মধ্যনগরে ছাত্র সমাজের চাপের মুখে শিক্ষকের পদত্যাগ, আরেক শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত

রাসেল আহমদ, মধ্যনগর (সুুনামগঞ্জ) থেকে
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০৫:৫১ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া এক সহকারী শিক্ষককে দুই মাসের জন্য সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল (রবিবার ২৫ আগষ্ট) দুপুরে ওই বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শরীফ উদ্দিনের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আরেক শিক্ষক তিতাস মাহমুদের কথা কাটাকাটি হয়।
সোমবার (২৬ আগস্ট) সকাল সোয়া ১০টার দিকে শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধের অবসান চেয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাঠদান বর্জন করে। পরে বেলা ১১টার দিকে মধ্যনগর উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের শীর্ষ নেতা ফজলে রাব্বির নেতৃত্বে বহিরাগতসহ ৬০ থেকে ৭০ জন বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে আসেন। একপর্যায়ে তারা বিভিন্ন অভিযোগে সহকারী শিক্ষক শরীফ উদ্দিনকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে এবং ওই শিক্ষকের বন্ধু হয়ে তাকে নানা কাজে পরোক্ষভাবে সহায়তা করায় আরেক সহকারী শিক্ষক শামীম আহমেদকে দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করার জন্য প্রধান শিক্ষককে বলেন।
এ সময় প্রধান শিক্ষকসহ সব শিক্ষক ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ করেন। এতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজের নেতৃবৃন্দ ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষককেও পদত্যাগে বাধ্য করা হবে বলে হুমকি দেন। একপর্যায়ে শরীফ উদ্দিন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং সহকারী শিক্ষক শামীম আহমেদকে দুই মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করতে বাধ্য হন প্রধান শিক্ষক।
আরো পড়ুন: পানি বৃদ্ধির ফলে আবারো খোলা হলো কাপ্তাই বাঁধের জলকপাট
সহকারী শিক্ষক শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘যারা এখানে এসেছিল, তাদের মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষার্থী নয়। আমাকে মারধর করার ভয় দেখিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।’ তবে মধ্যনগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের শীর্ষ নেতা ফজলে রাব্বী বলেন, ‘শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখেই সহকারী শিক্ষক শরীফ উদ্দিন পদত্যাগ করেছেন। তাকে আমাদের পক্ষ থেকে চাপ দেয়া হয়নি। সহকারী শিক্ষক শামীম আহমেদ তার বন্ধু হয়ে তাকে পরোক্ষভাবে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করায় প্রধান শিক্ষক ওই শিক্ষককে দুই মাসের জন্য বহিষ্কার করেছেন।’ মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতীশ দর্শী চাকমা বলেন, তার উপজেলার ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে তিনি উপজেলার বাইরে আছেন।
সোমবার সকালে মধ্যনগর বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের দুই শিক্ষককে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ ও সাময়িক বরখাস্ত করতে বাধ্য করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচীতে অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের নেতারা বাধা প্রদান করেন ও অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন।
তবে মধ্যনগর উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের শীর্ষ নেতা ফজলে রাব্বী আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, 'ওই শিক্ষার্থীরা সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষক দুইজনের কাছে প্রাইভেট পড়ে। তাই এসব শিক্ষার্থী ওই শিক্ষকদের পক্ষ নিয়েছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করা হয়নি। আমি পাঁচ মিনিটের মতো ছিলাম সেখানে, এর ভিডিও ফুটেজও আছে।'