নির্বাচন ইস্যুতে ছাত্রদল-শিবিরের হামলায় ঢাবি উপাচার্য-প্রক্টরসহ শতাধিক আহত, যা জানা গেলো

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৪৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
গত ২ জানুয়ারি ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উপাচার্য-প্রক্টরের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বাকবিতণ্ডার ঘটনার প্রেক্ষিতে, ‘ডাকসু বিতর্কে ছাত্রদল এবং শিবিরের হামলায় ভিসি প্রক্টরসহ শতাধিক আহত।’ আর ‘ডাকসু বিতর্কে ছাত্রদলের হামলায় ভিসি প্রক্টরসহ শতাধিক আহত!!’ শীর্ষক দুটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়টির সত্যতা জানতে চেয়ে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতকেও পোস্ট দিতে দেখা যায়। এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডাকসু নির্বাচন ইস্যুতে ঢাবিতে এমন কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি, বরং মজার ছলে বা সার্কাজম করে দেয়া এক ছাত্রদল নেতার পোস্ট থেকে আলোচিত দাবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিটির সূত্রপাতের বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ফেসবুক মনিটরিং টুল ব্যবহার করে “Shakil Ahammed” একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২ জানুয়ারি সকাল ১১ টা ২ মিনিটে দেয়া একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে একই দাবিতে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার পোস্ট এবং সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পোস্ট শেয়ার দিয়ে সার্কাজম বা মজা করতে দেখা যায়। তবে সাকিব আহমেদকে পোস্টে কোনো ডিসক্লেইমার দিতে দেখা যায়নি।
এছাড়া অ্যাকাউন্টটি আরো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, শাকিল আহম্মেদ একজন ছাত্রদল নেতা।
আরো পড়ুন: শেখ হাসিনার ভাইরাল যে ভিডিও নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে “ডাকসু নির্বাচন ঘিরে আমাদের নিয়ে অপপ্রচার চলছে: ঢাবি ছাত্রদল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলকে নিয়ে অপপ্রচার চলছে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।
প্রথম আলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের হাতে উপাচার্যের হেনস্তা হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, ‘তবুও ছাত্রদলের যেসব পদস্থ নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাদের আমরা সাংগঠনিক স্বচ্ছতার স্বার্থে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি।’
এছাড়া গণমাধ্যমটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রতিবাদের ভাষা তো একটু উচ্চ স্বরেই হয়। আমরা সেটাতে অভ্যস্ত।’ তিনি বলেন, তাদের কাছে ঘটনাটিকে হেনস্তা বা অপমান, এমন কিছু মনে হয়নি। তবে বাইরে থেকে কেউ দেখলে হয়তো এমন মনে হতে পারে। প্রক্টর আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি জানাচ্ছিলেন। দাবি জানাতে গিয়ে কেউ হয়তো একটু উচ্চ স্বরে কথা বলেছেন। তাদের অনেকগুলো দাবি যৌক্তিকও ছিল।
এছাড়া ডেইলি ক্যাম্পাসের ওয়েবসাইটে গত ৩ জানুয়ারি “ঢাবি উপাচার্য-প্রক্টরের ওপর ছাত্রদল-শিবিরের হামলার খবরটি গুজব” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রচারিত দাবিটির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এগুলো ফালতু কথা, আজগুবি কথা। ওরা (আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ) ১৫ বছর এমন করেছে, এখনও করছে। এটা অবাস্তব।
আরো পড়ুন: শেখ হাসিনাকে অবাধ চলাচলের অনুমতি দিলো ভারত!
সাইফুদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নানান দাবি-দাওয়া তো থাকেই। গতকাল ওরা (ছাত্রদল) ভেবেছিল যে, সিন্ডিকেটে হয়তো ডাকসু নিয়ে এজেন্ডা আছে। বলছিল যে, সিন্ডিকেটে যেন ডাকসু নিয়ে আলোচনা না হয়। কিন্তু আমরা ওদেরকে বোঝাচ্ছিলাম যে, সিন্ডিকেটে ডাকসু নিয়ে কোনো আলোচনার এজেন্ডা নেই। মূলত ঘটনা এটাই।’
বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত একাধিক সাংবাদিক ও প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলি।
বাংলা ট্রিবিউনের ঢাবি প্রতিনিধি আবিদ হাসান রাসেল, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপ ডাকসুর নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। অপর দিকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আগে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার করে পরে নির্বাচন দেয়ার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। পরে ভিসি প্রক্টর বেরিয়ে এসে জানান, সিন্ডিকেট সভায় ডাকসু নিয়ে কোনো এজেন্ডা নেই। এরপর সবাই যার যার মতো চলে যায়। সেখানে কোনো ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেনি।’
চ্যানেল ২৪ এর ঢাবি প্রতিনিধি মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা। বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটলেও আহত বা নিহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রচারিত পোস্টগুলো মিথ্যা।’ সুতরাং, ডাকসু বিতর্কে ছাত্রদল কিংবা শিবিরের হামলায় ভিসি প্রক্টরসহ শতাধিক আহত হওয়ার দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট।