×

রাজনীতি

সেনাকুঞ্জে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম

সেনাকুঞ্জে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া

সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাস্যাজ্জ্বল খালেদা জিয়া

   

ছয় বছর পর প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গেল হাস্যাজ্জ্বল খালেদা জিয়াকে। সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে বসে তিনি উপভোগ করলেন সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এ সময় তার পড়নে ছিল হালকা বেগুনি রঙের শাড়ি আর গলায় সাদা মুক্তার মালা। 

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বেলা ৩টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে পৌঁছান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গাড়ি থেকে নেমে তিনি হুইল চেয়ারে বসে অনুষ্ঠানস্থলে যান। কারামুক্ত হওয়ার পর এই প্রথম কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ঘরের বাইরে বের হলেন। গত এক যুগের মধ্যে এই প্রথম অংশ নেন সেনাকুঞ্জের বার্ষিক আয়োজনে। 

সেখানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন তাকে অভ্যর্থনা জানান।

এর ৫/৬ মিনিট পর প্রধান উপদেষ্টা অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছান। ঠিক চারটায় জাতীয় সঙ্গীত বাজার মধ্য দিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। খালেদা জিয়ার বসার ব্যবস্থা হয়েছিল অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে। খালেদা জিয়া তার আসনে বসার পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এই সময়ে তাদেরকে হাসোজ্জাল দেখাচ্ছিল।

জাতীয় সঙ্গীতের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের শুরুতে সশ্বস্ত্র বাহিনী দিবসে সশ্বস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অভিনন্দন জানান এবং মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন প্রধান উপদেষ্টা।

আরো পড়ুন: গোটা জাতি আজ আনন্দিত: মির্জা ফখরুল

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস সশ্বস্ত্র বাহিনী দিবসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অসুস্থতার মধ্যে আসায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত। 

তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া এখানে এসেছেন। ১২ বছর তিনি আসার সুযোগ পাননি। তাকে এই সুযোগ দিতে পেরে আমরা গর্বিত। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা সত্ত্বেও বিশেষ দিনে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। আপনার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি।

বিকালে ৫টা ২৫ মিনিটে বেগম খালেদা জিয়া ফিরোজা’য় ফিরে আসেন সেনা স্কটেই। এর আগে বিকেলে সাড়ে ৩টায় গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে সেনাকুঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হোন। নিজের সাদা গাড়িতে চড়ে সেনাবাহিনীর প্রটোকল পাহারায় সেনানিবাসের উদ্দেশে রওনা হন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। আর তার গাড়ির সামনে ছিল মিলিটারি পুলিশের (এমপি) পাইলট কার, পেছনে সেনাবাহিনীর একটি অ্যাম্বুলেন্স। খালেদা জিয়া এদিন বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় রাস্তায় জড়ো হওয়া বিএনপিকর্মীরা পুরো এলাকা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে তার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন অনুষ্ঠানে আসেন। এর আগেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৌঁছান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম। অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে দেখতে পেয়েই অঝোরে কেঁদে ফেলেন মির্জা ফখরুল। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ আমন্ত্রিত সিনিয়র নেতারাও আগেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৌঁছান। অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছাড়াও জেএসডির আসম আবদুর রব, জামায়াতে ইসলামীর শফিকুর রহমানসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন: খালেদা জিয়ার সঙ্গে ড. ইউনূসের আলাপ, ভিডিও ভাইরাল

ছবি: ভোরের কাগজ

এর আগে বুধবার রাতে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লে. জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল এ এস এম কামরুল আহসান গুলশানের বাসায় খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে আমন্ত্রণ জানান।

সেনাকুঞ্জ থেকে ফিরে গুলশানে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে যে সম্মান জানানো হয়েছে; তাতে গোটা জাতি আনন্দিত।  

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, খালেদা জিয়া এ দেশের গণতন্ত্রের জন্য তার জীবনের সবচেয়ে বড় সময়টা দিয়ে দিয়েছেন। স্বাধীনতা-স্বর্ভভৌমত্বের জন্য তার তওাগ অপরিসীম। অথচ তাকে ১২ বছর ধরে পরিকল্পিতভাবে সবচেয়ে দেশপ্রেমিক বাহিনী সেনাবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীকে তার থেকে দূরে করে রাখা হয়েছে।  

তিনি বলেন, আমি আজকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ করে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিশেষ করে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে যে তিনি আজকে ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) যে সম্মান দেখিয়েছেন, এতে আমরা যেমন কৃতজ্ঞ হয়েছি,  একই সঙ্গে গোট জাতি আজকে আনন্দিত হয়েছে। 

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর এই প্রথম কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দুই বছর কারাগারে থাকার পর ২০২০ সালের মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পান খালেদা জিয়া। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করে তাকে মুক্তি দেন।

আরো পড়ুন: খালেদা জিয়া-ড. ইউনূসের কুশল বিনিময় নিয়ে যা জানালেন শায়রুল কবির খান

সাময়িক মুক্তির পর থেকে তিনি কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর বাইরে কখনো বাসা থেকে বের হননি। রাজনৈতিক কর্মসূচি বা কোনো ধরনের অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা যায়নি।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রতিবছর দিনটি ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসেবে পালন করে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ ২০১২ সালে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া, তখন তিনি বিরোধী দলীয় নেতা। এরপর আর কখনো তাকে সেনাকুঞ্জের এ আয়োজনে দেখা যায়নি।

এক সময় সেনাকুঞ্জের এ অনুষ্ঠান আলোচনায় থাকত অন্য রাজনৈতিক কারণে। দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া দুজনেই এ অনুষ্ঠানে যেতেন। চির বৈরী এ দুই নেতার সারা বছর দেখা না হলেও সেনাকুঞ্জে তাদের সাক্ষৎ হওয়ার সম্ভাবনা থাকত।

সর্বশেষ ২০১২ সালে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যেও সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন দুই নেত্রী। তবে সেদিন তাদের কথা হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সর্বশেষ ২০০৯ সালে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল।

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকার সরকার পতনের পর গত ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। জুলাই-আগস্টের ‘গণহত্যার’ মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App