জিপিএস যুগে টাইগাররা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৩৫ এএম

ডেভিড মুর
টাইগার ক্রিকেটের হেড অব প্রোগ্রাম ডেভিড মুরের হাত ধরে নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের ক্রিকেটে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) যুগের সূচনা করতে যাচ্ছেন তিনি। ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেটারদের ওয়ার্কলোড ম্যানেজম্যান্ট পরিমাপ করার জন্য এবং তাদের সমস্ত তথ্য একত্রে রেখে সেখান থেকে সুবিধা পাওয়ার জন্য এই উদ্যোগ নিতে চান মুর।
জিপিএসের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের সক্ষমতা, সীমিত ইনজুরি এবং এর সম্ভাবনা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। ম্যাচের সময় একজন ক্রিকেটার কতটুকু দৌড়েছেন, কতটুকু পরিশ্রম করেছেন বা সেই ক্রিকেটারের হৃৎস্পন্দনের গতি, এমনকি পায়ে পায়ে কত কদম হেঁটেছেন বা দৌঁড়াচ্ছেন সবই রেকর্ড করা হবে। এটি জার্সির নিটে ছোট জামায় সেট করা হবে এবং পরবর্তীতে মাঠের সব তথ্য ড্রেসিংরুমে থাকা ল্যাপটপে উঠে আসবে। ক্রিকবাজকে দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেন টাইগারদের হেড অব প্রোগ্রাম ডেভিড মুর।
তিনি বলেন, ‘জিপিএস ওয়ার্কলোড ম্যানেজম্যান্ট থেকেও বেশি। আমরা যা চাই তা হল ওয়ার্কলোড ম্যানেজম্যান্ট পরিমাপ করার জন্য একটি ব্যবস্থা। আমরা খেলোয়াড়দের সক্ষমতা এবং সীমিত ইনজুরি এবং এর সম্ভাবনা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। কিছু সিস্টেম যেমন ফাস্ট বোলারদের শরীরের উপর চাপের বিষয়ও থাকবে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো জিপিএস নেই এবং অন্যান্য ক্লাব এটি ব্যবহার করছে কিনা তা আমি জানি না।’
একজন ক্রিকেটারের শারীরিক অবস্থার পাশাপশি শক্তি-দুর্বলতাও তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণ করে ফেলা যাবে এই প্রযুক্তি দিয়ে। ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে দেখা যাবে কোনো জায়গায় বল ফেললে তিনি বিপদে পড়ছেন, আর বোলারের ক্ষেত্রে কোন জায়গায় বল ফেললে মার খাচ্ছেন তাও জানা যাবে।
এটি চালু করার বিষয়ে মুর বলেন, ‘আমি বিসিবির ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের প্রধান নাসেরের সঙ্গে অনেক কথা বলছি এবং তিনি স্পষ্টতই এতে বিশ্বাস করেন এবং আমিও বিশ্বাস করি যে এই সিস্টেমটি নিয়ে আসা উচিত। যাতে আমরা একসঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি আমরা খেলোয়াড়দের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য পাই। এটিই সর্বোত্তম এবং আমাদের প্রয়োজন। আমার ভূমিকা কোচদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা। বিপিএল, ডিপিএল বা এনসিএল যাই হোক না কেন, আমাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা শুধু পরিসংখ্যান নিয়ে চলছি না। আমরা যদি কারো ওপর বিনিয়োগ করি, তাহলে বুঝতে হবে যে তারা কয়েক বছর ধরে আমাদের সঙ্গে আছে। এটি ফিটনেস এবং চরিত্রের ব্যাপার যা নিশ্চিত করবে যে তারা ভালো দল এবং কঠোর পরিশ্রম করে এবং পাশাপাশি নিজেদের বিকাশের চেষ্টা করে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা শুধু তথ্য রেকর্ড করব না। ডেটা এবং পরিসংখ্যান দিয়ে আমরা একটি বড় ছবি আঁকতে পারি এবং যাতে সব বিষয়গুলো ভুলে না যাই। আমাদের এমন কোচ থাকা দরকার যারা ক্যাম্প ছেড়ে যাওয়ার পর ক্রিকেটারদের খেলা দেখে। অস্ট্রেলিয়াতে একজন রাজ্য দলের ক্রিকেটারের তথ্যও দারুণভাবে সংরক্ষণ করা হয়। আর প্রত্যেকেই সচেতন যে কী ঘটছে।’
এখানে প্রত্যেক খেলোয়াড়েন আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্ট থাকবে ফেসবুক-টুইটারের মতো। যার মাধ্যমে কোচ বা খেলোয়াড় সবাই সব তথ্য পেয়ে যাবেন। একজন খেলোয়াড় নামের পাশে থাকা সবুজ, হলুদ বা লাল চিহ্ন দেখে বোঝা যাবে তিনির ম্যাচের জন্য ফিট কিনা। যেখানে সবুজ মানে ফিট, লাল মানে ফিট নয় এবং হলুদ মানে সংশয়। এর ফলে ম্যাচ চলাকালে খেলোয়াড়দের ইনজুরিতে পড়ার সম্ভবনা অনেকটাই কমে যাবে।
এই বছরের জানুয়ারিতে ডেভিড মুরকে দুই বছরের জন্য বিসিবির হেড অব প্রোগ্রাম হিসেবে নিয়োগ দেয় বিসিব। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের বাইরে থাকা ও জাতীয় দলের পাইপলাইনে থাকা ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করবেন। তার অধীনে থাকবেন হাই পারফরমেন্স ইউনিট ও বেঙ্গল টাইগার্সের ক্রিকেটাররা। নিউ সাউথ ওয়েলসের ৫৮ বছর বয়সি অস্ট্রেলিয়ান সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটার ডেভিড মুর একটিমাত্র টেস্ট খেলেছেন। সেটা ৯০ দশকে। খেলা ছেড়ে তিনি কোচিংয়ে মনোযোগী হন। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ ব্যাংক একাডেমির কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেটাও প্রায় দুই যুগ আগে ২০০২ সালে।
তবে বাংলাদেশের ফুটবলে অনেক আগে থেকেই চালু ছিল জিপিএস। এরপর ভিডিও অ্যানালাইসিস সফটওয়্যার যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশের ফুটবল। এর ফলে বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে একজন ফুটবলার মাঠে কেমন খেলল, কোথায় ভুল করল, কোথায় উন্নতি হলো এমনকি তার গতিবিধিসহ পারফরম্যান্সের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষণ করতে পারে ফুটবলাররা। পাশাপাশি মাঠে খেলোয়াড়রা কতুটুক দৌঁড়ালেন কিংবা খেলোয়াড়ের ফিটনেস কিংবা একেকজন ফুটবলারের গতি, ডিসটেন্স কাভারের সক্ষমতা বিশ্লেষণ করে সহজেই ফরমেশন, প্লেয়িং স্টাইল সাজিয়ে মাস্টারপ্ল্যান করতে পারবেন বাংলাদেশ ফুটবলের কোচ।