নিহত ৪৪ পুলিশ সদস্যের স্বজনরা কী বিচার পাবেন, যা বললেন বিশেষজ্ঞরা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১৭ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
গত ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত চলা ছাত্র আন্দোলন সংক্রান্ত ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে যে, এই সময়ে কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না। এই নির্দেশনার পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের হত্যাকাণ্ড এবং থানায় হামলার ঘটনা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি কাউকে গ্রেপ্তার করবে না? বিশেষভাবে, নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবার কি বিচার পাবে না, সেই আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। খবর ডয়েচে ভেলের।
৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় হামলার সময় ৪ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় এবং থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এই ঘটনায় কনস্টেবল আব্দুল মজিদ নিহত হন, এবং তাঁর স্ত্রী শাহজাদী বেগম গত ২৩ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। তবে এখনো পর্যন্ত তদন্ত শুরু হয়নি। শাহজাদী বেগম ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘আমরা এখনো কোনো সহায়তা বা যোগাযোগ পাইনি। কেউ আমাদের সান্ত্বনা দিতে আসেনি, এবং আমাদের কোনো সহায়তাও করা হয়নি। আমার স্বামী আন্দোলনে কোনো ডিউটি করেনি, তাকে থানাতেই পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি জানান, অন্য পুলিশ সদস্যদের পরিবারের জন্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলেও, তাদের পরিবারের কেউ সহযোগিতা করছে না। তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, যেন নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের জন্য বেতন, রেশন এবং থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
নোয়াখালির সোনাইমুড়ী থানায় ৫ আগস্টের হামলা, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ কনস্টেবল হত্যার ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে—নাইম হোসেন (২১), ইমাম হোসেন (২২) এবং নাহিদুল ইসলাম (১৬)। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এবং হত্যাকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। তবে এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়, যার মধ্যে কেউ গ্রেপ্তারের পক্ষেই ছিলেন, আবার অধিকাংশই গ্রেপ্তারের বিরোধিতা করেন।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, গত ২০ জুলাই থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলনে ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ২৫ জন পুলিশ সদস্য মারা যান ৫ আগস্ট। এছাড়া, ২০ জুলাই দু’জন, ২১ জুলাই একজন এবং ১৪ আগস্ট এক পুলিশ সদস্য মারা যান। নিহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ২১ জন কনস্টেবল, ১১ জন উপ-পরিদর্শক, ৮ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক, ৩ জন পরিদর্শক ও একজন নায়েক ছিলেন।
এনায়েতপুর থানায় ১৫ পুলিশ সদস্যের হত্যার ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস এম কামাল জানিয়েছেন, ‘এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।’ একইভাবে, পুলিশের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন নিহত পুলিশ সদস্য আব্দুল রাজ্জাকের ছোট বোন মাউনজেরা খাতুন। তিনি জানান, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনেকবার চেষ্টা করেও তারা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পর্যন্ত পাননি।
এদিকে, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ৫ আগস্টের পর ১৮৭ জন পুলিশ সদস্য কাজে ফেরেননি। এই অবস্থায় নতুন পুলিশ সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুলিশ বাহিনীতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ৬৪ জেলা থেকে ৪ হাজার ২০০ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে।
আরো পড়ুন: সয়াবিন তেল ও পাম তেলের শুল্ক অব্যাহতির প্রস্তাব
নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের অসহায় অবস্থায় থাকা এবং তাদের বিচার পাওয়ার বিষয়ে অস্বচ্ছতা সমাজে এক গভীর প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে, যার উত্তর এখনো মেলেনি।