ইতিহাদে সিটির জালে ৪ গোল, জিতলো টটেনহ্যাম

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৭ এএম

ছবি: সংগৃহীত
জন্মদিনে মাঠে নেমে বল পায়ে দ্যুতি ছড়ালেন জেমস ম্যাডিসন। ম্যাচের শুরুর দিকে সাত মিনিটে দুবার বল জালে পাঠিয়ে প্রতিপক্ষকে হতভম্ব করে দিলেন তিনি। নিজেদের খুঁজে ফেরা ম্যানচেস্টার সিটি মাঝেমধ্যে ভালো কয়েকটি আক্রমণ করলেও, তেমন কোনো আশা কখনোই জাগাতে পারেনি তারা। লিগ চ্যাম্পিয়নদেরকে তাদেরই মাঠে বিধ্বস্ত করল টটেনহ্যাম হটস্পার।
ইতিহাদ স্টেডিয়ামে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-০ গোলে জিতেছে টটেনহ্যাম। ম্যাডিসনের জোড়া গোলের পর সিটির জালে তৃতীয় গোলটি করেন পেদ্রো পোরো। আর শেষ সময়ে সিটির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন ব্রেনান জনসন। ইতিহাদে সিটির এটাই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পরাজয়। ঘরের মাঠে এর আগে সবশেষ তারা চার বা তার চেয়ে বেশি গোল খেয়ে হেরেছিল ২০০৩ সালে, আর্সেনালের বিপক্ষে; তবে সেটা ছিল তাদের তখনকার ঘরের মাঠ মেইন রোডে।
ইংলিশ ফুটবলের সবশেষ ৬৮ বছরের ইতিহাসে শীর্ষ লিগের শিরোপাধারী প্রথম ক্লাব হিসেবে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচ হারল সিটি। এর আগে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল চেলসির, ১৯৫৬ সালে। সেবার তারা ১৬তম স্থানে থেকে লিগ শেষ করেছিল। অপরাজেয় যাত্রায় এগিয়ে চলার পথে সিটির হঠাৎ ছন্দপতন হয় গত ৩০ অক্টোবর; এই টটেনহ্যামের বিপক্ষেই হেরে লিগ কাপ থেকে বিদায় নেয় পেপ গুয়ার্দিওলার দল। এরপর প্রিমিয়ার লিগে টানা দুই ম্যাচে বোর্নমাউথ ও ব্রাইটনের বিপক্ষে হেরে বসে তারা এবং এর মাঝে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে স্পোর্তিংয়ের বিপক্ষে হারের স্বাদ পায় দলটি। সিটির আগের সবগুলো পরাজয়ই ছিল প্রতিপক্ষের মাঠে। এবার সেই স্বাদ তাদের জুটল ঘরের মাঠে, গ্যালারি ভরা সমর্থকদের সামনে।
এর আগে সিটি সবশেষ টানা পাঁচ ম্যাচ হেরেছিল ২০০৬ সালে, সেবার টানা ছয় ম্যাচ হেরেছিল তারা। আর এবারের পরাজয়ে ঘরের মাঠে সিটির সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ৫২ ম্যাচের অপরাজেয় যাত্রাও (৪৩ জয় ও ৯ ড্র) শেষ হলো। এর আগে নিজেদের আঙিনায় তারা সবশেষ হেরেছিল ২০২২ সালের ১২ নভেম্বর, ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে। কোচিং ক্যারিয়ারে গুয়ার্দিওলা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হেরেছেন টটেনহ্যামের বিপক্ষে, এই নিয়ে ৯ বার। ব্যর্থতার বলয় থেকে বের হওয়ার অভিযানে নেমে শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে সিটি। ত্রয়োদশ মিনিটে ডান দিক থেকে দেইয়ান কুলুসেভস্কির দারুণ ক্রস ছোট বক্সের মুখে পেয়ে ভলিতে জালে পাঠান ম্যাডিসন।
সাত মিনিট পর নিজেদের সীমানায় পজেশন হারানোর ফলশ্রুতিতে দ্বিতীয় গোল হজম করে সিটি। আলগা বল ধরে ম্যাডিসন খুঁজে নেন সন হিউং-মিনকে এবং ঢুকে পড়েন ডি-বক্সে। এরপর ফিরতি পাস ধরে একজনের বাধা এড়িয়ে কোনাকুনি শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ইংলিশ মিডফিল্ডার। দ্বিতীয় গোল হজমের দুই মিনিট পরই ব্যবধান কমানোর দারুণ একটি সুযোগ পান আর্লিং হলান্ড। কিন্তু ইয়োশকো ভার্দিওলের পাস বক্সে পেয়ে নরওয়ের তারকার শট ক্রসবারের একটু ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের সপ্তম মিনিটে প্রতি-আক্রমণে দোমিনিক সোলাঙ্কির পাস ধরে বক্সের ডান দিক থেকে কোনাকুনি শটে স্কোরলাইন ৩-০ করেন পেদ্রো পোরো। এতে সিটির ঘুরে দাঁড়ানোর আশা ফিকে হয়ে যায়। ৭৭ ও ৭৯তম মিনিটে পরিষ্কার দুটি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি সিটি। প্রথমে ইলকাই গিনদোয়ান ও পরে হলান্ডের প্রায় একইরকম দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া শট রুখে দেন গোলরক্ষক।
যোগ করা সময়ের শেষ দিকে জনসনের গোলে সিটির পরাজয়ের ব্যবধান আরও বড় হয়। বাঁ দিক থেকে টিমো ভেরনারের কোনাকুনি শট দূরের পোস্ট ঘেঁষে হয়তো বেরিয়ে যেত, শেষ মুহূর্তে স্লাইড করে টোকায় বল জালে পাঠান ওয়েলস ফরোয়ার্ড। লিগে টানা তৃতীয় হারের পর পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান থেকে আরও পিছিয়ে পড়ার শঙ্কায় গুয়ার্দিওলার দল। ১২ ম্যাচে সাত জয় ও দুই ড্রয়ে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে তারা। তবে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে চূড়ায় থাকা লিভারপুল একটি ম্যাচ কম খেলেছে। সিটির সমান ১২ ম্যাচ খেলে সমান ২২ করে পয়েন্ট নিয়ে পরের তিনটি স্থানে আছে চেলসি, আর্সেনাল ও ব্রাইটন। ১৯ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছে টটেনহ্যাম।