×

প্রবাস

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষক স্মরণে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০১:১০ এএম

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষক স্মরণে

ছবিতে লেখকের বড় ভাই প্রফেসর ড. মান্নান মৃধা

   
মায়ের চেয়ে বড় শিক্ষক আর কেউ আছে কিনা সেটা জানি না, তবে পুঁথিগত বিদ্যাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে থাকেন তাদেরকেও আমাদের মনে রাখা দরকার। যদিও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চলছে মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকে, তারপরও শিক্ষক দিবসটি ১৯৯৪ সাল থেকে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কোর উদ্যোগে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর এ দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। প্রতিবারের মতো এবারও দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হবে শিক্ষকদের হাত ধরেই। শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের শুরু যেমন হতে পারে সেটা পুঁথিগত বিদ্যার ধরন এবং করণের পরিবর্তন, পুঁথিগত বিদ্যাকে বইয়ের মধ্যে বন্দি না করে ডিজিটালাইজেশন করা, উন্মুক্ত করা প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে লার্নিং বাই ডুয়িং কনসেপ্টের আওতায় আনা এবং পড়ালেখায় মজা ধরাতে যুগোপযোগী ও চাহিদাভিত্তিক করে গড়ে তোলা। বিশেষ করে যার যেটা ভালো লাগে, যদি সে তা করার সুযোগ পায়। সে ক্ষেত্রে কোডিং শেখার জন্য কারো উপর চাপ না দিয়ে বরং যদি কেউ রান্না পছন্দ করে তবে তাকে রান্না শেখানোর সুযোগ করে দেওয়া, নাচতে ভালো লাগলে সেটাই করা। শুধু নিজেকে সেরা করতে যেটা ভালো লাগে, সেটা করতে সাহায্য করা, তবে সাফল্য আসবেই। যদিও চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ না হওয়ার কারণে শিল্প ও কলকারখানাগুলো ঠিক মতো যুগোপযোগী প্রযুক্তি তৈরি করতে পারছে না, কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও পুরনো পদ্ধতিতে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। শিক্ষকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢোকার পর তারা রেগুলার পড়াশুনা বন্ধ করেছে। তাদের ধারণা অনেকটা এরকম যে, তারা ৪-৫ বছর যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তাই দিয়ে বাকি পঁচিশ বছর পার করে দেবে। এ ধরণের মন-মানসিকতার শিক্ষকরা সমাজ এবং দেশের শিক্ষাঙ্গনের জন্য ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে শুরু করেছে। এ থেকে রেহাই পেতে হলে শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত পড়াশুনা করতে হবে, জানতে হবে নতুনত্বের খবরাখবর। একজন ভালো শিক্ষক হতে হলে তাকে একজন ভালো ছাত্র হতে হবে, মানে রেগুলার পড়াশোনা করতে হবে। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে তার নিজের গতিতে, যেখানে সব থাকতেও মনে হচ্ছে কিছুই নেই, থাকলেও হয়তোবা বছরে একবার কোনো রকম একটু অডিট হয় 'জাস্ট ফর ফর্মালিটিজ' রক্ষার্থে। শিক্ষকদের এ স্লোমোশনের লাইফ স্টাইলে এরা দিব্যি সমাজের নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে সমাজে অনেক সময় অস্থিরতার সৃষ্টি করছে। আমরা যারা সচরাচর বলে থাকি শিক্ষকরা জাতির কারিগর কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে কারিগর ঠিকই তবে তা মানসম্মত সুশিক্ষার নয়, কুশিক্ষার। আর তার প্রতিফলন যা আমরা দেখছি তা হলো দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচার ইত্যাদি ইত্যাদি। উন্নতমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে তারা শিক্ষা প্রদানের সঙ্গে রিসার্স করছে, নতুন চিন্তাধারার আবির্ভাব ঘটিয়ে প্রশিক্ষণকে নতুনত্বের সমন্বয়ে মানসম্মত সুশিক্ষা দিতে সক্ষম হচ্ছে। অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী যদি ডিমান্ড, সাপ্লাই এবং ডেলিভারি না থাকে, যদি ভালো ম্যানেজমেন্ট না থাকে, যদি কাস্টমার খুশি না থাকে তাহলে যেমন অর্থনীতির অপচয় ঘটে, তেমন শিক্ষাঙ্গনের দুর্বল ম্যানেজমেন্টের কারণে জাতির অধঃপতন ঘটতে থাকে। যে দেশের সমস্ত সেক্টরেই দুর্নীতিতে ভরা সেখানকার শিক্ষকদের অবস্থা কী হতে পারে? ভেবে দেখা হয়েছে কি? নাকি শুধু পুলিশ বাহিনীর উপর সব দোষ চাপিয়ে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে শিক্ষকদের? এখন প্রশ্ন কে বা কারা জাতির প্রশিক্ষণের জন্য দায়ী? ছোটবেলা বাবা-মা, পরে সংযুক্ত করা হয়েছে শিক্ষকদের। ভালো বাবা-মা না হলে বা ভালো শিক্ষক না হলে কীভাবে পাবো সুশিক্ষা? আমরা এখনও জানিনা শিক্ষা এবং সুশিক্ষা কী? আমরা কী পড়াচ্ছি বা কীভাবে গড়ছি দেশে? কী শিক্ষা, কেন শিক্ষা, শিক্ষার উদ্দেশ্য কী এবং তা কীভাবে মনিটরিং করতে হবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। শিশুদের ১-১৬ বছর বয়সের মধ্যের সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানবতার ফর্মে আনতে হলে তাদের মানসম্পন্ন পরিবেশের মধ্যে শিক্ষা দান করে গড়ে তুলতে হবে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরে পর্যায়ক্রমে গড়ে তুলতে হবে সুশিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষকের সার্বিক অবকাঠামো। যেখানে থাকতে হবে জানা থেকে শেখা। দুর্নীতি বা অনিয়ম যেন কলুষিত করতে না পারে শিক্ষা প্রশাসনকে, শিক্ষাঙ্গনকে। একই সাথে কড়া নজর রাখতে হবে তারা যেন গণতন্ত্রমনা ও সৃজনশীল নাগরিক হিসেবে নিরাপদে ও গর্বের সঙ্গে দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে এবং মতামতের ভিন্নতা সত্ত্বেও খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সামাজিক ঐক্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। এই ব্যাপারে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে আমার প্রশ্ন- আছে কি বাংলাদেশের শিশু বিদ্যালয়ে এমন শিক্ষক বা শিক্ষা পদ্ধতি, যেখানে চর্চা হচ্ছে এমন মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা? বা সেইভাবে তৈরি হচ্ছে কি তেমন শিক্ষক যিনি পারবেন মোকাবিলা করতে ভবিষ্যতের এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে? আমরা যেভাবে আছি ঠিক সেভাবেই থাকবো? নাকি চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন প্রজন্মকে শুধু বাংলাদেশি নয় গোটা বিশ্বের নাগরিক করে গড়ে তুলবো সুশিক্ষার মাধ্যমে? প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাধারার একমাত্র বাহক শিক্ষকই যদি মজবুত না হয়, শিক্ষার্থী অভিযাত্রীরা কি নির্বিঘ্নে শিক্ষা নামক বৈতরণী পাড়ি দিতে পারবে? এ প্রশ্ন এখন সব নাগরিকের, সব অভিভাবকের মাথায়। আমরা জানি, শিক্ষকদের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য, দরকার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ। গতানুগতিক, অসম্পূর্ণ, সনদপত্রসর্বস্ব, তত্ত্বীয় বিদ্যাপ্রধান, অপর্যাপ্ত ব্যবহারিক শিক্ষা, মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল এবং পুরনো পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসারী, তাই আশানুরূপ ফল লাভ হচ্ছে না বর্তমান প্রশিক্ষণে। বাংলাদেশে সুশিক্ষার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের পরবর্তী ফলোআপ খুবই জরুরি। কিন্তু দেশে তার জন্য পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে আলাদা আলাদা ভাবে কিছু শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও সেগুলো মানসম্পন্ন শিক্ষা বিস্তারে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ব্যবস্থাও নেই। আবার শিশু বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বস্তরের শিক্ষকদের জন্যও প্রশিক্ষণের সঠিক ব্যবস্থা নেই। ফলে দেশে দিনে দিনে শিক্ষিতের হার বাড়লেও বাড়ছে না শিক্ষার মান। তাই দেশের জনশক্তিকে দ্রুত জলসম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। বর্তমান যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা জানে না কী ধরনের শিক্ষা দেওয়া দরকার একজন শিশু বিদ্যালয়ের শিক্ষককে। পুরো শিক্ষাঙ্গন খুঁজলে পাওয়া যাবে খুবই কম সংখ্যক এইসব গুণসম্পন্ন শিক্ষক, নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক। মানুষের মতো দেখতে হলেই মানুষ গড়ার কারিগর হওয়া যায় না, ঠিক শিক্ষক হলেই মনোপুত শিক্ষক হওয়া যায় না, তার জন্য দরকার মিশন, ভিশন এবং পলিসি। সঙ্গে ডেডিকেশন, প্যাশন, মোটিভেশন, গোলস এবং অবজেকটিভস। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মানসম্পন্ন প্রয়োজনীয় শিক্ষার মাধ্যমে তৈরি করতে হবে সুশিক্ষিত শিক্ষক। সচেতন জাতি খুঁজে বের করে সমাধান, অজুহাত নয়। সুশিক্ষার কারিগর পেতে হলে এবং মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হলে দরকার সাবধানতার, কারণ সাবধানতাই একমাত্র সুশিক্ষার পথ। এখনও শিক্ষা বলতে আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সনদভিত্তিক শিক্ষাকেই বুঝতে এবং বোঝাতে চাই। একজন শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রায় এক দশক পড়ালেখা করতে হয় ‘কী শিক্ষা, কেন শিক্ষা’ প্রশিক্ষণ নিতে। এই দীর্ঘ প্রশিক্ষণ একজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষিত শিক্ষক হিসেবে দক্ষ করে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপর শিক্ষার্থীর শেখা ও শিক্ষিত হওয়া নির্ভর করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ সনদের মাধ্যমে তাঁর যোগ্যতার আশ্বাস দেয়। কিন্তু তিনি প্রকৃত শিক্ষায় কতটা শিক্ষিত হয়েছেন, সনদ সেই নিশ্চয়তা দিতে পারে কি? মূলত প্রকৃত শিক্ষা ও সনদভিত্তিক শিক্ষা- দুটোই আমাদের প্রয়োজন। আমরা শিখতে চাই না কিন্তু শিক্ষিত হতে চাই। যার ফলে সৃজনশীল, সুশিক্ষিত এবং স্বশিক্ষিত হতে পারছি না। কারণ কী? আমরা জন্মের শুরু থেকেই শিখছি। শিখতে শিখতে মস্ত বড় ডাকাত, দুর্নীতিবাজ, ধান্দাবাজ, ফাঁকিবাজ হয়ে জীবন যাপন করছি। প্রশ্ন, আমরা তাহলে কী শিখছি? একটি দেশের পাঠ্যপুস্তকের গঠন, প্রশিক্ষণের ধরন, শিক্ষকের গুণগত মান এবং যোগ্যতা যদি লক্ষ্য করি, তবে জানা ও বোঝা যাবে- কী শিক্ষা সেখানে হচ্ছে। জাতি হিসেবে আমাদের নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের পরিধিই বা কোন স্তরে! তার আগে আসুন একজন সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত লোকের সম্পর্কে জানি। একজন শিক্ষিত লোক স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুযায়ী যা শেখার সেগুলো শিখে মস্ত বড় শিক্ষিত হয়ে সমাজের একটি গুরুদায়িত্ব পালন করা শুরু করলেন। যা শুরু করলেন, সেখানেও কিন্তু সিলেবাস অনুযায়ী কাজ করতে হবে; নইলে সেই গুরুদায়িত্বের শীর্ষে পৌঁছা সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে রুটিন অনুসরণ করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করাই মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, বর্তমান বিশ্বের শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন করতে হবে, যদি আমরা শিক্ষাকে সর্বাঙ্গীণ সামনের দিকে নিতে চাই। পৃথিবীর লোকসংখ্যার যে শ্রেণির বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে, সেই শ্রেণির মানুষের দিকে আমাদের বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, এ সময়ে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো একের পর এক ঘটতে থাকে। এ সময়ে যে রকম বীজ বপন বা রোপণ করা হবে, ফলও সে রকম হবে। এই সময়ে শরীরের বিশাল পরিবর্তন দেখা দিতে শুরু করে। সময়টি দিকনির্দেশনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। যেমন- কী বা কোন বিষয়ে শিক্ষা অর্জন হবে, এটি একটি দিক; প্রেম-ভালোবাসার জোয়ার শরীরে, তাকে নিয়ন্ত্রণ করা আরেকটি দিক। যদি শিক্ষায় যৌনতার মতো আনন্দ না লাগে, তাহলে কী হবে? বেশির ভাগই শিক্ষা ছেড়ে অন্য পথ বেছে নিবে। শিক্ষাকে পরিবারের চাপে ধরে রাখবে পুঁথিগত বিদ্যা হিসেবে। এমন একটি স্তরে দরকার দক্ষ শিক্ষক, দরকার মজবুত পরিকাঠামো, দরকার সৃজনশীল প্রশিক্ষণ। আছে কি বিশ্বের কোনো দেশ, যেখানে এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে শিক্ষা পদ্ধতিকে গড়ে তোলা হয়েছে? পুরোপুরি না থাকলেও কয়েকটি দেশে আছে। তার মধ্যে কানাডা, ফিনল্যান্ডের নাম আসতে পারে। তবে সুইডেনের একজন শিক্ষককে আমি চিনি, যিনি দীর্ঘ সময় ধরে কাজটি করে আসছেন তাঁর মূল কর্মের পাশাপাশি। এখন তিনি অবসর সময় পার করবেন আনন্দ-ফুর্তির মধ্য দিয়ে। তিনি মূলত সময়টি পার করছেন সুইডিশ প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করে। তিনি অষ্টম এবং নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞান কীভাবে শিখতে হয়, তার ওপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। একই সঙ্গে যেসব শিক্ষক মূলত এ কাজগুলো করেন, তাদের মেন্টর হিসেবে তদারকি করছেন। এটি এরই মধ্যে সুইডেনের শিক্ষাক্ষেত্রে বেশ সাড়া ফেলতে শুরু করেছে। একজন ভালো শিক্ষক হতে হলে (জানি না সব সময় সঠিক কি না, তবে এটা প্রমাণিত হয়েছে আমার অভিজ্ঞতা থেকে) একজন ভালো ছাত্র হওয়া প্রয়োজন। ভালো ছাত্র মানে এই নয় যে তিনি ছাত্র জীবনে ভালো ভালো ফলের অধিকারী। বরং ভালো ছাত্রের অর্থ এই যে তিনি শিক্ষাদান পেশায় নিয়োজিত থাকলেও নিরন্তর অধ্যাবসায়ের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। আমি আমার বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের জন্য যেসব কোয়ালিটিপূর্ণ শিক্ষকদের কথা মনের মাঝে ধরে রেখেছি, তাঁদের মধ্যে আমার বড় ভাই মান্নান মৃধাকে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে নিঃসন্দেহে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করি, যখনই শিক্ষা প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষক নিয়ে লেখালেখি করি। আমার বড় ভাই প্রফেসর ড. মান্নান মৃধা সুইডেনের কেটিএইচ রয়েল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন শিক্ষক। ভালো মানুষ, ভালো বন্ধু এবং ভালো শিক্ষক তিনটি গুণের সমন্বয়ে এই শিক্ষককে দেখে মনের মাঝে দোলা দিয়েছে সেই শুরুতেই, এবং বাংলাদেশে তার মতো অনেক শিক্ষক রয়েছে, তাই তো মনে প্রাণে দোলা দিয়েছে, একজন আদর্শ এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত সুশিক্ষকই করতে পারে বাংলাকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে। এই স্বপ্নকে সত্য করতে হলে সকল গুণসম্পন্ন শিক্ষকের সমন্বয় ঘটাতে হবে সেই সাথে দেশের পরিকাঠামোকে মজবুত করতে হবে। এমতাবস্থায় শিশুশিক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত নিবিড় নজরদারী চালু রাখতে হবে। ভদ্রলোক আমার বড় ভাই অধ্যাপক ড. মান্নান মৃধা। তিনি আজীবন বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করেছেন। তাঁর শিক্ষাজীবন শেষ, এখন তাঁর অবসরের সময়। জীবনের এ সময় আর ১০ জনের মতো নাতি-নাতনির সঙ্গে খেলা বা ঘোরাফেরা করে সময় কাটাবেন। অথচ তিনি তা না করে করছেন প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা। ইট তৈরি করতে যেমন ডাইস দরকার; ঠিক প্রকৃত শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা পেতে দরকার এই ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সের ছেলেমেয়ের মধ্যে শেখার জন্য শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া। শিক্ষার মধ্যেও যে চমৎকার মজা রয়েছে, সেটি ধরিয়ে দেওয়া তাদের মনঃপ্রাণ, চিন্তাভাবনা ও ধ্যানে। তিনি চেষ্টা করছেন মুকুলেই যেন তরুণ প্রজন্ম ঝরে না যায়। তিনি শেখাচ্ছেন কীভাবে শিখতে হয়। যদি ড. মান্নান মৃধার প্রজেক্ট কৃতকার্য হয়, তবে ভবিষ্যতের উচ্চশিক্ষাধারী শিক্ষক খুঁজতে বিশ্ববিদ্যালয় নয়, যেতে হবে প্রাইমারি স্কুল লেভেলে। কারণ শিক্ষার শুরুটা ওখানেই। ফাউন্ডেশন যদি ভালো না হয় তাহলে বিল্ডিং যত তলারই হোক না কেন, তা যেমন ভেঙে পড়বে, ঠিক যত উঁচু স্তরের শিক্ষিত শিক্ষক পরবর্তী স্তরে নিয়োগ দেওয়া হোক না কেন, ভালো প্রডাক্ট কখনও পাওয়া সম্ভব হয়নি, হবেও না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জেল হাজত না বানিয়ে বরং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলুন, যেখানে পরস্পর জানবে, শিখবে এবং শেখাবে। আমি মনে প্রাণে লাখো লাখো তরুণ ও সৃজনশীল আদর্শ শিক্ষক দেখতে চাই সারা বাংলাদেশে সেইসাথে হাজার সালাম জানাই বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষক স্মরণে। লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন থেকে, [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App