটা ব্যাপার। অথচ আমার বাবা আমাদের মা আর সন্তানদের দেখাশুনার কাজ করেছেন পুরোদস্তুর। আমি আমার ছেলেকে ছোট রেখে পড়া শেষ করতে বাইরে চলে গেছি, মায়ের পাশাপাশি বাবাও আমার ছেলে পালনের কাজ করেছেন। মেয়েকে বাবার কাছে রেখে চাকরি করেছি। মা তখন অসুস্থ, বাবাই একা হাতে মেয়ের সব কাজ করেছেন।
[caption id="attachment_147065" align="alignnone" width="700"]
সাথে মায়ের সেবা। মা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে নিজের কাজ কমিয়ে দিয়ে পুরোপুরি মায়ের সেবা করেছেন বাবা।
আমাদের এই বাবা সারাজীবন নিষ্ঠা আর সততার সাথে স্বার্থহীনভাবে পেশাগত কাজ করেছেন, আন্দোলনের প্রয়োজনে সোচ্চার থেকেছেন, অন্যায়ের প্রতিবাদে পথে নেমেছেন, দেশের জন্য কাজ করেছেন। আজো এই বয়সে উনি স্বাস্থ্যগত বাধা সত্ত্বেও নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সাথে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।
কামাল লোহানীর ছিয়াশিতম (২৬ জুন, ২০১৯) জন্মদিনে তাই আমার চাওয়া- আমি যেন তাঁর এই আদর্শ আর নিষ্ঠা-সততাকে আমার মৃত্যু পর্যন্ত ধারণ করতে পারি আর পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারি।