পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ডোনাল্ড লু'র সঙ্গে আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ০৯:৫০ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নেয়াসহ সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত করতে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সঙ্গে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার (১৫ মে) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল এশিয়ান এফেয়ার্স ব্যুরোর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা উইংয়ের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ ও সফররত দলের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তার চিঠিতে দুই দেশের সম্পর্ককে উচ্চতর ও ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। সেই অভিপ্রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক খুবই চমৎকার। আমাদের বহুমাত্রিক সহযোগিতার ক্ষেত্র রয়েছে। একইসাথে গত ৫৩ বছরের আমাদের অভিযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সফরে আসা মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।
'বাণিজ্য-বিনিয়োগ'
বাণিজ্য-বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী হাছান বলেন, একক দেশ হিসেবে আমাদের রপ্তানির সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশও যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে নির্মীয়মাণ ৪০টি আইটি ভিলেজে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ডোনাল্ড লু-কে অনুরোধ জানিয়েছি, কিছু বিনিয়োগ তারা ইতোমধ্যেই করেছে।
তিনি বলেন, ডোনাল্ড লু বলেছেন আমাদের ব্যবসাকে আরো সম্প্রসারিত করার জন্য আগে যে 'জিএসপি' সুবিধা আমরা আগে পেতাম এখন তা পাই না, সেটি তারা ফিরিয়ে দিতে চায়। সেজন্য আমাদের লেবার পলিসিটা একটু রিভিউ করতে হবে, যেটি আমরা রিভিউ করছি। সেটি নিয়ে গতকাল আইনমন্ত্রীর সঙ্গে তার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
'অর্থনৈতিক সহযোগিতা'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ডোনাল্ড লু জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভ শক্তিশালী করার জন্য তাদের ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) থেকে বাংলাদেশকে অর্থায়ন করতে চায়। একই সঙ্গে আমাদের ট্যাক্স সিস্টেমকে আধুনিক করার জন্য আমাদের সহায়তা করতে চায়। ট্যাক্স ফাঁকি রোধে ট্যাক্স কালেকশনের ক্ষেত্রে তারা আমাদের সহায়তা করতে চায়।
এলডিসি বা নিম্ন থেকে মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাতেও তাদের সহায়তা চেয়েছি। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বিস্তৃত করার জন্য তারা বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
'রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গ'
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আমি আলোচনা করেছি। তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি মার্কিন বিচার বিভাগের আওতাভুক্ত। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য বিভাগগুলোর হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। কিন্তু তাদের বিচার বিভাগের সাথে বাংলাদেশ দূতাবাসের যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বিচার বিভাগের সম্মতি আনয়নের কাজ এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
'রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও ত্রাণ'
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের পরই সবচেয়ে বেশি ত্রাণ সহায়তা দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছি উল্লেখ করেন মন্ত্রী। লু জানিয়েছেন, তিনি এ সহায়তা বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্রকে আরো বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
'ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গাজায় শান্তি স্থাপন করার বিষয়টি আমরা আলোচনা করেছি। বিষয়টি নিয়ে ডেনাল্ড লু বলেছেন- 'যুক্তরাষ্ট্র সরকার, সেক্রেটারি অব স্টেট মিস্টার ব্লিঙ্কেন অক্লান্তভাবে কাজ করছে যাতে গাজায় যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হয়'। এবং তিনি আমাকে যেটুকু বলেছেন- 'আমরা আশাবাদী'। আমরা বলেছি গাজায় যে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, নিরীহ শিশুসহ নারীদের হত্যা ও এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তার মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু। এটি আসলে মেনে নেয়া যায় না। আমি বলেছি টেলিভিশনে যখন এগুলো দেখি তখন টেলিভিশন দেখা কন্টিনিউ করতে পারি না। সেখানে শান্তি স্থাপন করা দরকার। তিনিও একমত যে সেখানে শান্তি স্থাপন করা দরকার।
'শিক্ষা ও অন্যান্য'
ড. হাছান বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যাতে আরো ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যায়, ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সহায়তা করতে চায়। আমি প্রস্তাব দিয়েছি যে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে যেন তাদের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম চালু করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী আরো জানান, তারা নারী ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু ইস্যুতেও সহায়তাদানের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। ভিসানীতি নিয়ে প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, 'ইউএস ভিসা পলিসি ইজ ডরম্যান্ট নাউ'। সুতরাং এটি নিয়ে আলোচনা হয়নি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে জাপানের পার্লামেন্টারি ভাইস মিনিস্টারের বৈঠক
এর আগে মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ সফররত জাপানের পার্লামেন্টারি ভাইস মিনিস্টার ফর ফরেন এফেয়ার্স হোসাকা ইয়াসুশি।
অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী জাপানের সঙ্গে বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীতে, আইটি পার্কগুলোতে এবং বিশেষ করে দেশের শিপ-ব্রেকিং শিল্পে বিনিয়োগের জন্য জাপানের ভাইস মিনিস্টারকে আহবান জানিয়েছি।
'সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ডোনাল্ড লু'
হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সাংবাদিকদের কাছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী। কীভাবে দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার হয়, আমরা সে বিষয়গুলোতে আগ্রহী। এরই অংশ হিসেবে দুই দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক ও আস্থা নতুন করে তৈরি করতে এসেছি।'
তিনি আরো বলেন, 'বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা পরস্পর নতুন বিনিয়োগ, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ছাড়াও বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করাসহ এদেশে শ্রম আইনকে আরো উন্নত করার বিষয়েও আলোচনা করেছি বলে উল্লেখ করেন তিনি।