জুলাই আন্দোলনে উজ্জীবিত হয়ে নতুন দেশ গঠনে গুরুত্ব দিচ্ছেন সোহান

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:০৫ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে উজ্জীবিত হয়ে নতুন দেশ গঠনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক-ব্যটার নুরুল হাসান সোহান। তারকা ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বপ্রথম সক্রিয়ভাবে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন সোহান। এই আন্দোলনই পরবর্তীতে স্বৈরাচার শাসক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে একটি বৈষম্যহীন দেশ গঠনের সুযোগ করে দেয়। আন্দোলন থেকে যা অর্জন হয়েছে, তা যেন নষ্ট না হয় সেজন্য জনগণকে সচেতন হবার আহ্বান সোহানের।
বার্তাসংস্থা বাসসের সাথে আলাপকালে সোহান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হলেও সর্বস্তরের মানুষ এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল। আমি মনে করি এখনো কিছু লোক আছে, যারা আমাদের অর্জিত সাফল্যকে নষ্ট করার চেষ্টা করবে। তাদের মোকাবিলা করতে সমাজের সর্বস্তরের জনগণের সচেতন হওয়া উচিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারা সুবিধা নিলে দেশ আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। সবারই কঠোর হওয়া উচিত। তাদের প্রতিহত করতে সবার সাহায্য করতে হবে সরকারকে। একটি নতুন দেশ তৈরি করা সহজ নয়। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সাধারণ মানুষের উচিত গভীরভাবে বিষয়টি চিন্তা করা এবং তাদের অবস্থান থেকে নতুন দেশ গড়তে সরকারকে সহযোগিতা করা।’
সোহানের মতে, যারা আন্দোলনে জীবন উৎস্বর্গ করেছেন এবং আহত হয়েছেন তাদেরকে সহযোগিতার জন্য সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দেশ থেকে স্বৈরাচারী শাসককে উৎখাত করতে যারা আত্মত্যাগ করেছে, আমি নিশ্চিত তাদের জন্য সরকার সম্ভাব্য সবকিছু করবে। আমি আগে বলেছি, সেসব বিষয় বাস্তবায়িত করার জন্য সময় দিতে হবে। আমি মনে করি তারা তাদের সেরাটা করছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে।’
নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতি থেকেই জুলাই গণ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন বলে জানান সোহান, ‘যখন আন্দোলন শুরু হয় আমি অস্ত্রোপচারের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় ছিলাম। বিসিবি আমাকে পাঠিয়েছিল এবং যেহেতু আমি বিসিবির চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় ছিলাম, তাই এই বিষয়ে কিছু বলা খুব কঠিন ছিল। কিন্তু সত্যি কথা বলতে হত্যাকাণ্ড এবং নৃশংসতা দেখে আমার খারাপ লাগছিল।’
সোহান বলেন, ‘আমি কোন নির্দিষ্ট দলের সমর্থক নই। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে আমার ভেতরের অনুভূতি বলেছে আমার এগিয়ে যাওয়া উচিত। আমি এ বিষয়ে কিছু পোস্ট করলে কি হবে, তা নিয়ে ভাবছিলাম। জাতীয় দলে নিজের জায়গা নিয়ে ভাবছিলাম। এমন অনেক নজির ছিল যে আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে আমি এমন নই, এসব সমস্যা দেখার পর নিজেকে আটকে রাখবো।’
সোহান জানান, অস্ট্রেলিয়া থেকে ২ আগস্ট দেশে ফিরে বসুন্ধরা এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের সাথে সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি বলেন, ‘তাদের সাথে যোগ দেওয়ার পর আমার মনে হয়েছিল, আমার কথা বলা উচিত, অন্তত আমার সন্তুষ্টির জন্য। আমি এই বিষয়ে কথা বলেছি ও এটি নিয়ে পোস্টও দিয়েছি।’
একই সময়ে, এটার ফলাফল ও সরকারের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার বিষয় নিয়েও ভাবতে হয়েছে সোহানকে, ‘আসলে আমি সন্তুষ্ট হয়েছি, যা আমার কাছে যথেষ্ট ছিল। কিন্তু আমি পরিণতি সম্পর্কে ভাবছিলাম। ৫ আগস্ট সরকার পতন না হলে আমি জানি না কিসের সম্মুখীন হতাম। কিন্তু আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আমি আমার হৃদয়ের ইচ্ছাকে পূরণ করতে পেরেছি কিনা। নিজেকে প্রকাশ করার জন্য আমার সেই স্বাধীনতা দরকার। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে আমি আবারও প্রতিবাদ করবো। আমি কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নই। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে আমার যদি মনে হয় এটা খারাপ, আমি প্রতিবাদ করবো।’
একজন খেলোয়াড় হিসেবে সোহান চান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) একটি ভালো টুর্নামেন্টে হিসেবে গড়ে উঠুক এবং একটি ব্র্যান্ড হিসেবে এটি ধারাবাহিকভাবে পরিচালিত হবে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট হাউস বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দল রংপুর রাইডার্সকে চলতি বিপিএলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সোহান। কিছু দিন আগে সোহানের অধীনে গ্লোবাল সুপার লিগ (জিএসএল) শিরোপা জিতেছিল রংপুর। চলতি বিপিএলে শিরোপার অন্যতম দাবীদার তার দল। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচের সবগুলোতেই জয় পেয়েছে রংপুর।
সোহান বলেন, ‘বিপিএল একটি ভাল অবস্থায় আসছিল। তবে আমরা এটার সম্ভাবনা নষ্ট করেছি। ২০১৮-২০১৯ সালে যখন এটি ভালো অবস্থায় আসছিল তখন মুজিব বর্ষ অনুষ্ঠিত হয়। আমি এটি সম্পর্কে কথা বলবো না। তবে সেই সময় বিপিএল বন্ধ রেখে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে একটি বিশেষ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল।’
সোহান মনে করেন, বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে একটি স্থিতিশীল চুক্তি থাকা উচিত। যাতে ধারাবাহিকভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো নিজেদের দলকে পরিচালনা করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজিরা জানে প্রতিবছরই বিপিএল অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য বিদেশি খেলোয়াড়দের সাথে যোগাযোগ করেছিলো তারা। কিন্তু পরবর্তীতে বিপিএল অনুষ্ঠিত না হলে, ফ্র্যাঞ্চাইজিরা বিদেশি খেলোয়াড় ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে তাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। ফলে আস্থার জায়গা নষ্ট হয়ে যায়। সেখানেই বিপিএলের বিপত্তি ঘটে। খেলোয়াড়রা সর্বদা তাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বারবার ফ্র্যাঞ্চাইজি পরিবর্তনে ভাল ফল আসেনি।’
সোহান আরো বলেন, ‘যদি ফ্র্যাঞ্চাইজি জানে, দীর্ঘ সময়ের জন্য দল চালাতে হবে, তখন পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবে। একজন খেলোয়াড় যদি জানেন আগামী তিন থেকে চার বছর এই দলে খেলবেন তাহলে ঐ দলের জন্য সে অনুগত থাকবে।’
এই বছর ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের জন্য চুক্তি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিসিবি। এমন পদক্ষেপের প্রশংসা করে সোহান বলেন, ‘এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। গোড়া থেকে সব কিছু শুরু করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমি মনে করি আমরা ভবিষ্যতে ভাল ফল পাবো।’