কিংবদন্তিদের ঢাকা দর্শন: মোহাম্মদ আলী থেকে মার্তিনেজ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৩, ১০:২৩ পিএম


মোহাম্মদ আলী

জিনেদিন জিদান



আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ
ফুটবলে তেমন জনপ্রিয় না হলেও ক্রিকেটে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
এর মাঝে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের অনেক কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ। স্বাধীনতার পর প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে বাংলাদেশ সফরে আসেন বিশ্বখ্যাত বক্সার মোহাম্মদ আলী।আসেন ফিফা সভাপতি হোয়াও হ্যাভেল্যাঞ্জ ও সেফ ব্লাটার।
এছাড়া ঢাকা দর্শন করেন ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী তারকা জিনেদিন জিদান, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী তারকা লিওনেল মেসি, ব্রাজিলের কিংবদন্তি গোলরক্ষক জুলিও সিজার, ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী তারকা ক্রিশ্চিয়ান কারেম্বু।
[caption id="attachment_444873" align="aligncenter" width="700"]
বিশ্বখ্যাত বক্সার মোহাম্মদ আলী[/caption]
আর সবশেষ সোমবার ঢাকা দর্শন করেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। ক্রিকেটে বাংলাদেশ বৈশ্বিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে। যে কারণে ক্রিকেটের অনেক কিংবদন্তিই খেলে গেছেন ঢাকার মিরপুর স্টেডিয়ামে।
ব্রায়ান লারা, রিকি পন্টিং, শচীন টেন্ডুলকার, সানাৎ জয়সুরিয়া, ওয়াসিম আকরামের মতো তারকারা ছাড়াও ঢাকায় পা রেখেছেন ক্রিকেটের আরো অনেক কিংবদন্তি ও ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। এ বছরেই ঢাকা সফরে এসেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি।
বড় ক্রীড়াবিদদের মধ্যে প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসেন বক্সার মোহাম্মদ আলী। ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এক সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় পা রেখেছিলেন তিনি। ঢাকায় আসার পরপরই পল্টন ময়দানে হাজার হাজার ভক্তের সামনে উপস্থিত হন মোহাম্মদ আলী।
[caption id="attachment_444874" align="aligncenter" width="700"]
ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী তারকা জিনেদিন জিদান[/caption]
এখানে তার নামে স্থাপনকরা একটি বক্সিং স্টেডিয়ামেরও উদ্বোধন করেন। শুধু তাই নয়, ১২ বছর বয়সি এক বালকের সঙ্গে প্রীতি বক্সিং লড়াইয়েও অংশ নেন তিনি। এই সফরে মোহাম্মদ আলীকে বাংলাদেশে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় এবং নাগরিকত্বের সনদ ও পাসপোর্টও তার হাতে তুলে দেয়া হয়।
বাংলাদেশের বেশ কিছু জায়গা ভ্রমণ করেন বিশ্বখ্যাত এই বক্সার। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে যাওয়ার পর সেখানে একখণ্ড জমিও তাকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়। এছাড়া তিনি সুন্দরবন, সিলেটের চা বাগান ও রাঙ্গামাটি ভ্রমণ করেন।
এই কিংবদন্তি ২০১৬ সালের ৩ জুন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। বাংলাদেশের রূপ-সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি মন্তব্য করেন, ‘যদি আপনি স্বর্গে যেতে চান, তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশে আসুন।’
সর্বশেষ সোমবার (৩ জুলাই) ঢাকা সফর করেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ৩৬ বছর পর শিরোপা জেতাতে বড় অবদান রাখেন তিনি। কোয়ার্টার ফাইনাল ও ফাইনালে টাইব্রেকারে গুরুত্বপূর্ণ শট তো ঠেকিয়েছেনই, গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তেও গোল ঠেকিয়ে ত্রাতা হয়েছেন দলে। ফাইনালে শেষ মুহূর্তে ফ্রান্সের কোলো মুয়ানির শটটি অবিশ্বাস্যভাবে না ঠেকালে সেখানেই হয়ত শেষ হয়ে যেত আর্জেন্টিনার তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন।
সোমবার (৩ জুলাই) ভোর ৫টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন তিনি। এসময় তার সঙ্গী ছিলেন ব্যক্তিগত কয়েকজন স্টাফ। মার্তিনেজকে ঢাকায় আতিথেয়তা দেয় ডিজিটাল বিজনেস গ্রুপের প্রতিষ্ঠান নেক্সট ভেঞ্চার।
ঢাকা ছাড়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখাও করেছেন মার্তিনেজ। সাক্ষাতে নিজের স্বাক্ষরিত আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের জার্সি উপহার দিয়েছেন মার্তিনেজ।
মোহাম্মদ আলীর পর আরো অনেকে ঢাকা সফর করলেও উল্লেখযোগ্য ছিল ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী তারকা জিনেদিন জিদানের ঢাকা সফর। ২০০৬ সালে দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। সে বছরের ৭ ও ৮ নভেম্বর ঢাকায় অবস্থান করেন তিনি। জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপের বছরই বাংলাদেশে আগমন ঘটেছিল জিনেদিন জিদানের। নোবেলজয়ী ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে সে বছর বাংলাদেশে এসেছিলেন জিদান। এসে মাঠেও নেমেছিলেন বিশ্বজয়ী এই কিংবদন্তি।
ঢাকা আবাহনী লিমিটেড এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অনূর্ধ্ব ১৬ দলের একটি প্রীতি ম্যাচে নিজ থেকেই খেলার আগ্রহ প্রকাশ করেন জিদান। খেলার প্রথম ১৫ মিনিট মোহামেডানের জার্সি গায়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মাতান।
[caption id="attachment_444876" align="aligncenter" width="700"]
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী তারকা লিওনেল মেসি[/caption]
এরপর আরো ১৫ মিনিট ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের হয়ে মাঠ মাতান। তার আগমন উপলক্ষে বাফুফের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছিল নৈশ্যভোজেরও।
জিদান আসার পাঁচ বছর পর বাংলাদেশ সফরে আসেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি। তার সঙ্গে এসেছিল আর্জেন্টিনা ফুটবলদল। যা সবচেয়ে বেশি সাড়া জাগিয়েছিল। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়া আর্জেন্টিনা দল বাংলাদেশ সফরে আসে ২০১১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর।
পূর্ণ শক্তির সে দলে ছিলেন- লিওনেল মেসি, সার্জিও আগুয়েরো, ডি মারিয়া, সার্জিও রোমেরো ও গঞ্জালো হিগুয়েইন কিংবা হাভিয়ের মাচেরানোর মতো তারকারা।
আর্জেন্টিনা ঢাকায় নামার পরের দিন ৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল সুপার ঈগল খ্যাত নাইজেরিয়ার বিপক্ষে। সেদিন মেসির জাদুকরী ফুটবলের সাক্ষী হয় উপস্থিত হাজার হাজার দর্শক।
ম্যাচটিতে মেসির দল ৩-১ গোলে জয় পেয়েছিল। তখন বিশ্বকাপ জেতেনি মেসি। তবে কাতার বিশ্বকাপে এসে ধরা দেয় তার অধরা স্বপ্ন। এরপর গুঞ্জন উঠেছিল আবারো বাংলাদেশ সফরে আসবে মেসি। তবে নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি।
[caption id="attachment_444877" align="aligncenter" width="700"]
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ[/caption]
মেসিদের পর ঢাকায় পা রাখেন ব্রাজিলের সাবেক গোলরক্ষক জুলিও সিজার। মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) আন্তর্জাতিক ফুটবলে খ্যাতিমান ফুটবলারদের নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছিল।
তারই অংশ হিসেবে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি ঢাকায় পা রাখেন ব্রাজিলের হয়ে দুটি বিশ্বকাপ খেলা এই কিংবদন্তি। এরপর বাংলাদেশ সফরে আসেন ফ্রান্সের হয়ে ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী জিদানের সতীর্থ ক্রিশ্চিয়ান কারেম্বু।
২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপের আগে বিশ্বকাপের অন্যতম অফিশিয়াল পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান কোকাকোলা বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিল বিশ্বকাপের ট্রফিটি। সেই ট্রফির সঙ্গেই আসেন ফ্রান্সের জার্সিতে ৫৩ ম্যাচ খেলা এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার।



