গুমের পর ইলিয়াস পরিবারের সঙ্গে যেসব নাটক করে র্যাব

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:১০ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী অপহরণের পর খুন করে লাশ ফেলে দেয়া হয় যমুনায়। খুনের পর র্যাব নাটক সাজায়। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বনানীর ২ নম্বর সড়কের সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনে থেকে অপহরণ করা হয় তাকে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্তের অধীন রয়েছে ইলিয়াস আলীর গুমের অভিযোগ। জানা গেছে, ইলিয়াস আলী আর বেঁচে নেই তা অনেকটা নিশ্চিত। আগামী মার্চের শেষদিকে গুম তদন্ত কমিশন আরো একটি রিপোর্ট জমা দেবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। গুম কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, ইলিয়াস আলী ফিরে আসার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। ইলিয়াস আলীকে অপহরণের ক্লু পাওয়া গেছে এবং এ বিষয়ে আরো তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, তদন্ত অনেকদূর এগিয়ে গেছে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।
ইলিয়াস আলীকে অপহরণের পর গুম করার প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ হয়। বিএনপি হরতাল ঘোষণা করলে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয় ইলিয়াস আলীকে ফেরতের দাবিতে। সিলেটে তুমুল বিক্ষোভ দমনে গুলিও চালিয়েছিল পুলিশ। পুলিশের গুলিতে বিশ্বনাথে ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকায় ৭ জন নিহত হয়েছিলেন। তখনই আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ এক বক্তব্যে উপহাস করে বলেছিলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার শাড়ির আঁচলে ইলিয়াস আলী লুকিয়ে আছেন।’
এদিকে ঘটনার চারদিন পর র্যাব সদর দপ্তরের মোশতাক নামে এক কর্মকর্তা ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ফোন করে শোনান আশার বাণী। ওই র্যাব কর্মকর্তা জানান, আমাদের কাছে ইনফরমেশন আছে, উনাকে (ইলিয়াস আলী) পাওয়া যেতে পারে, আপনারা প্রিপারেশন রাখেন। এরপর ওই র্যাব কর্মকর্তা আরো একদিন ফোন করে একই কথা শোনান। এর কিছুদিন পর ইলিয়াস আলীকে পাওয়ার আশার বেলুন ফুটো করে দেন ওই র্যাব কর্মকর্তা। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরিবারের সদস্যদের জানান, যে ইনফরমেশনটা ছিল সেটা এখন আর নেই। এই বিষয়ে আর কিছু বলতে পারছেন না বলে জানিয়ে দেন।
কয়েকদিন পর জনৈক এক ব্যক্তি ফোন করে ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে জানান, ইলিয়াস আলী জীবিত আছেন। আপনি ইচ্ছে করলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। কীভাবে সাক্ষাৎ করা যায় সেটাও তিনি বলে দিলেন। স্বামীর সন্ধান পেতে পরদিনই প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সুযোগ চেয়ে আবেদন করে পরিবার। অনুমতিও মেলে। দুই পুত্র ও শিশুকন্যাকে গণভবনে ডাকেন শেখ হাসিনা। তার সন্তানদের মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনাও দেন।
শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের কিছুদিন পর গাজীপুরের পুবাইল থেকে ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর মোবাইলে আরো একটি ফোন আসে। এক নারী ফোন করে জানান, ইলিয়াস আলীকে পাওয়া যেতে পারে, দ্রুত পুবাইলে আসেন। বেশ কয়েকজন দলীয় নেতা ও র্যাব কর্মকর্তা মোশতাকসহ দ্রুত পুবাইলে যায় পরিবার। সেখানে যাওয়ার পর স্থানীয়রা জানান, একজন লোককে মাইক্রোবাসে করে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
এরপর তার স্ত্রীর কাছে আরো একটি উড়ো খবর আসে- মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়া যেতে পারে। সেখানে র্যাব অভিযান চালায়। পরে ইলিয়াস আলীর পরিবার জানতে পারে, বিভ্রান্ত করতেই এমন খবর রটানো হয়। শেখ হাসিনার নির্দেশে ইলিয়াস আলীকে প্রথমে অপহরণের পর গুম এবং খুনের পর র্যাব এভাবেই নাটক করে পরিবারের সঙ্গে।
আরো পড়ুন: ইলিয়াসকে কখন কীভাবে গুম করা হয়, ফাঁস করলেন অপহরণে জড়িত র্যাব সদস্য