দেশবাসীকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা শেখ হাসিনার

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ পিএম

শেখ হাসিনা
দেশবাসীকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে দেশবাসীর প্রতি 'খ্রিষ্টীয় নতুন বছর-২০২৫' এর শুভেচ্ছা জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাভাবিকভাবেই আমার প্রত্যাশা থাকবে নতুন বছরের যাত্রার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। বাংলার জনগণ সুখী-সমৃদ্ধি ও শান্তিতে বসবাস করবে। কিন্তু এই প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির সম্ভাবনা যে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে যাচ্ছে, তা আমাদের আশাহত করে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের আড়ালে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সাংবিধানিকভাবে বৈধ সরকারকে হটানোর মধ্য দিয়ে একটি অসাংবিধানিক, অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক গোষ্ঠী রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। তারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পরপরই সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে খোলনলচে বদলে ফেলে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের আমলে অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন-অগ্রগতির বাংলাদেশ ছিল জগৎ সভায় প্রশংসিত, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল স্থিতিশীল, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল।
অথচ আজকে এই অবৈধ দখলদার গোষ্ঠী বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বিনষ্ট করেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারে তলানিতে। খুন, ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি প্রভৃতি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গভীর সংকটে। হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হত্যার পাশাপাশি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ অন্যান্য সম্প্রদায় ও জাতি গোষ্ঠীর মানুষের উপর নির্বিচারে আক্রমণ চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, যা গণহত্যার শামিল।
একের পর এক অপরাধ সংঘটিত হতে থাকলেও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তৎপরতা নেই। বরং এ সকল অপরাধীদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্টু থেকে সরকার তাদের দিয়ে মবসন্ত্রাস চালিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন ও হামলা চালাচ্ছে। বাকস্বাধীনতার উন্মুক্ত দ্বারকে চরমভাবে রুদ্ধ করা হয়েছে। কেউ এই ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে তাকে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।
এমনকি তাদের বেঁচে থাকার অধিকারও কেড়ে নেয়া হচ্ছে। বাছ-বিচারহীনভাবে গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল মানুষদের বিরুদ্ধে পাইকারি হারে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মিথ্যা ও বানোয়াট হত্যা মামলা দেয়া হয়েছে এবং প্রহসনমূলক বিচারের নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে। আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কষাঘাতে জর্জরিত সাধারণ মানুষের জীবন। অবর্ণনীয় অত্যাচার-নির্যাতন ও জালিমের শাসন কায়েমের মাধ্যমে বাংলাদেশকে তারা এক টুকরো নরকে পরিণত করেছে। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে আগামী বছর কতটুকু শুভ বার্তা নিয়ে আসবে তা নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, স্বাভাবিক নিয়মেই সময়ের কাটা ঘুরে, ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে নতুন বছর এসে কড়া নাড়ে। সময়, সমাজ ও সভ্যতা সামনের দিকে এগিয়ে চলে। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মাসের পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি থমকে দেওয়া হয়েছে। সময়ের পঞ্জিকা সামনের দিকে আগালেও বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের চাকাকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর্থ-সামাজিক সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়া হয়েছে।
এই বিরূপ পরিস্থিতিতে শক্ত মনোবল নিয়ে দাঁড়িয়ে দেশবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের শুভ ও কল্যাণময় সময়ের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশপ্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই লড়াইয়ে সামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এই অপশক্তিকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে আগামীর সময় আমাদের, দেশের জনগণের। সেই বর্ণিল ভবিষ্যতের প্রত্যাশায়, সবাইকে জানাই 'শুভ নববর্ষ '।