মুজিববর্ষে একটি সাধারণ চাওয়া

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২০, ০৪:৪৪ পিএম

বাংলাপিডিয়া ও উইকিপিডিয়া

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময়কে ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করে বিশাল পরিসরে তা উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে মুজিববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোও। বছরব্যাপী মুজিববর্ষ উদযাপিত হবে বিশ্বের ১৯৫টি দেশে।
মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে পূর্ণ ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র, গান, নাটকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান নির্মাণ শুরু হয়ে গেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনের কাউন্টডাউন (ক্ষণগণনা) শুরু হয়েছে গত ১০ জানুয়ারি থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে লোগো উন্মোচন করে দেশব্যাপী ক্ষণগণনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা এবং বিভিন্ন জনসমাগম স্থলে একযোগে গণনা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের মাধ্যমে সরকার জনগণ, বিশেষত নতুন প্রজন্মের সামনে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মকে তুলে ধরার লক্ষ্য নেয়া হয়েছে।
কিন্তু বিশাল এই কর্মযজ্ঞে একটি সূক্ষ্ম অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোধহয় অনেকের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। আর সেটি হচ্ছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার বন্ধু, অবিসংবাদিত এই নেতার বাংলা জন্ম সাল ও তারিখ। যতদূর জানি, বাংলা ১৩২৬ বঙ্গাব্দের ৩ চৈত্র বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। আর ঢাকার ধানমন্ডিতে সপরিবারে শহীদ হন ১৩৮২ বঙ্গাব্দের ২৯ শ্রাবণ।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম তারিখ ইংরেজি ১৮৬১ সালের ৭ মের সঙ্গে ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ ও মৃত্যু ১৯৪১ সালের ৭ আগস্টের সঙ্গে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ তারিখ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম তারিখ ১৮৯৯ সালের ২৫ মের সঙ্গে ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যেষ্ঠ ও মৃত্যু ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্টের সঙ্গে ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র তারিখ এবং ‘রূপসী বাংলার কবি’ জীবনানন্দ দাশের জন্ম ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারির সঙ্গে বাংলা ১৩০৫ বঙ্গাব্দের ৬ ফাল্গুন ও মৃত্যু ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবরের সঙ্গে বাংলা ১৩৬১ বঙ্গাব্দের ৫ কার্তিক তারিখটি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও বেতারে বেশ ঘটা করে প্রচার করা হয়।
বার বার প্রচার হওয়ায় অনেক তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরিদের ওই বিশেষ ইংরেজী ও বাংলা তারিখগুলো এখন ঢের মনে থাকে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরির বিভিন্ন পর্যায়ের পরীক্ষাতেও এই সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। সেই বিবেচনায়, বঙ্গবন্ধুর জন্ম-মৃত্যুর বাংলা সাল ও তারিখ আমরা এবং আমাদের পরের প্রজন্মের ক’জনইবা জানি! পাঠ্য-পুস্তকে ও টিভি-বেতারে অনেকটা উপেক্ষিতই থেকে গেছে তার বাংলা জন্ম ও মৃত্যুর তারিখটি।
মুজিববর্ষকে সামনে রেখে কৌতুহলবশত বঙ্গবন্ধুর বাংলা জন্ম তারিখটি জানতে উইকিপিডিয়া ও বাংলা পিডিয়ার দ্বারস্থ হই কিছুদিন আগে। কিন্তু সেখানে শুধুমাত্র ইংরেজি জন্ম তারিখটি দেখে বিস্মিত হই। বিশ্বখ্যাত ‘নিউজউইক’ পত্রিকা সেই কবেই বঙ্গবন্ধুকে ‘দ্য পয়েট অব পলিটিক্স’ বা ‘রাজনীতির কবি’ উল্লেখ করেছে! বর্তমান সময়ে বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ তার ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতায়ও বঙ্গবন্ধুকে কবি সম্বোধন করে লিখেছেন, ‘শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে/ রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে/ অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন...।’
[caption id="attachment_206671" align="aligncenter" width="700"]সুতরাং, বিশ্বকবি, জাতীয় কবি কিংবা রূপসী বাংলার কবিদের পরিচয়ের ক্ষেত্রে যদি ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা জন্ম ও মৃত্যু তারিখটি সন্নিবেশিত থাকে তবে, রাজনীতির কবি জাতির জনকের জন্ম ও মৃত্যুর বাংলা তারিখটি আমরা কেন জানবো না?

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ সব জাতীয় দিবসে ইংরেজি তারিখের পাশাপাশি বাংলা তারিখ ব্যবহারের পদক্ষেপ নিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না- তা জানতে চেয়ে কিছুদিন আগে রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত।
তাই, মুজিববর্ষকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে নির্মিত অনুষ্ঠানগুলোতে যদি ইংরেজি তারিখের পাশাপাশি বাংলা জন্ম তারিখটিও উল্লেখ থাকতো তাহলে ভালো হতো। প্রজন্মের সন্তানরা বঙ্গন্ধুর বহুল প্রচারিত ইংরেজি জন্ম তারিখের পাশাপাশি বাংলা তারিখটি সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারতো। মুজিববর্ষকে সামনে রেখে এমন চাওয়া নিশ্চয়ই খুব বেশি চাওয়া হবে না!
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী