টাইগারদের ইয়ো ইয়ো টেস্টে সন্তুষ্ট নিক লি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩৮ এএম

ছবি: সংগৃহীত
এশিয়া কাপকে সামনে রেখে ৩২ জনের স্কোয়াড নিয়ে গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে টাইগারদের ফিটনেস ক্যাম্প। এশিয়া কাপের জন্য চূড়ান্ত দল ঘোষণা না হওয়ায় এই ফিটনেস ক্যাম্পটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ক্রিকেটারদের দিতে হয়েছে ইয়ো ইয়ো টেস্ট। আগামী ৩০ আগস্ট শুরু হবে এশিয়া কাপের এবারের আসর। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় দিন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের প্রস্তুতি ক্যাম্পে ক্রিকেটারদের ফিটনেসের অবস্থা জানার জন্য গতকাল নেয়া হয়েছে ‘ইয়ো ইয়ো’ টেস্ট। জাতীয় দলের ট্রেনার নিক লির সমন্বয়ে তিন ধাপে হয়েছে এই প্রক্রিয়া। সকালে প্রথম ধাপে পরীক্ষা দেন মাহমুদউল্লাহ, রনি, নাজমুল হোসেন শান্ত, নাঈম শেখ, আফিফ হোসেন, সাইফ হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়রা। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে শেষ হয় তাদের এই ফিটনেস পরীক্ষা।
ক্লান্তিকর পরীক্ষা শেষে ঘেমে একাকার আফিফ ইনডোর থেকে বের হন খালি গায়ে। মাহমুদউল্লাহ, রনিরা ইনডোর থেকে বেরিয়ে মূল মাঠ পেরিয়ে আসেন মাঠে। যেখানে তাদের দেখা হয় পরের ধাপে টেস্ট দিতে যাওয়ার পথে থাকা মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন, শামীম হোসেনদের সঙ্গে।
মিরাজ-শামীমদের পরীক্ষার পর বিরতি ছিল ঘণ্টাখানেকের। সবশেষে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান মোস্তাফিজুর রহমান, জাকির হাসান, সৌম্য সরকার, সৈয়দ খালেদ আহমেদরা। মূল মাঠ পেরিয়ে ইনডোরে যাওয়ার আগে উইকেটের কাছে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে হাসি বিনিময় করতে দেখা যায় তাদের। পরে ঘণ্টাখানেকের ইয়ো ইয়ো পরীক্ষার পর অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই তাদের চেহারায় সেই হাসির জায়গা দখল করে নেয় ক্লান্তি ও ঘাম।
২০২১ সালে বিপ টেস্টের বদলে ইয়ো ইয়ো টেস্ট শুরু করে বাংলাদেশ। ইয়ো ইয়ো টেস্টে খেলোয়াড়দের গতি এবং সহনশীলতা পরীক্ষা করার জন্য ২ কিলোমিটার সময়ের সার্কিট ট্রায়াল নেয়া হয় (দ্রুত দৌড়)। গতকাল ফিটনেস পরীক্ষার জন্য ইয়ো ইয়ো স্কোরের মানদণ্ড ধরা হয়েছিল ১৮.৬। জানা গেছে, ফিটনেসের এ পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ১৯.৫ স্কোর উঠেছে, যা পেয়েছেন জাতীয় দলের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন। ১৯.৩ পেয়েছেন তরুণ পেসার তানজিম হাসান। বাকিরাও খুব একটা খারাপ করেননি। বেশির ভাগ ক্রিকেটারই নাকি ১৭ থেকে ১৮র মতো পেয়েছেন।
বিসিবির সূত্র জানিয়েছে, ক্রিকেটাররা কোনো অবস্থায় আছেন তা দেখতেই এই ফিটনেস পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় উতরাতে না পারলেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আগামী ৮ আগস্ট টাইগারদের স্কিল ক্যাম্প শুরুর আগেই এশিয়া কাপের জন্য ২১-২২ জনের প্রাথমিক দল ঘোষণা করবেন নির্বাচকরা।
দুই দফা ফিটনেস পরীক্ষার পর গতকাল ট্রেনার নিক লি জানান, ‘সবার (টেস্টের) পারফরম্যান্স প্রায় একই রকম ছিল। এখানে এমন ক্রিকেটারও ছিল, যারা সা¤প্রতিক সময়ে জাতীয় দলের আশপাশে ছিল না অথবা চোটে ছিল বা দলের বাইরে ছিল। তাদের কিছুটা কম ছিল। তবে সব মিলিয়ে কেউই কম গতিতে ছিল না। সবাই মোটামুটি একই ব্রাকেটে ছিল।’
নিক লি বলেন, টেস্টিংয়ের পারফরম্যান্স সাইডে নজর দিয়েছি। যেখানে গতি, পাওয়ার, দিক পরিবর্তন, কিছু বডি কম্পোজিশনের পর ইনজার্ন টেস্ট দিয়ে শেষ করেছি। আবহাওয়ার কারণে সুযোগ-সুবিধা আমাদের হাতের বাইরে চলে যাওয়ায় ইয়ো ইয়ো টেস্ট ব্যবহার করেছি। যেখানে বিরতি দিয়ে রিপিট শাটল রাউন্ড হয়েছে। টেস্ট যত সামনে এগিয়েছে, তত দ্রুত করতে হয়েছে।
‘গরম ও কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখে এবং তাদের গত কয়েক সপ্তাহ বিরতি ছিল, সব কিছু মিলিয়ে আমি তাদের (ইয়ো ইয়ো টেস্টের) ফলে খুশি। ক্যাম্প যতটা সামনে এগোবে, শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগে আমরা হয়তো তাদের উন্নতি দেখার জন্য আবার টেস্ট করব। তো এই তো, গত কয়েক দিন এসবই করছি আমরা। ’
তিনি বলেন, ‘তথ্য-উপাত্তের দিকে না তাকিয়ে, আমার মাথায় যা আছে তা থেকে বলতে পারি, সবার (টেস্টের) পারফরম্যান্স প্রায় একই রকম ছিল। এখানে এমন ক্রিকেটারও ছিল যারা সা¤প্রতিক সময়ে জাতীয় দলের আশপাশে ছিল না অথবা ইনজুরিতে ছিল অথবা দলের বাইরে ছিল। তাদের কিছুটা কম ছিল। তবে সব মিলিয়ে কেউই কম গতিতে ছিল না। সবাই মোটামুটি একই ব্রাকেটে ছিল। ’
সামনে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্ট রয়েছে। সবমিলিয়ে টানা কয়েক মাস খেলার ভেতরে থাকতে হবে ক্রিকেটারদের। এর আগে এই টেস্টকে ফিটনেস পরীক্ষার একটা মঞ্চ হিসেবেই দেখা হয়েছে, এমন জানিয়েছেন নিক লি।
দল নির্বাচনে যে ইয়ো ইয়ো টেস্টের ফলের কোনো প্রভাব থাকবে না, তা আগেই বলেছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন। এবার একই কথা মনে করিয়ে দিয়ে এই পরীক্ষার মূল লক্ষ্য তুলে ধরলেন জাতীয় দলের ট্রেনার।
এই পরীক্ষা আসলে দলে সুযোগ পাওয়া বা বাদ পড়ার কোনো অংশ নয়। এটি স্রেফ আমার, ফিজিও, মেডিকেল টিম, নির্বাচক, প্রধান কোচের বোঝার জন্য যে ক্রিকেটাররা কোন অবস্থায় আছে এবং আগামী দুই মাসের মধ্যে তাদের নিয়ে কেমন কাজ করতে হবে।
কারো হয়তো অনেক ভালো স্কিল থাকতে পারে, তবে ফিটনেসের দিক থেকে কিছু ঘাটতি থাকতে পারে। এক্ষেত্রে তারা স্কিল ট্রেনিং কিছুটা কমিয়ে ফিটনেসের দিকে মনোযোগ দিতে পারে। যারা শারীরিক দিক থেকে অনেক ফিট, তারা বেশি স্কিলের কাজ করতে পারে। এটি মূলত আমাদের তথ্য দেবে যে, আমরা আগামী ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের অনুশীলন কীভাবে সাজাব।