ভারতীয় কারাগারে বাংলাদেশি শ্রমিক, পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন

খোরশেদ আলম, শেরপুর থেকে
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৭ পিএম

ছবি : ভোরের কাগজ
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার এরশাদ নামে এক শ্রমিক এক মাস ধরে ভারতীয় কারাগারে রয়েছে। এক মাসেও তাকে ফেরত দেয়নি ভারতীয় পুলিশ। এরশাদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। এরশাদ (৩৫) উপজেলার সীমান্তের সিঙ্গাবরুনা ইউনিয়নের চান্দাপাড়া গ্রামের মৃত আ. ছাত্তারের ছেলে।
জানা গেছে, এরশাদ তার প্রতিবেশী বকুল তলা গ্রামের বিশিষ্ট গরু ব্যবসায়ী আজিজুর রহমানের গরুর খামারে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এক ছেলে ও এক মেয়েসহ চার সদস্যের পরিবার তার।
এরশাদের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, গত এক মাস আগে এরশাদ ভারত সীমান্তে গরু চরানো অবস্থায় দুইটি গরু ভারতে চলে যায়। বহু খোঁজাখুঁজির পরেও গরু না পাওয়ায় গরুর মালিক আজিজুর রহমান এরশাদকে তার গরু এনে দেয়ার জন্য চাপ দেন। এমতাবস্থায় খবর হয় গরু দুইটি সীমান্তের ওপারে ভারতের আদিবাসীদের বাড়িতে আটক আছে।
পরে গরুর মালিক আজিজুর রহমানের চাপে রাতের আধারে গরু উদ্ধার করতে শ্রমিক এরশাদ অবৈধভাবে সীমান্তপথে ভারতে প্রবেশ করে। এসময় ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে আটক করে। এরশাদের পরিবার ও সীমান্তের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, শ্রমিক এরশাদের দাবিতে ভারতের মহেন্দ্র গঞ্জ থানা পুলিশ এরশাদকে দুইদিন থানায় আটকে রেখে প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করে।
কিন্তু এলাকা থেকে কেউ যোগাযোগ না করায় মহেন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ এরশাদকে তোরা কারাগারে পাঠায়। এক মাসেও এরশাদকে ফেরত দেয়নি ভারতীয় পুলিশ। বর্তমানে এরশাদ ভারতের তোরা কারাগারে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
আরো পড়ুন : বিদ্যুৎহীন সেন্টমার্টিন, ভোগান্তিতে মানুষ
এদিকে তার পরিবারের সদস্যরা অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন। চান্দাপাড়া গ্রামে এরশাদের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী আঁখি আক্তার ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে কথা হলে এসব তথ্য জানা গেছে।
আঁখি আক্তার বলেন, তার স্বামী এরশাদ গরুর মালিক আজিজুর রহমানের দৈনিক মজুরিতে কাজ করতেন। এরশাদ ভারতের কারাগারে আটকের পর থেকে তাদের বাড়িতে ঠিকমতো চুলা জ্বলে না। খবর নেননি গরুর মালিক আজিজুর রহমান। ফলে অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে তার পরিবারের সদস্যরা।
তবে গরুর মালিক আজিজুর রহমান বলেন, তিনি বিভিন্নভাবে ভারত থেকে এরশাদকে ছাড়িয়ে আনার জন্য গোপনে চেষ্টার পাশাপাশি তার পরিবারের সদস্যের খোঁজখবর নিচ্ছেন।
নকশি সীমান্ত ফাঁড়ির কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে কোনো লোক ভারতে আটক হলে কমপক্ষে ৩ মাস কারাগারে থাকতে হয়। তিনি নতুন এসেছেন জানিয়ে বিষয়টি তার জানা নেই বলেও জানান। তিনি বলেন, তাদের মধ্যে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল। একারণে তারা হয়তো বিষয়টি বিজিবিকে অবহিত করেনি। ভারতীয় গবাদি পশু ও মানুষ বাংলাদেশ আসলে অথবা বাংলাদেশি গবাদি পশু ও মানুষ ভারতে প্রবেশ করলে উভয় দেশের বিজিবি ও বিএসএফের সমন্বয়ে ফেরত আনা নেয়া করা হয়। ওই পরিবারের লোকজন হয়তো বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বলে জানান তিনি।