×

সাময়িকী

আদর্শের জীবন্ত প্রতীক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২০, ০৮:২৪ পিএম

আদর্শের জীবন্ত প্রতীক
   

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বিশাল চিত্তের, মহামানুষ, রাজনীতির মহাকবি, আদর্শের প্রতীক, বাবা-মার সুসন্তান, সমাজ রাষ্ট্রের দরদী বন্ধু, অসাম্প্রদায়িক চেতনার পাঞ্জেরি। তাঁকে নিয়ে নানাজনের নানা বিশ্লেষণ। অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান গ্রন্থের ভ‚মিকা লেখতে গিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ‘এই মহান নেতা নিজের হাতে স্মৃতি কথা লেখে গেছেন, যা তাঁর মহাপ্রয়াণের ঊনত্রিশ বছর পর হাতে পেয়েছি। সে লেখা তাঁর ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া, পরিবারের কথা, ছাত্রজীবনের আন্দোলন, সংগ্রামসহ তাঁর জীবনের অনেক অজানা ঘটনা জানার সুযোগ এনে দেবে। তাঁর বিশাল রাজনৈতিক জীবনের এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা এই গ্রন্থে তাঁর লেখনীর ভাষায় আমরা পাই। তিনি যা দেখেছেন, উপলব্ধি করেছেন এবং রাজনৈতিকভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন সবই সরল সহজ ভাষায় প্রকাশ করেছেন। তাঁর এই সংগ্রাম অধ্যবসায় ও আত্মত্যাগের মহিমা থেকে যে সত্য জানা যাবে, তা আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। ইতিহাস বিকৃতির কবলে পড়ে যারা বিভ্রান্ত হয়েছেন, তাদের সত্য ইতিহাস জানার সুযোগ করে দিবে। গবেষক ও ইতিহাসবিদদের কাছে এই গ্রন্থ মূল্যবান তথ্য ও সত্য তুলে ধরবে। আত্মজীবনীর শুরুটা ছিল, “আমার জন্ম হয় ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। আমার ইউনিয়ন হলো ফরিদপুর জেলার দক্ষিণ অঞ্চলের সর্বশেষ ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের পাশেই মধুমতী নদী। মধুমতী খুলনা ও ফরিদপুর জেলাকে ভাগ করে রেখেছে।” তার লেখনীর শুরু অংশের ভাষা জ্ঞান থেকে বুঝতে বাকি থাকে না তিনি কোমল চিত্তের, শিশুসুলভ মনের অধিকারী, প্রকৃতি ও সৌন্দর্যের পূজারী। বাংলা ভাষা বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়, তিনি মধুমতী নদীর লিঙ্গান্তর করতে গিয়ে বানানের ভুলটিও করেনি। এতে করে আমি একজন বাংলা সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে স্পষ্ট বলতে চাই, তিনি একজন ভাষা বিজ্ঞানীও বটে। ‘মধুমতী ধানসিঁড়ি নদীর তীরে/নিজেকে হারিয়ে যেন পাই ফিরে ফিরে।’ আমি মনে করি এই গানটিতে যেন বঙ্গবন্ধুকে খুঁজে পাবার আকুতিই উঠে এসেছে। আত্মজীবনী বইটির ১৬ পৃষ্ঠায় এক জায়গায় উল্লেখ করেছেন, “ইসলামী কলেজে আমি খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছি।” উজ্জ্বল নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের প্রতীক বঙ্গবন্ধু ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্র্থীদের মন জয় করেন, তাঁর আদর্শ, নীতিনৈতিকতা ও বলিষ্ঠ চরিত্রই তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছে, সাধারণের ভালোবাসাকে বুকে ধরেই মাটি মানুষের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে পেরেছিলেন বলেই তিনি রাজনীতির বরপুত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। আত্মজীবনীর ১১ পৃষ্ঠায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্র জীবনের ১৯৩৮ সালের একটি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি স্পষ্টত্ব উল্লেখ করেন, “তখনকার দিনে শতকরা ৮০টি দোকান হিন্দুদের ছিলো। আমি এ খবর শুনে আশ্চর্য হলাম। কারণ আমার কাছে তখন হিন্দু মুসলিম বলে কোন জিনিস ছিলো না। হিন্দু ছেলেদের সাথে আমার খুবই বন্ধুত্ব ছিলো। একসাথে গান-বাজনা, খেলাধুলা, বেড়ান, সবই চলত।” তার এই বর্ণনা প্রমাণ করে, তিনি সর্বকালের সকল যুগের সাম্প্রদায়িকতাকেই ঘৃণা করেছেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় তিনি তাঁর শৈশব কৈশোর পার করেছেন। যে কারণে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির প্রবক্তা হিসেবে বিশ^ সভ্যতায় জায়গা করে নিতে পেরেছেন। তিনি যে গান গাইতে পারতেন এটা অনেকেই জানেন না। তাঁর এই উক্তি থেকেই বুঝতে বাকি থাকে না, তিনি শৈশব, কৈশোরে গ্রাম বাংলার আরো দশজন শিশুর মতোই প্রকৃতিগত শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। তিনি ১৯৩৪ সালে যখন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী, তখন থেকেই ব্রতচারী নৃত্যে অংশগ্রহণ করেন। আমরা জানি, শিশুদের দেশপ্রেমিক করে গড়ে তুলতেই ব্রতচারী নৃত্য করানো হয়। তিনি আত্মজীবনীর ৮ পৃষ্ঠার এক জায়গায় উল্লেখ করেছেন, ‘ছোট সময়ে আমি খুবই দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম, খেলাধুলা করতাম, গান গাইতাম এবং খুব ভালো ব্রতচারী করতে পারতাম।’ বঙ্গবন্ধুর এই উক্তি আমাদের নির্দেশ করে, একটি দেশপ্রেমিক জাতি গঠন করতে হলে, শিশুদের ‘শৈশব’ শিশুদের ফিরিয়ে দেওয়া অনিবার্য। বর্তমানে শিশুরা আজ শিক্ষার নামে যেভাবে নির্যাতিত হচ্ছে; বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তা কীভাবে উপলব্ধি করতেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। পড়ালেখার পাশাপাশি আদর্শিক মানুষ, জনদরদী নেতা হতে হলে, বাবা-মার অনুপ্রেরণা ও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে। অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ১৪ পৃষ্ঠায় তিনি উল্লেখ করেন, “আব্বা আমাকে বাধা দিতেন না, শুধু বলতেন লেখাপড়ার দিকে নজর দিবে।” তার এই উক্তি প্রমাণ করে পড়ালেখার পাশাপাশি রাজনীতি করাটা একটি নৈতিক শিক্ষা। অথচ আজ অপরাজনীতির জালে ফেঁসে সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চা বিলুপ্তির পথে। বঙ্গবন্ধু বিনয়ী, ভদ্র, নম্র ছিলেন, এটা যেমন সত্য, তিনি সকল অন্যায় অনাচার নিপীড়ন শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন তীব্রদ্রোহী, এর প্রমাণ মিলে অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ২৯ পৃষ্ঠায়। তিনি উল্লেখ করেন, “তিনি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোটারী করেছেন, ভালো কর্মীদের জায়গা দেয় নাই। কোন হিসাব নিকাশও কোন দিন দাখিল করে নাই। শহীদ সাহেব আমাকে হঠাৎ বলে বসলেন, “ ডযড় ধৎব ুড়ঁ? ণড়ঁ ধৎব হড়নড়ফু,” আমি বললাম, “ ওভ ও ধস হড়নড়ফু, ঃযবহ যিু ুড়ঁ যধাব রহারঃবফ সব? ণড়ঁ যধাব হড় ৎরমযঃ ঃড় রহংঁষঃ সব. ও রিষষ ঢ়ৎড়াব ঃযধঃ ও ধস ংড়সব নড়ফু. ঞযধহশ ুড়ঁৎ ংরৎ, ও রিষষ হবধৎ পড়সব ঃড় ুড়ঁ ধমধরহ,” এই কথা বলে চিৎকার করতে করতে বৈঠক ছেড়ে বের হয়ে এলাম।” তাঁর এই বক্তব্য আরও প্রমাণ করে, নিজেদের মধ্যকার অগণতান্ত্রিক চর্চার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার। আবেগতাড়িত কোনো সিদ্ধান্তই রাজনৈতিক আদর্শে পড়ে না। রাজনীতি মানেই অন্যায় অসুন্দরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে যখন জেলে যান, ঠিক ওই মুহূর্তে জেল সংলগ্ন মুসলিম গার্লস স্কুলের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহযোদ্ধাদের মুক্তির দাবিতে মিছিল করত। গ্রেপ্তার হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় বঙ্গবন্ধু ও সামসুল হক সাহেব কারামুক্ত হোন। অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থের ৯৩ পৃষ্ঠার শেষাংশে তিনি উল্লেখ করেন, ‘যে পাঁচদিন আমরা জেলে ছিলাম, সকাল দশটায় মেয়েরা স্কুলের ছাদে উঠে স্লোগান দিতে শুরু করত। আর চারটায় শেষ করত। ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা একটুও ক্লান্ত হত না।’ ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, বন্দি ভাইদের মুক্তি চাই,’ ‘পুলিশ জুলুম চলবে না।’ এই উক্তি প্রমাণ করে, তাঁর সকল প্রকার গঠনমূলক আন্দোলনে শিশু-কিশোর, ভাই-বোনদের অবদান স্মরণীয়। আজও যা ইতিহাসে স্থান পায়নি। অথচ বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে তা বর্ণিত হওয়ায় শিশু-কিশোররা ইতিহাসে পাতায় শুধু জায়গাই পায়নি, ইতিহাসের পাতাকে আরও একধাপ সমৃদ্ধ করেছে। ভাষা আন্দোলনের এক পর্যায় শোষকরা নানা কৌশল অবলম্বন করে। শুরু হয় ধর্মের অপব্যবহার। তীক্ষ্ম দৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু তা সহজেই উপলব্ধি করেন। যার সাক্ষ্য তিনি আত্মজীবনী গ্রন্থের ৯৯ পৃষ্ঠায় দিয়ে গেছেন। বলেছেন, “পূর্ব পাকিস্তানের ধর্মভীরু মুসলমানদের ইসলামের কথা বলে ধোঁকা দেয়া যাবে বলে ভেবেছিল, কিন্তু পারে নাই। যে কোন জাতি তার মাতৃভাষাকে ভালোবাসে। মাতৃভাষার অপমান কোন জাতি কোন কালেই সহ্য করে নাই। এই সময়ে সরকার দলীয় মুসলিম লীগ নেতারা উর্দ্দুর জন্য জানমাল কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু জনসমর্থন না পেয়ে একটু ঘাবড়িয়ে পড়েছিলেন। তারা শেষ ‘তাবিজ’, নিক্ষেপ করলেন। জিন্নাহকে ভুল বোঝালেন। এরা মনে করলেন জিন্নাহকে দিয়ে উর্দ্দুর পক্ষে বলাতে পারলেই আর কেউ এর বিরুদ্ধাচারণ করতে সাহস পাবে না।” ১৯৪৯ সালের উপনির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে গিয়ে যে অর্থের প্রয়োজন হয় তা ছাত্র ও দলীয় কর্মীরা কীভাবে জোগাড় করেছিলেন। তার বর্ণনা দেন তিনি আত্মজীবনীর ১১৫ পৃষ্ঠায়। শহীদ সাহেব ছিলেন সাগরের মত উদার। যেকোন লোক তাঁর কাছে একবার যেয়ে হাজির হয়েছে সে যত বড় অন্যায়ই করুক না কেন, তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।” ১৯৬৯-এর পাঁচ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন, ‘বাংলাদেশ’। তিনি বলেন, “এক সময় এই দেশের বুক হইতে মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকু চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে। একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া আর কোন কিছুর নামের সাথে বাংলা কথাটি অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই। জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি- আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’।” বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণাই আজ বিশে^র দরবারে বাংলাদেশ নামে সার্বভৌমত্বের রাষ্ট্রীয় পরিচয় বহন করছে। বঙ্গবন্ধু জাতির বিবেক, ন্যায়ের প্রতীক, স্বাধীন বাংলার অগ্নিমশাল অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্রদ্রোহী, সত্যের মাইল ফলক, ইতিহাসের হিমালয়, মানবতার মহাসমুদ্র, তিনিই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, ‘বাংলা মায়ে’র রক্ত খচিত পতাকা। তুমিই জাতির পিতা, তুমিই সর্বকালের মহানায়ক, শান্তির দূত, মুক্তির পথ ও পাথেয়। তোমাকে স্মরি.....।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App