ক্যারিবীয় ঝড়ে নাকাল পাকিস্তান

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ জুন ২০১৯, ১১:৫৩ এএম

নিজেদের শেষ ১০ ম্যাচের সব কটিতেই হেরে যাওয়া পাকিস্তানকে এবারের বিশ্বকাপের ফেভারিটের তালিকায় রাখেনি কেউই। চার-ছক্কার ঝলক দেখানো পাওয়ার ক্রিকেট খেলা উইন্ডিজের নামের পাশেও নেই ফেভারিটের তকমা। তবে সাম্প্রতিক পারফরমেন্সের বিচারে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগে পাকিস্তানের চেয়ে কিছুটা হলেও ফেভারিট ছিল উইন্ডিজ। কারণটা সহজ, টানা হারতে থাকা সরফরাজ আহমেদের দলের ওপর চাপ। তবে সেই চাপ কাটিয়ে বিশ্বকাপে ঠিকই জ্বলে উঠবে ১৯৯২ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা- এমনটিই প্রত্যাশা ছিল পাকিস্তান সমর্থকদের। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। মিকি আর্থারের শিষ্যরা বেরোতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। গতকাল দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উইন্ডিজের বিপক্ষে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেই দ্বাদশ বিশ্বকাপে পথচলা শুরু হয়েছে পাকিস্তানের।
বিধ্বংসী বোলিংয়ে পাকিস্তানকে মাত্র ১০৫ রানের মধ্যে আটকে রেখে ম্যাচ জয়ের কাজটা আগেই সেরে রেখেছিলেন ক্যারিবীয় পেসাররা। বোলারদের দেখানো পথে হাঁটেন জেসন হোল্ডারের দলের ব্যাটসম্যানরাও। বিশেষ করে ক্রিস গেইল ও নিকোলাস পুরান। নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে আসা গেইলের ৩৪ বলে ৬ চার ও ৩ ছয়ে ৫০ এবং পুরানের ১৯ বলে অপরাজিত ৩৪ রানের ইনিংসের সুবাদে অনায়াসেই ম্যাচ জিতে নেয় উইন্ডিজ। বল হাতে মাত্র ২৭ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়া ক্যারিবীয় পেসার ওশ্যান থমাসের হাতে উঠে ম্যাচসেরার পুরস্কার।
নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজ স্টেডিয়াম মানেই যেন ব্যাটসম্যানদের রাজত্ব। অথচ গতকাল টস জিতে পাকিস্তানকে আগে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানিয়ে সেই মাঠে দাপট দেখালেন উইন্ডিজের বোলাররা। অবশ্য ট্রেন্ট ব্রিজের উইকেট এ দিন পেসারদের অনুক‚লেই ছিল। এটা উপলব্ধি করেই তো টস জিতে আগে বোলিংয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করেননি জেসন হোল্ডার।
ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা দাঁড়াতেই পারেননি উইন্ডিজের পেসারদের গতির সামনে। শর্ট বলে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতার কথা কারো কাছেই অজানা নয়। পেসবান্ধব উইকেটে প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের সেই দুর্বল দিকটাকেই কাজে লাগান ওশ্যান থমাস, আন্দ্রে রাসেল ও জেসন হোল্ডাররা। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে ইমাম উল হককে শাই হোপের ক্যাচ বানিয়ে পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন শেলডন কটরেল। স্টাম্পের বাইরের বল কাভার ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন ইমাম। ষষ্ঠ ওভারে আন্ড্রে রাসেলের বাউন্সার ফখর জামানের হেলমেটের গ্রিলে লেগে ভেঙে দেয় স্টাম্প। বিপর্যয়ের মুখে দলের দায়িত্ব নিতে পারেননি বাবর আজমও। ২২ রান করেই থমাসের বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। এরপর অধিনায়ক সরফরাজকে সাজঘরে ফেরান হোল্ডার। লড়াই চালানোর চেষ্টা করেছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ। তিনিও পরাস্ত হন থমাসের বাউন্সারে। এক পর্যায়ে একশ রানের নিচেই অলআউট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা জাগে পাকিস্তানের। সেটা হয়নি ওয়াহাব রিয়াজের কল্যাণে। শেষ দিকে ১৮ রান আসে তার ব্যাট থেকে। তাকে বোল্ড করে সরফরাজ আহমেদের দলের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন থমাস। পাকিস্তানের সংগ্রহ মাত্র ১০৫ রান।
বিশ্বকাপে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে এটিই পাকিস্তানের সর্বনিম্ন সংগ্রহ। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে করা ১৬০ রান ছিল আগের সর্বনিম্ন। এ দিন পাকিস্তান অলআউট হয় মাত্র ২১ ওভার ৪ বলে। যা বিশ্বকাপে তাদের সবচেয়ে কম ওভারের মধ্যে অলআউট হওয়ার রেকর্ড। থমাসের ৪ উইকেটের পাশাপাশি গতকালের ম্যাচে উইন্ডিজের হয়ে হোল্ডার ৩টি, রাসেল ২টি ও কটরেল ১টি উইকেট নেন।
মোহাম্মদ আমিরকে পাকিস্তানের বিশ^কাপ স্কোয়াডে রাখা নিয়ে কম নাটকীয়তা হয়নি। ছন্দে নেই এই অজুহাতে তাকে স্কোয়াডের বাইরে রাখার দাবি তুলেছিলেন অনেকে। এমনকি তার প্রথম ম্যাচের একাদশে থাকা নিয়েও ছিল অনিশ্চয়তা। কিন্তু আমির গতকালের ম্যাচে খেলেন এবং বুঝিয়ে দেন যে কেন তাকে বড় ম্যাচ ও টুর্নামেন্টের বোলার বলা হয়। জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে ৩ উইকেট হারায় উইন্ডিজ। ৩টি উইকেটই নেন আমির।