সাদপন্থিদের নিষিদ্ধের দাবি ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা ‘জুবায়েরপন্থিদের’

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:০৮ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে তাবলিগ জামায়াতের জুবায়েরপন্থিরা। তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে প্রাণঘাতী হামলায় জড়িতদের শাস্তি ও সাদপন্থিদের নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ও ওলামা সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) ঢাকার কাকরাইল মসজিদে এক সংবাদ সম্মেলনে জুবায়েরপন্থি হিসেবে পরিচিত মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী বলেন, আগামী ১০ জানুয়ারি সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও ২৫ জানুয়ারি আলেমদের নিয়ে ওলামা সম্মেলন করা হবে।
ওলামা-মাশায়েখ বাংলাদেশ এবং দাওয়াত ও সাথিবৃন্দ’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আগামী ৩১ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ের ইজতেমা হচ্ছে; এতে কোনো বাধা নেই। পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে। দ্বিতীয় পর্বের যে ঘোষণা, ১৭ ডিসেম্বরের পরে সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। সেদিন হত্যাকাণ্ডের পরে যাদের হাত মুসল্লিদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে; তাদের আসলে সেখানে ইজতেমা করার কোনো নৈতিক অধিকার থাকে না। মামুনুল হক বলেন, যদি হত্যাকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাহলে তারা কীভাবে ইজতেমা করে, সেটা প্রশাসনের কাছে আমরা জানতে চাই।
এক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মামুনুল হক বলেন, কোনো ব্যক্তির ওপর নয়, সাদপন্থিদের সামষ্টিক সাংগঠনিক যে কার্যকলাপ, সেটাকে নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৭ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে মীমাংসা হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে সব আলোচনার দুয়ার রুদ্ধ করে আমাদের তিন ভাইকে হত্যা করা হল। এখন রক্তের ওপর দিয়ে কীভাবে তাদের সঙ্গে আলোচনায় যেতে পারি?
গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের দখল নিয়ে মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদের অনুসারীদের সংঘর্ষে হয়। তাতে নিহত হন অন্তত তিনজন; আহত হন বেশ কয়েকজন।
সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা সাদ কান্ধলভির সমালোচনা করে নাজমুল হাসান কাসেমী বলেন, দাওয়াত ও তবলীগের সুন্দর দ্বীনি মেহেনতটি ভারতের সাদ সাহেবের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে বহুদিন থেকে সমস্যায় জর্জরিত। তার অন্ধ অনুসারীদের উগ্রতা ও বিশৃঙ্খলার কারণে প্রশাসনের নানা উদ্যোগের পরও সমস্যা মেটেনি। ২০১৮ ও ২০২৪ সালের হত্যাকাণ্ডসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে সাদপন্থিদের নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছি। দাবি পূরণে যদি সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ ও আশানুরূপ অগ্রগতি লক্ষ্য করা না যায়, তাহলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত ওলামা সম্মেলন থেকেই আলেমরা ঘোষণা করবেন।
উল্লেখ্য, তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষ দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি এবং বাংলাদেশের কাকরাইল মারকাজের মাওলানা জুবায়ের আহমদের অনুসারীদের বিরোধ শুরু ২০১৯ সালে। তার আগে বিশ্ব ইজতেমা এক মঞ্চেই হত। এরপর মতভেদের কারণে দুই পক্ষ বিশ্ব ইজতেমা দুই ধাপে করার সিদ্ধান্ত নেয়। মাঝে কোভিড মহামারীর কারণে ইজতেমা দুই বছর বন্ধ থাকে। ২০২২ সাল থেকে ফের ইজতেমা হচ্ছে দুই পর্বের আয়োজনে।
এবারও ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা করবেন ‘জুবায়েরপন্থিরা’। দ্বিতীয় পর্বে ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি অংশগ্রহণ করবেন ‘সাদপন্থিরা’। কিন্তু নভেম্বর থেকেই দুই পক্ষের চলমান বিবাদ নতুন রূপ পায়। গত ৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ওলামা-মাশায়েখদের ইসলামি মহাসম্মেলন' থেকে সাদপন্থিদের নিষিদ্ধ করাসহ ৯ দফা দাবি জানান জুবায়েরপন্থিরা, যারা নিজেদের ‘শুরায়ে নিজাম’ পরিচয় দিয়ে থাকেন।
এরপর ১২ নভেম্বর কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার মাঠে সাদপন্থিদের প্রবেশের সুযোগ দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা অচলের হুঁশিয়ারি দেন জুবায়েরপন্থিরা। এরমধ্যে গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর তুরাগ তীরে ৫ দিনের জোড় ইজতেমা করেন জুবায়ের অনুসারীরা।
এরপর সেখানে ২০ ডিসেম্বর থেকে ৫ দিনের জোড় ইজতেমার ঘোষণা দেন সাদের অনুসারীরা। তবে সাদের অনুসারীদের জোড় ইজতেমা করতে না দেয়ার দাবিতে ১৩ ডিসেম্বর টঙ্গী-কালীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। আর ১৭ ডিসেম্বর ঘটে হতাহতের ঘটনা।