ব্রিকস সদস্যদের নিয়ে আইএমএফের বিকল্প তৈরির প্রস্তাব রাশিয়ার

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি : সংগৃহীত
ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোর প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিকল্প গঠনের আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। পশ্চিমা বিশ্বের রাজনৈতিক চাপ মোকাবিলায় এই পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব করেছে মস্কো। আগামী ২২-২৪ অক্টোবর রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ব্রিকসের পরবর্তী সময়ে শীর্ষ সম্মেলন। তার আগেই এই প্রস্তাব দিল রাশিয়া। বর্তমানে ব্রিকস জোটের সভাপতিত্ব করছে দেশটি।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা- এই ৫ সদস্যের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্রিকস। ২০১০ সালে সাউথ আফ্রিকা যোগ দেয়ার আগে এটি ব্রিক নামে পরিচিত ছিল। গত বছর আর্জেন্টিনা, মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এতে যুক্ত হয়েছে।
ব্রিকস উদীয়মান অর্থনীতির একটি গোষ্ঠী, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০৯ সালে চালু হয়। বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২৩ শতাংশ এবং বিশ্বের জনসংখ্যার ৪২ শতাংশ এ জোটের প্রতিনিধিত্ব করে, তারা বৈশ্বিক বিষয়ে পশ্চিমা অর্থনৈতিক আধিপত্যকে নিস্তেজ করতে চাইছে। বিশ্বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ১৮ শতাংশে জোটের ৫টি দেশ অবদান রাখে, যার অধিকাংশই ডলারে লেনদেন হয়।
ব্রিকসের সদস্য দেশগুলো প্রতি বছর শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হয়। একেকটি সদস্য দেশ একেকবার সম্মেলনের আয়োজন করে। বৈঠকের লক্ষ্য, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান তুলে করা। বিশ্ব বাণিজ্যে তারা ডলারের প্রাধান্যের সমালোচনা করে থাকে। তাদের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো ডলারের ব্যবহার থেকে নিজেদের মুক্ত করা।
এ সপ্তাহে মস্কোয় ব্রিকসের শীর্ষ অর্থ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাশিয়ার অর্থমন্ত্রী আন্তোন সিলুয়ানভ বৈঠকের প্রথম দিনে বলেন, বিশ্বব্যাপী আর্থিক ব্যবস্থা পশ্চিমা দেশগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। অথচ বৈশ্বিক অর্থনীতির ৩৭ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে ব্রিকস জোট। সুতরাং আমাদের একটি বিকল্প ব্যবস্থা গঠন করা প্রয়োজন। তিনি দাবি করেন, আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক নিজেদের মূল কাজগুলো করছে না। সংস্থাগুলো ব্রিকস দেশগুলোর স্বার্থে কাজ করছে না বলেও অভিযোগ করেন।
২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জব্দ করা হয়েছে, ফলে দেশটির আর্থিক ব্যবস্থায় বড় আঘাত এসেছে। আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে মস্কো।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এলভিরা নাবিউলিনা এর আগে ব্রিকস ব্রিজ পেমেন্ট সিস্টেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আর্থিক লেনদেনের একটি বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে। তবে এ বিষয়ে খুবই ধীরগতিতে অগ্রগতি হচ্ছে।
২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতিতে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে গঠিত ব্রিকসের লক্ষ্য- বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও সহযোগিতা। এছাড়া মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রাখতে চায়।
২০১৪ সালে জোটের সদস্য দেশগুলো মিলে গঠন করে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি)। এটি একটি বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংক- যার উদ্দেশ্য হলো ব্রিকস সদস্য এবং অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির জন্য অবকাঠামো ও টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করা। তবে রাশিয়ার নতুন আহ্বান ইঙ্গিত দেয় যে, এই দেশগুলো একটি আরো কার্যকর আর্থিক কাঠামো তৈরির দিকে এগোতে চায়, যা তাদের পশ্চিমা প্রভাব থেকে মুক্তি দেবে।