কোভিড মহামারির কাছে কৃতজ্ঞ দম্পতি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:৪৬ এএম

বিবাহবিচ্ছেদের ১০ বছর পর কোভিড মহামারিতে আবারো মা-বাবার বিয়ে দিলেন দুই কন্যা। কোভিড মহামারির সময় ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন এলাকা নিয়ে তৈরি করা হয় নির্দিষ্ট সুরক্ষা বলয়। ঘটনাক্রমে একই সুরক্ষা বলয়ে ঠাঁই পান বিবাহ বিচ্ছিন্ন দুই প্রবীণ জুলি শোর এবং স্কট গেইড।

বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর দুই কন্যার প্রচেষ্টায় আবার তাদের সম্পর্ক নতুন করে গড়ে ওঠে। এবার তাদের ঘটা করে বিয়ে দেয়া হয়। ষাটের দশকে ‘প্যারেন্ট ট্র্যাপ’ নামে হলিউডের একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। এই সিনেমাতেও এমনই গল্প দেখানো হয়েছে। পরে অবশ্য নব্বই দশকেও সিনেমাটি পুনঃ নির্মিত হয়। তবে এবার পর্দার বাইরেই বাস্তবে ঘটল এমন ঘটনা।

২০২০ সালে আমেরিকার ওহায়ো অঙ্গরাজ্যের সিন সিনাটি এলাকা বাস্তবের এই ঘটনাটি ঘটেছে। কোভিড মহামারিতে সারা বিশ্ব তখন আতঙ্কে, তখন ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে নির্দিষ্ট এলাকা লক ডাউন করে তৈরি করা হয়েছিল সুরক্ষা বলয়। ঘটনাক্রমে একই সুরক্ষা বলয়ে ছিলেন বিবাহ বিচ্ছিন্ন দুই প্রবীণ জুলি শোর এবং স্কট গেইড।

জুলি এবং স্কট দুজনই পেরিয়েছেন ৫০ বছরের গণ্ডি। ১৯৯৭ সালে বিয়ে করেছিলেন তারা। রাচেল এবং ক্যারোলিন নামে তাদের দুই কন্যাসন্তানও রয়েছে। ১৭ বছর সংসার করার পর তারা বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। পরে ২০১৪ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় জুলি এবং স্কটের।

গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ২৪ বছর বয়সী রাচেল বলেন, ‘আমাদের পরিবারে অশান্তির কারণে বাবা-মা বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন আমরা সকলেই ভেবেছিলাম এটাই বুঝি তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত।’

২০১৪ সালে বিচ্ছেদের ৬ বছর পর আবারো একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন জুলি এবং স্কট। কোভিড মহামারির সময় একই সুরক্ষা বলয়ের ছিলেন তারা। এ সময় দুজনের বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হয়।

সাক্ষাৎকারে রাচেল বলেন, ‘২০২০ সালের শেষের দিকে আমি লক্ষ করি যে বাবা-মা দুজন একসঙ্গে ভাল রয়েছেন। দুই মেয়ের জন্য ভাল থাকার নাটক করছেন না। তারা সত্যিই একে অপরের সঙ্গে ভাল রয়েছেন।’

জুলি দাবি করেন যে কোভিডের সময় তিনি আবার নতুন করে স্কটের প্রেমে পড়েন। জুলি বলেন, ‘স্কটের সঙ্গে যতটুকু সময় কাটাতাম ততটুকু সময় আমি বেশ হাসিখুশি থাকতাম। ধীরে-ধীরে আমি বুঝতে পারলাম স্কট ছাড়া দুনিয়ায় এমন কেউ নেই যে আমায় এতটা সুখী রাখতে পারে।’

জুলি জানান, কোভিডের সময় স্কট তার দুই প্রিয় জনকে হারিয়েছেন। সেই সময় স্কটের সঙ্গে সার্বক্ষণিক ছিলেন তিনি। স্কটের সঙ্গে সময় কাটানোর পর জুলি বুঝতে পারেন যে সাবেক স্বামীর প্রতি তার অনুভূতি ফিরেছে।

জুলি বলেন, ‘অতীতের সব কিছু যেন নিমেষের মধ্যে কোথাও হারিয়ে গেল। বুঝতে পারলাম সবার আগে পরিবার। আমাদের ৪ জনের আবারো একসঙ্গে থাকা প্রয়োজন তাও বুঝতে পারলাম।’

২০২০ সালে আমেরিকার ওহায়ো অঙ্গরাজ্যের সিনসিনাটি এলাকা বাস্তবের এই ঘটনাটি ঘটেছে। কোভিড মহামারিতে সারা বিশ্ব তখন আতঙ্কে, তখন ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে নির্দিষ্ট এলাকা লকডাউন করে তৈরি করা হয়েছিল সুরক্ষা বলয়। ঘটনাক্রমে একই সুরক্ষা বলয়েস ছিলেন বিবাহবিচ্ছিন্ন দুই প্রবীণ জুলি শোর এবং স্কট গেইড।

২০২১ সালের শেষের দিকে জুলি এবং স্কট আবার এক ছাদের তলায় থাকতে শুরু করেন। এই প্রসঙ্গে স্কট বলেন, ‘আমি এবং জুলি একসঙ্গে থাকা শুরু করলে আমাদের দুই মেয়ে একেবারে নাছোড়বান্দা হয়ে গিয়েছিল। আমি যেন জুলিকে প্রেম নিবেদন করি, সে কথা বার বার আমাকে বলত রাচেল এবং ক্যারোলিন।’

এক বছর একসঙ্গে থাকার পর জুলিকে আবারো বিয়ের প্রস্তাব দেন স্কট। ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন তারা। ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়দের আমন্ত্রণ জানিয়ে খুব ছিমছাম ভাবেই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন।

জুলি এবং স্কটের বিয়ের ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে রাচেল লেখেন, ‘যুদ্ধ অবশেষে শেষ হল। আমাদের বাবা-মায়ের আবার বিয়ে হল। আমরা সবাই এখন একসাথে।’

জুলি এবং স্কটের বিয়ের মুহূর্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখার পর ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন সবাই। বিবাহবিচ্ছেদের পর আবার বিয়ে করেছেন দেখে অনেকেই জুলি এবং স্কটকে শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়েছেন ।

রাচেল বলেন, ‘আমায় যদি কেউ ১০ বছর আগেও এসে এই কথা বলতেন যে বাবা-মা আবার বিয়ে করছেন তা হলে আমি হেসে উড়িয়ে দিতাম। এখন ওদের একসঙ্গে দেখে আমার খুব ভাল লাগছে। এই কয়েক বছরে তারা আরো পরিণত হয়েছেন, একে অন্যকে ক্ষমা করতে শিখেছেন, সহনশীলতা বোধ বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের।’

স্কটের সঙ্গে আংটি বদলের পর জুলি যে ধরনের আংটি পরতেন সেই একই ধরনের আংটি পরছেন রাচেল এবং ক্যারোলিন। এ প্রসঙ্গে জুলি বলেন, ‘আমরা কত ঝড় কাটিয়ে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছি, আংটিটি তারই চিহ্নই বহন করে। শুধু দুটো মানুষের দ্বিতীয় বার বিয়েই হয়নি, আমরা পুরো পরিবার আবার এক হয়েছি।’