আফগানিস্তান বয়কটের ডাক ব্রিটিশদের, জবাব দিলো ইসিবি

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৪ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগে ইংল্যান্ডে আফগানিস্তানকে বয়কটের ডাক উঠেছে। ব্রিটেনের অন্তত ১৬০ জন রাজনৈতিক নেতা এই ডাক দিয়েছেন। মূলত তালেবান সরকারের ক্ষমতায় নারীদের স্বাধীনতা খর্ব করাসহ বেশকিছু বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে। তাদের মধ্যে নাইজেল ফারাজ, জেরেমি করবিন, লর্ড কিনকের মতো নেতারা রয়েছেন।
এবার বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাল ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। বয়কটের এই ডাক প্রত্যাখ্যান করেছে ইসিবি।
সূচি অনুযায়ী, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার কথা ইংল্যান্ডের। সেই ম্যাচ জস বাটলাররা না খেললে আয়োজক পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।
এদিকে বয়কটের দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও আফগানিস্তানের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ না খেলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ইসিবির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গোল্ড। একইসঙ্গে নারীদের মানবাধিকারসহ সব বিষয় নিয়ে আফগান সরকারের সঙ্গে ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন ইসিবি প্রধান গোল্ড।
তার ভাষ্যমতে, ‘ইসিবি শক্তভাবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের অধীনে নারী ও মেয়েদের সঙ্গে বিরূপ আচরণের বিরোধীতা করে আসছে।’
গোল্ড আরো বলেন, ‘আইসিসির সংবিধানেই বলা আছে যে প্রতিটি সদস্য দেশ নারী ক্রিকেটের সম্প্রসারণ ও উন্নতির প্রতিশ্রুতি দেবে। সেটি বিবেচনায় নিয়েই ইসিবি আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বি-পাক্ষিক ক্রিকেট ম্যাচ থেকে বিরত থাকে। ইসিবি তাদের এই পদক্ষেপ সামনেও অব্যাহত রাখবে। কোনো সদস্য দেশের একতরফা আচরণের চেয়ে আইসিসির দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বেশি প্রভাবশালী। একইসঙ্গে সারাবিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিও আমরা সম্মান জানাতে চাই।’
বয়কটের দাবি নিয়ে ইসিবি প্রধান বলেন, ‘আমরা আফগান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ ও বয়কটের দাবিও বুঝতে পারছি। কিন্তু ক্রিকেট ম্যাচ বয়কট তালেবান সরকারের স্বাধীনতা দমন ও আফগান সমাজকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার সেই চেষ্টাকে অসাবধানতাবশত সমর্থন দিয়ে ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে ক্রিকেটই হতে পারে আফগান সমাজে এখনো বেঁচে থাকা আশা ও ইতিবাচকতা টিকিয়ে রাখার উৎস। ইসিবি আফগান নারীদের প্রতি বিরূপ আচরণের সমাধান পেতে চায়, একইসঙ্গে যাতে আফগান মানুষের ওপরও কোনো খারাপ প্রভাব না পড়ে।’
ইসিবির প্রধান রিচার্ড গোল্ড যোগ করেন, ‘আমরা বিষয়গুলো নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকার, আইসিসি, অন্যান্য ক্রিকেট বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা চালিয়ে যাব। যাতে আলোচনায় সম্ভাব্য সকল পরিবর্তনযোগ্য বিষয় উঠে আসতে পারে।’
এর আগে, ইসিবির উদ্দেশে ব্রিটেনের রাজনীতিবিদরা বলেন, ‘তালেবানের অধীনে আফগানিস্তানে নারীদের প্রতি যে ভয়াবহ আচরণ করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার জন্য আমরা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট কর্তাদের আহ্বান জানাচ্ছি। ইসিবিকে আমাদের অনুরোধ, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আসন্ন ম্যাচটি বয়কট করা হোক। এই ধরনের জঘন্য আচরণ বরদাস্ত করা যায় না। আফগানিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের অবশ্যই লিঙ্গবৈষম্য রুখে দাঁড়ানো উচিত। আফগান নারীদের সহমর্মিতার বার্তা দেওয়ার অনুরোধ করছি, ইসিবিকে। আশা করি, আফগান নারীদের আমরা নিরাশ করব না।’
উল্লেখ্য, নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথিত অভিযোগে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বয়কট করেছে অস্ট্রেলিয়া।
এদিকে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৯ মার্চ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর্দা নামবে। ১৯ ফেব্রুয়ারি আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে আয়োজক পাকিস্তান। এ ছাড়া চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার হাইভোল্টেজ ম্যাচটি ২৩ ফেব্রুয়ারি মাঠে গড়াবে। নিরপেক্ষ ভেন্যু দুবাইয়ে হবে এই ম্যাচটি। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে গ্রুপ ‘এ’তে আছে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। ‘বি’ গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তান।