দুর্বার গতিতে ছুটছে রংপুর, সাফল্যের রহস্য জানালেন সোহান

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
অধিনায়কের কাজকে সহজ করার জন্য দল হিসেবে খেলার উপর জোর দিয়েছেন চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) রংপুর রাইডার্সকে নেতৃত্ব দেওয়া নুরুল হাসান সোহান। মাঠে দলকে দারুণভাবে নেতৃত্ব দেওয়ায় ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছেন সোহান।
বার্তাসংস্থা বাসসের সঙ্গে আলাপকালে সোহান বলেন, ‘আমি ভাগ্যবান, এমন একটি দলকে আমি নেতৃত্ব দিচ্ছি, যারা দারুণ একটি দল হিসেবে গড়ে উঠেছে। দলে কতজন শীর্ষ খেলোয়াড় বা তারকা খেলোয়াড় আছে, সেটি বড় নয়। দল হিসেবে খেলাটাই গুরুত্বপূর্ণ। এটাই সাফল্যের মূলমন্ত্র।’
তিনি আরো বলেন, ‘ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের চেয়ে দল হিসেবে খেলাকে আমি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। উত্থান-পতন থাকবেই, ১১ জন খেলোয়াড়ই যে একসঙ্গে ভালো ক্রিকেট খেলবে, তেমনটা নয়। আমরা যদি দল হিসেবে থাকতে পারি, তাহলে অনেক দিক থেকেই উপকৃত হবো।’
সোহানের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন রংপুরের প্রধান কোচ মিকি আর্থার এবং সহকারী কোচ মোহাম্মদ আশরাফুল।
মাঠে ও মাঠের বাইরের খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করায় সোহানকে বৈচিত্র্যময় দলনেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন দু’জনে।
গত ডিসেম্বরে সোহানের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গায়ানায় গ্লোবাল সুপার লিগে (জিএসএল) চ্যাম্পিয়ন হয় রংপুর রাইডার্স। ওই আসরে বিভিন্ন দেশের ৫টি ফ্র্যাঞ্চাইজি অংশ নিয়েছিল। প্রথম দুই ম্যাচ হারলেও শেষপর্যন্ত ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া দল ভিক্টোরিয়াকে হারিয়ে শিরোপা জিতে রংপুর।
দক্ষতার সাথে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে এবারের বিপিএলের শিরোপা জয়ে রংপুরকে ফেভারিট করে তুলেছেন সোহান। এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচের সবকটিতেই জিতেছে তার দল।
রংপুরের খেলোয়াড়, টিম ম্যানেজমেন্ট ও মালিক পক্ষের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন বলে জানান সোহান, ‘আমাদের জন্য টুর্নামেন্ট ভালো যাচ্ছে। এই মুহূর্তে আমরা টুর্নামেন্টের মাঝপথে আছি। গুরুত্বপূর্ণ হলো, ফোকাস ধরে রাখা।’
তিনি আরো বলেন, ‘যখন ১৪ বা ১৫ জন খেলোয়াড় তার দল নিয়ে চিন্তা করে এবং একই লক্ষ্যে কাজ করে, তখন অধিনায়কত্ব সহজ হয়ে যায়। সবাই যখন দলের কথা চিন্তা করে এবং দায়িত্ব নেয় তখন অধিনায়কের আসলে কিছুই করার থাকে না।’
সোহান বলেন, ‘এ কারণে আমি যেকোনো দলের অধিনায়কের দায়িত্ব নেওয়ার পর এমন খেলোয়াড়দের দলে নেওয়া নিশ্চিত করি, যারা শুধু দলের কথাই চিন্তা করবে। আমি আগেও বলেছি, বড় নামের চেয়ে আমি এমন খেলোয়াড়কে পছন্দ করি যে শুধু দলের হয়ে খেলে থাকে। কারণ, সবাই যখন দলের কথা চিন্তা করে আসলে তখন সে অন্যের দায়িত্ব নিতে পারে। সবাই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এটা গুরুত্বপূর্ণ নয় আপনাকে সবসময় বড় ইনিংস খেলতে হবে। কখনও কখনও মাত্র ২০ রানও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কখনও কখনও একটি ক্যাচ গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কখনও কখনও একটি রান বাঁচানো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এটাকে আমরা দলের জন্য অবদান বলে থাকি। যখন সবাই এমনটাই ভাবে তখন অধিনায়কত্ব সহজ হয়ে যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি ভাগ্যবান যে, আমাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি খুবই চমৎকার। তারা আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে এবং সম্ভাব্য সব উপায়ে সাহায্য করেছে। প্রধান কোচ মিকি আর্থার এবং সহকারী কোচ মোহাম্মদ আশরাফুলও অনেক সাহায্য করেছে। রংপুর দলে আমরা একটি সুখী পরিবার পেয়েছি।’
বিপিএলে যুক্ত হবার পর থেকেই ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে দুর্দান্ত করছে রংপুর এবং ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী দল গঠনে শিরোপা জয়ের সামর্থ্য রাখে তারা। কিন্তু এখন অবধি মাত্র একটি বিপিএল ট্রফি জিতেছে রংপুর। গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করার পরও গত দুই মৌসুমে প্লে-অফ থেকেই বিদায় নিতে হয় তাদের।
সোহান জানান, প্লে-অফ থেকে বিদায় নেওয়ার যে সমস্যাটি আছে, সেটি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে, ‘গত দুই বছরে আমাদের শক্তিশালী দল ছিল এবং তারপরও আমরা ট্রফি জিততে পারিনি। নক-আউট পর্ব থেকে বিদায়ের আগে আমরা গ্রুপ পর্বে ভালো খেলেছিলাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ড্রেসিংরুমে এই বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলেছি। সব সতীর্থদের বলেছি আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। এই মৌসুমেও আমরা গ্রুপ পর্বে ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমি তাদের বলেছি আমাদের মূল লক্ষ্য নক-আউট পর্বে ভালো খেলা। তাই আমাদের এই ধারাবাহিকতা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ধরে রাখতে হবে।’
গত দুই মৌসুমে, প্লে-অফে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিদেশী খেলোয়াড়দের পায়নি রংপুর। তাই প্লে-অফ থেকে বিদায় নেওয়ার এটিই অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করেন সোহান, ‘সমস্যা হলো, গত দুই মৌসুমের শেষ পর্যন্ত আমরা একই দল নিয়ে খেলতে পারিনি। গ্রুপ পর্বে আমাদের একটি নির্দিষ্ট দল ছিল, কিন্তু আমরা যখন প্লে-অফ শুরু করি তখন কিছু খেলোয়াড়ের অন্য প্রতিশ্রুতি থাকায় দল ছেড়ে চলে যায়। তারা চলে যাওয়ায় দলের মোমেন্টাম নষ্ট হয়।’
তবে এ বছর রংপুর একই দল নিয়ে পুরো টুর্নামেন্ট খেলবে বলে জানিয়েছেন সোহান।
তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরে যা ঘটেছে, এ বছর তা হবে না। এ বছরে আমরা শেষ পর্যন্ত সব বিদেশি খেলোয়াড়দের পাবো। এই মৌসুমে আমরা আরো ভালো কিছুর আশা করতে পারি।’