কুলাউড়া সীমান্তে বাংলাদেশিকে কুপিয়ে হত্যা করলো ভারতীয়রা

বিকুল চক্রবর্তী, মৌলভীবাজার থেকে
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৫ পিএম

এ বিষয়ে শীঘ্রই পতাকা বৈঠকে কৈফত চাওয়া হবে। ছবি : ভোরের কাগজ
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মদা সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সীমান্তের জিরো লাইনে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই দেশের বাসিন্দাদের সংঘর্ষে এক বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
নিহত ওই বাংলাদেশি নাগরিকের নাম আহাদ আলী (৪৫)। তিনি ওই ইউনিয়নের মুরইছড়া নতুন বস্তির এওলাছড়া এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে।
ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (২৬ জানুয়ারি) ইউনিয়নের মুরইছড়া সীমান্তের দশটেকি (নতুন বস্তি) এওলাছড়া এলাকায়।
কর্মদা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম জানান, তাদের ইউনিয়নের বৃহৎ একটি অংশ সীমান্ত ঘেষা। সীমান্তে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অনেকের জমি রয়েছে। যেগুলোতে তারা কৃষি কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। সীমান্ত এলাকায় নো-ম্যান্স ল্যান্ডে ভারতীয় নাগরিকরাও কৃষি কাজ করে। আহাদও নো-ম্যান্স ল্যান্ডে কৃষিকাজ করতো। তার ওই কৃষি জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ভারতের এক নাগরিক ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে আহত করে। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কুলাউয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এ বিষয়ে না জেনে মন্তব্য করা যাবে না বলে জানান।
তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য সিলভেস্টার পাঠাং জানান, তিনি জানতে পেরেছেন সীমান্ত পিলার ১০৮৩ এর ৩৪ এস এর পাঁচ গজ বাংলাদেশের ভেতরে এ ঘটনা ঘটেছে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফের কাছে প্রতিবাদ পাঠানো হয়েছে এবং এ বিষয়ে শীঘ্রই পতাকা বৈঠকে কৈফত চাওয়া হবে।
আরো পড়ুন : শিবগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে কৃষক আহত
এ ব্যাপারে কর্মদা ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মাহমুদা আক্তার জানান, ঘটনাটি তার এলাকায় হয়েছে। তিনি এলাকাবাসীর কাছ থেকে শুনেছেন ভারতের হয়দার আলী নামে এক নাগরিকের সঙ্গে প্রথমে কথাকাটাকাটি হয় পরে হায়দার আলী তাকে কুপিয়ে জখম করে। সিলেটে হাসপাতালে নেয়ার পর আহাদ মারা যায়। তিনি জানান, তিনি শুনেছেন হায়দার আলীর সঙ্গে আহাদের আত্মীয়তাও রয়েছে।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আপছার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল মর্গে রয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য, এর আগে চলমান মাসের প্রথম সপ্তাহে একই সীমান্তের দশটেকির আলী নগরে বাংলাদেশর সাধারণ নাগরিক ও ভারতের বিএসএফ এর মধ্যে বিতণ্ডার ঘটনা ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। আর সে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন এক বিজিবি জোয়ান।
কুলাউড়া উপজেলার পৃথিম পাশা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহীন মিয়া বলেন, গত ৬ জানুয়ারি তার ইউনিয়নের ৯ নং ও ৩নং ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী দশটেকি গ্রামে কয়েকজন মানুষকে নিয়ে আসে বিএসএফ। সীমান্ত ফিলার ১৮৪৫/৩৬ এস এর নিকট গ্রামবাসী ওই বিএসএফ জোয়ানের দিকে ধাওয়া দিলে বিএসএফ একটি ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে।
এদিকে ওই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন ভারতীয় বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে এ সময় বাংলাদেশি নাগরিকরা তাদের ধাওয়া করছে আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে বিজিবির এক সদস্য (নায়েক নুরুল ইসলাম) উত্তেজিত বাংলাদেশি নাগরিকদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। এ সময় উত্তেজিত জনতা বিএসএফ এর বন্ধুক ধরে টানাটানি করেন। ওই বিজিবি জোয়ান জনতাকে বুঝিয়ে সরিয়ে নেন এবং বিএসএফ সদস্যকে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ফিরিয়ে দেন।
কর্মদা ইউনিয়নের আব্দুর রহমান বলেন, বিজিবির ওই সদস্য যদি ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করতেন তাহলে এখানে রক্তক্ষয়ী ঘটনার অবতারণা হতে পারতো। এতে বিজিবি বিএসএফ এর মধ্যে উত্তেজনা বাড়তো এবং দুই দেশের সর্ম্পকের অবনতি ঘটতো।