সব রোগের চিকিৎসায় আন্তরিক হোন

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২০, ০৯:৫০ পিএম
বর্তমান করোনা সংকট দেশের স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থার চিত্রটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। রোগীরা চিকিৎসা পাবেন না, এ পরিস্থিতি মেনে নেয়া যায় না। সংবিধানে চিকিৎসাসেবাকে একটি মৌলিক চাহিদা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সংবিধানকে কতটুকু মানছে চিকিৎসক সমাজ, তা আজ বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে কথা বলেছেন। এরপরও কি এই খাতের পরিবর্তন হয়েছে? এ কথা সত্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা আতঙ্ক রয়েছে সর্বত্র। চিকিৎসকদের মধ্যেও এই আতঙ্ক থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে হাসপাতালগুলোর চিকিৎসকরা করোনা আতঙ্কে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা দেবেন না, তা হতে পারে না। চিকিৎসাসেবা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার থেকে রোগীদের বঞ্চিত করা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। দেশে করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতাল ও ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে রোগীরা। চিকিৎসকদের অবহেলায় বিভিন্ন জায়গায় মৃত্যুর খবরও এসেছে। সরকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে বারবার নির্দেশনা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব জেলা হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিটি হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট ও ভেন্টিলেটর স্থাপন করতে হবে। এছাড়া উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা আরো বৃদ্ধি করতে বলেছেন তিনি। আমরা আশা করব সরকার প্রধানের নির্দেশনাকে সংশ্লিষ্টরা গুরুত্ব সহকারে নেবেন। বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও আমাদের দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যেগুলো দেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও বাস্তবে তার ধারেকাছেও নেই এসব প্রতিষ্ঠান। প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তার অভাব, পরিদর্শন ও তদারকির ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘাটতি এবং অতি মুনাফাভিত্তিক প্রকট বাণিজ্যিকীকরণের সম্মিলিত প্রভাবে বেসরকারি চিকিৎসাসেবা খাত কার্যত নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। দেশের চরম সংকটে এসব হাসপাতালের ভ‚মিকা কী তা প্রশ্ন জাগছে আমাদের মনে। চিকিৎসা পেশাটি রাষ্ট্রের অন্যান্য পেশার তুলনায় অনেক বেশি সম্মানের। এটা পেশা হলেও, চিকিৎসকরা মানুষের জীবন রক্ষায় কাজ করেন বলে এটি মানবসেবার একটি অংশও বটে। কিন্তু আজকাল এ পেশার চিকিৎসকের আচরণে মানবিকতার বালাই নেই বললে চলে। চিকিৎসকদের মাঝে নীতিনিষ্ঠা, মানবিকতা, সদাচার, কর্তব্যপরায়ণতা- এসব গুণের বেশি জারি হওয়ার কথা। এ দেশের অনেক চিকিৎসক এমনটাই। ডেঙ্গু সমস্যায় গত বছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাত-দিন কাজ করে শত শত মানুষের জীবন রক্ষা করে কত না বাহবা পেয়েছিলেন। এ জন্য অবশ্য বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে জীবনও দিতে হয়েছে। দেশের এই সংকটে নিশ্চয় আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন। রোগীদের প্রতি মানবিক হবেন- এমনটাই প্রত্যাশা রাখছি।