ভোরের কাগজকে মীর নেওয়াজ আলী
শেখ হাসিনার দেশত্যাগে কারাবন্দি রিজভীর চোখে ছিল আনন্দঅশ্রু

কামরুজ্জামান খান
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৪৬ পিএম

মীর নেওয়াজ আলী
প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর পেয়ে কারাগারে খুশিতে আপ্লুত হয়ে কান্না করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। চোখে আনন্দ অশ্রু বইলেও তিনি বলেছিলেন- এটা ঠিক হয়নি, তিনি ঠিক করেননি, এটা রাজনীতির জন্য ভালো খবর নয়।
শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার কথা প্রথমে কারাবন্দি কারোরই বিশ্বাস হয়নি। পরে বিটিভিতে খবর দেখে নিশ্চিত হয়ে তখনকার কারাবন্দি বিএনপি নেতাদের অনেকেই শোকরিয়া নামাজ আদায় করেন। শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী পুরান ঢাকার লালবাগ শেখ সাহেব বাজার লেনের বাসায় ভোরের কাগজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুক, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা: রফিকুল ইসলাম বাচ্চুসহ তারা সেলে বন্দি ছিলেন। শুধু দুপুরে খাবারের সময় একঘন্টার জন্য সেলের তালা খোলা হতো।
কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সূর্যমুখী সেলে বন্দি থাকা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মীর নেওয়াজ বলেন, ২২ জুলাই তাকে এই বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে এগারটার দিকে একজন কারারক্ষী সেলের সামনে গিয়ে তাদেরকে জানান, ‘সুখবর আছে। ঢাকায় আবাবিল পাখি আসছে, লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় আসছে। রাস্তায় মিছিল করছে।’ নেওয়াজসহ অন্যরা ওই কারারক্ষীর কথা বিশ্বাস করেননি, তেমন গুরুত্ব দেননি।
বেলা গড়িয়ে দুপুরের পর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সেলের তালা খোলা হলে কাজী সালিমুল হক কামাল (ইকোনো কামাল নামে পরিচিত মাগুরার এই সাবেক সংসদ সদস্য ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত) তাদেরকে জানান-‘শেখ হাসিনা ইন্ডিয়া পালিয়ে গেছেন।’ নেওয়াজসহ অন্যরা তার কথা বিশ্বাস করেননি, ফান ভেবেছিলেন। পরে রিজভী, অসীম, টুকু, রফিক, নেওয়াজ মিলে কামালের সেলে গিয়ে বিটিভিতে এ খবর দেখেন। টিভির স্ক্রল দেখে রিজভীর চোখে আনন্দ অশ্রু ঝরে। তখন তিনি বলেন, এটা ঠিক হয়নি, ভালো হয়নি। কারণ জানতে নেওয়াজ প্রশ্ন করলে জবাবে রিজভী বলেন, এটা রাজনীতির জন্য ভাল লক্ষণ নয়। এর পর অনেক বন্দি শোকরিয়া নামাজ আদায় করেন। পরদিন ৬ আগস্ট তারা কারামুক্ত হন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নেওয়াজ আলী বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসা সব এলাকায় আওয়ামী লীগের লোকজন দখল করে নিয়েছিল। দখলদাররা পালিয়ে গেছে, যাদের ব্যবসা ছিল তারা তা ফিরে পেয়েছে। অনেকে আবার স্বেচ্ছায় অন্যজনকে লিখিতভাবে ব্যবসা বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোনো বাহিনীতে চেইন অব কমান্ড নেই। জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশসহ অন্য বাহিনীও ঠিকমতো কাজ করছে না। এসব ঠিক হতে আরো অনেক সময় লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট না থাকায় আওয়ামী লীগের পরিণতি করুণ হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষিতে মোটা দাগে কিছু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।
ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নেওয়াজ বলেন, গত ১৫ বছরে হত্যা, পুলিশ অ্যাসল্ট, সন্ত্রাস দমন আইন, বিস্ফোরক আইনসহ সব ধরনের মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনা সাজিয়ে নিজেরাই মামলা করেছে। তার দুই ভাই, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার মীর আশরাফ আলী আজম ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফুকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
তাদের তিন ভাইকে মামলা দিয়ে একসঙ্গে হয়রানি করে বাড়ি পুরুষশূন্য করা হয়। পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা এবং ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে উঠে আসায় জনপ্রিয়তা ভয় পেতো আওয়ামী লীগ সরকার। চকবাজার থানার একটি মামলায় নেওয়াজকে সাড়ে বছরের দণ্ড দেয় আদালত। গত এপ্রিল মাসে আত্মসমর্পণ করে উচ্চ আদালতে আপিল করে মে মাসে কারামুক্ত হন তিনি।
মীর নেওয়াজ আলী জানান, আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় তাকে ও তার ভাইদের আপোষের প্রস্তাব দিয়ে নানা প্রলোভন দেখানো হয়। তারা তাতে সাড়া দেননি। আওয়ামী লীগে যোগ দিলে মামলা থেকে অব্যাহতি ও দলে সুযোগের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছেন তারা।
নেওয়াজের দাবি, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে সরাসরি চিনেন, জানেন। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে পর পর দুই ভাই কোনো ছাত্র সংসদে ভিপি হওয়ার নজির নেই। আমরা দুই ভাই সেই নজির স্থাপন করেছি (সফু-নেওয়াজ)। পুরান ঢাকা বিশেষ করে লালবাগে আত্মীয় স্বজন, বন্ধু, সুহৃদ মিলে তৈরি হওয়া বড় সমর্থন বলয়কে আওয়ামী লীগ ভয় পেয়ে টার্গেট করে বারবার তাকে ও তার পরিবারকে হয়রানি করেছে। অনেক লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি আমাদের ভিত্তি। আমরা বিশ্বাসঘাতকতা শিখিনি। আগামীতেও দলের প্রয়োজনে যেকোনো পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।