ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে পদত্যাগের হিড়িক

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ০৪:০৫ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে পদত্যাগের হিড়িক। ছবি: সংগৃহীত
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের অন্তত ১৮ নেতা। এদের মধ্য থেকে ৫ জন রবিবার (১৪ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাতেই পদত্যাগ করেন।
বুধবার (১৬ জুলাই) সকাল পর্যন্ত এই ১৮ জনের পদত্যাগের ঘোষণা কথা জানা গেছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া পোস্টে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তবে এ সংখ্যা আরো বেশি বলে জানান কোটা সংস্কারের পক্ষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রলীগের পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করা নেতারা হলেন– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সহ সভাপতি জান্নাতুল মাওয়া, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হাসিবুল হাসান হাসিব, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের অর্থ সম্পাদক জুয়েনা আলম মুন, আইন সম্পাদক সিরাজাম মনিরা তিশা, প্রচার সম্পাদক আমরিন জান্নাত তাইরু এবং নাট্য ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মেহেরুন্নিসা মিম, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি নুরুল ইসলাম হৃদয়, বিজ্ঞান উপ-সম্পাদক জেবা সায়ীমা, সার্জেন্ট জহরুল হক হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ওয়াসিক, শামসুন নাহার হল ছাত্রলীগের উপ-পাঠাগার সম্পাদক ইসরাত জাহান সুমনা, বিজয় একাত্তর হল শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা উপ-সম্পাদক শাহ সাকিব সাদমান প্রান্ত, জসীমউদ্দিন হল ছাত্রলীগের মো. রাফিউল ইসলাম রাফি, কার্যনির্বাহী সদস্য মেহেদী হাসান।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রবিবার রাতেই পদত্যাগের ঘোষণা দেয়া নেতারা হলেন– সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখার গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক মাছুম শাহরিয়ার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখার মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক উপ-সম্পাদক রাতুল আহমেদ শ্রাবণ, কলাভবন ছাত্রলীগের ১নং সহ সম্পাদক মো. মুহাইমিনুল ইসলাম, আইন অনুষদ শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আশিকুর রহমান জিম এবং রাসেল হোসেন।
সদ্য পদত্যাগকারী রোকেয়া হলের সহ সভাপতি জান্নাতুল মাওয়া বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোকেয়া হল সহ সভাপতি পদ থেকে মুক্তি নিলাম, পদত্যাগের ঘোষণা করছি। যেহেতু রাজাকার বলে আখ্যায়িত করেছেন, রাজাকার হয়েই থাকতে চাই।
বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হাসিবুল হাসান হাসিব লিখেছেন, আমি হাসিবুল হাসান হাসিব, সহ সভাপতি বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রলীগের সঙ্গে আমার পূর্বের সব সম্পর্ক ত্যাগ করলাম, আমার ছোট ভাই বন্ধুদের অনেককে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। ঘৃণা হচ্ছে ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে এতদিন কাজ করায়, বিদায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের অর্থ সম্পাদক জুয়েনা আলম মুন লিখেছেন, ন্যায়ের কাণ্ডারি ভেবে ছাত্রলীগ করতাম। কিন্তু এখন এই সংগঠনের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা ছিল এটা মনে করলেও আমার রক্তাক্ত বন্ধু-বান্ধবী, সিনিয়র, জুনিয়রদের চেহারা মনে পড়বে। তাই স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে পদত্যাগ করছি।
ইসরাত জাহান সুমনা লিখেছেন, আমি ইসরাত জাহান সুমনা, উপ-পাঠাগার সম্পাদক বাংলাদেশ শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পদ থেকে সজ্ঞানে অব্যাহতি নিচ্ছি। এই পদ এবং সংগঠনে আমার কোনো পরিচয় নেই, বরং ঘৃণিত ও লজ্জিত হব নিজের কাছে।
আরো পড়ুন: জবিতে লাঠিসোঁটা নিয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের অবস্থান
নুরুল ইসলাম হৃদয় ফেসবুকে লেখেন, আমি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বজ্ঞানে অব্যাহতি নিচ্ছি। যেই সংগঠন আমার বোনের মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত করে; বোনের গায়ে হাত দেয়, আমার ভাইকে রডের বাড়ি মেরে আধমরা করে ফেলে দেয় রাস্তায়, তারাই নাকি আমার ভাই-বন্ধু! আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করার অঙ্গীকার করেছিলাম। এটা কখনো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হতে পারে না, আমি লজ্জিত।
কোটা সংস্কারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে রবিবার রাত ১১টার দিকে বিক্ষোভে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন হল থেকে তারা কোটা সংস্কারের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে সোমবার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলার পর দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৩ শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন।
রবিবার (১৪ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? এই বক্তব্যের প্রতিবাদেই সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বের হন।
কোটা আন্দোলন ইস্যুতে আন্দোলনকারীদের ওপর একইসঙ্গে হামলা হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের ৬ নেতা ইতোমধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
পদত্যাগ করা ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান সামি ও রসায়ন বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি তাওসিফ কবির, মনোবিজ্ঞান বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি রনি সরকার ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আশিকুর রহমান এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান নোমান এবং শিঞ্জন বসাক।