হতশ্রী ব্যাটিংয়ের পর বিবর্ণ বোলিংয়ে হারলো বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৯ এএম
-6758a26831c49.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে টানা দুই ম্যাচ হারায় এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হেরেছে সফরকারী বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ এড়াতে আগামী বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হবে টাইগাররা।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সেন্ট কিটসের বাসেটেরের ওয়ার্নার পার্কে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৫ দশমিক ৫ ওভারে ২২৭ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে ৭৯ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর করে ক্যারিবিয়ানরা।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ব্র্যান্ডন কিং ও এভিন লুইসের ব্যাটে দারুণ সূচনা পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২২৭ রান তাড়ায় দুই ওপেনার স্বাগতিকদের ১১৪ বলে শতরানের জুটি এনে দেন। এই জুটি গড়ার পথেই সাবলীল ব্যাটিংয়ে এগোনো কিং ৫২ বলে পঞ্চাশ ছুয়ে ফেলেন।
আরেক ওপেনার লুইসও হাফ-সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে ছিলেন। তবে তাকে ফিরিয়ে ওপেনিং জুটি ভাঙেন রিশাদ। ৪৯ রানে ফেরেন এভিন লুইস।
বোলারের মাথার উপর দিয়ে বল পাঠিয়ে পঞ্চাশ ছুঁতে চেয়েছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। কিন্তু ঠিকমতো টাইমিং হয়নি। সহজেই ফিরতি ক্যাচ নেন রিশাদ। এতে ভাঙে তাদের ১০৯ রানের জুটি।
লুইসের বিদায়ের পর ক্যারিবিয়ানদের রানের গতি আরো বেড়ে যায়। ক্রিজে এসেই শট খেলতে শুরু করেন কেসি কার্টি। অন্যপ্রান্তে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছিলেন কিং। মাত্র ৩২ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলে তাদের জুটি।
তবে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাওয়া ব্র্যান্ডন কিংকে থামান নাহিদ রানা। এই পেসারের ফুলপিচড ডেলিভারিতে ফেরেন এই ওপেনার। ৭৬ বলে ৩ ছক্কা ও ৮ চারে ৮২ রান করে ফেরেন কিং।
এরপর পাঁচে নেমে দ্রুতই ম্যাচ শেষ করেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শারফেন রাদারফোর্ড। খেলেন মোটে ১৫ বল, যার শেষ তিন বলের মধ্যে শরীফুল ইসলামকে দুই ছক্কা মেরে ৩৭ ওভারের মধ্যেই ম্যাচ শেষ করে দেন।
২২৮ রানের লক্ষ্য ৩৬ দশমিক ৫ ওভারেই পেরিয়ে গেল স্বাগতিকরা। বল বাকি থাকল ৭৯টি, হাতে উইকেট ৭টি।
এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজও জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০১৪ সালের পর এই প্রথম ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশকে হারাল ক্যারিবীয়রা।
এর আগে, টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দেখেশুনেই শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও সৌম্য সরকার। অভিষিক্ত মারকুইনো মাইন্ডলির করা তৃতীয় ওভারে চড়াও হয়েছিলেন তানজিদ। দুই ছক্কা আর এক চারে ১৮ রান নেন এই ওপেনার।
কিন্তু দারুণ শুরুর পরের ওভারেই ছন্দপতন। জেইডেন সিলসকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড-অনে ক্যাচ তুলে দেন সৌম্য। সহজ ক্যাচ নেন গুড়াকেশ মোতি। ফেরার আগে ৫ বলে ২ রান করেন এই ওপেনার।
সৌম্যর বিদায়ের পর লিটনকে সঙ্গে নিয়ে আগ্রাসী ব্যাটিং চালিয়ে যান তামিম। তবে অপরপ্রান্তে রান বের করতে পারছিলেন না লিটন। ধৈর্যও হারিয়ে ফেলেছিলেন। বাউন্সার পেয়েই পুল করতে গিয়েছিলেন। তবে ঠিকমতো ব্যাটে পাননি। বল ব্যাটের মাথায় লেগে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে এভিন লুইসের মুঠোবন্দি। ১৯ বলে ৪ রান করে ফেরেন উইকেটকিপার এই ব্যাটার।
তার বিদায়ে পর ক্রিজে এসেই সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ৫ বলে মাত্র ১ রান করে আউট হন তিনি।
মিরাজের পর সাজঘরের পথ ধরেন তামিমও। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে রোস্টন চেজকে ক্যাচ শিখিয়ে ৩৩ বলে ৪৬ রান করে আউট হন এই ওপেনার।
পঞ্চম উইকেটে আফিফ ও রিয়াদ মিলে বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে বাংলাদেশের রান ১০০ ছুঁতেই ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ এক শট খেলে আউট আফিফ। গুড়াকেশ মোতিকে স্লগ সুইপ করতে গিয়েছিলেন বাঁ-হাতি এই ব্যাটার। মিড অফ ও লং অফের মাঝ বরাবর দৌড়ে সহজ ক্যাচ নেন শেরফান রাদারফোর্ড।
জাকেরও উইকেটে থিতু হতে পারেননি। ৯ বলে মাত্র ৩ রান করে বিপর্যয়ের ষোলকলা পূর্ণ করে ফেরেন উইকেটকিপার এই ব্যাটার। এরপর ৮ বল খেলে কোনো রান করতে পারেননি রিশাদ।
জাকের ও রিশাদের বিদায়ের পর বিপর্যয়ে আরো একবার ক্রাইসিসম্যান হয়ে ওঠার সুযোগ আসে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সামনে। দারুণভাবেই সেই সুযোগটা নেন মিস্টার সাইলেন্টকিলার। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে হাফ-সেঞ্চুরিও তুলে নেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। ৮৪ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। তবে ক্যারিয়ারের ৩১তম হাফ-সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ ক্রিজে থিতু হতে পারেননি তিনি। ৪ ছক্কা ও ২ চারে ৯২ বলে ৬২ রানে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ।
এর আগে, ধ্বংসস্তূত থেকে ৯২ রানের জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ ও তানজিম। তবে রোস্টন চেজকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৬২ বলে ৪৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে ফেরেন এই পেস অলরাউন্ডার। ওয়ানডেতে ৮ম উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড রানের জুটি এটি।
শেষ উইকেটে ১০ বলে ১৮ রানের জুটি গড়েন শরীফুল ও নাহিদ রানা। তবে শরীফুল আউট হলে ৪৫ দশমিক ৫ ওভারে ২২৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জায়ডেন সিয়েলস চারটি উইকেট নেন।