মানুষের জন্য আশ্রয়ণ কেন্দ্র, হরিণের জন্য কেন নয়

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৪, ০৩:৪২ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করার জন্য শত শত আশ্রয় কেন্দ্র থাকলে হরিণের জন্য কেনো থাকবে না? এমন উষ্মা প্রকাশ করেছেন খুলনা ৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের পরে বনের কটকা, কচিখালী, করমজল, পক্ষীর চর, ডিমের চর, শেলারচর ও নারিকেলবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হরিণের ১২৭টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি বলে। মানুষের জন্য আশ্রয়ণ কেন্দ্র থাকলে, হরিণের জন্য কেন থাকবে না? ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে বণ্যপ্রাণী রক্ষায় সুন্দরবনের ভিতর উঁচু জায়গা তৈরি করে প্রাণি আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলার অভিমত দিয়েছেন উপকূলীয় এলাকার এই সংসদ সদস্য।
মঙ্গলবার (৪ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স এবং নাগরিক সংগঠন সুন্দরবন ও উপকূলীয় সুরক্ষা আন্দোলন আয়োজিত 'উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রেমাল পরবর্তী পরিস্থিতি ও জরুরি করণীয়' শীর্ষক মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন: এক হাটের গরু অন্য হাটে নিলেই ছিনতাই মামলা
অনুষ্ঠানে মো. রশীদুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য শত শত আশ্রয়ণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। বণ্যপ্রাণি রক্ষা করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ কারণে সুন্দরবনে হরিণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় থেকে মানুষকে রক্ষা করা গেলেও অনেক শত শত হরিণ প্রাণ হারায়। চারটি বণ্য শূকরের মরদেহও পাওয়া গেছে। তবে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম বলে দাবি করেন তিনি।
বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসের পানিতে বনের বেশিরভাগ অংশ প্লাবিত হয়েছে। মিষ্টি পানির পুকুরগুলো সব লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এই এলাকায় মিঠা পানির সংকট দেখা দিয়েছে। মানুষসহ বণ্যপ্রাণিরা পানির সংকটে রয়েছে।
সুন্দরবন রক্ষায় সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সুন্দরবনের ভিতরে ইকো রিসোর্ট না করে বাইরে করা হোক। জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পিতভাবে খাল নদী দখলমুক্ত করে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ রক্ষা করতে হবে। সুন্দরবনের আশেপাশে কোনো শিল্প কারখানা গড়া যাবে না। তবে এই এলাকার মানুষকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত করার পরিকল্পনা থাকতে হবে।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য (সাতক্ষীরা) লায়লা পারভীন সেঁজুতি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘটতে থাকা দুর্যোগ মোকাবেলা করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষায় অনেক টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও সাধারণ মানুষের কাছে এর কোনো প্রতিফলন নেই। তাই উপকূলীয় এলাকা সরজমিন পর্যবেক্ষণ করে স্থানীয়দের মতামত নিয়ে উন্নয়ন কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে এই ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়েছে। কারণ সুন্দরবন তার বুক দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। তাই মানুষ কম মারা গেছে। অতীতে যেসব সাইক্লোন সুন্দরবনে আঘাত করেছে সেটাতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। তাই সুন্দরবনকে দখল, দূষণ ও ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এলাকাকে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার উদ্যোগ নেয়া দরকার।
এসময় সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ক্লাইমেট জার্নালিস্ট ফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের সদস্য সচিব আমিনুর রসূল বাবুল প্রমুখ।