×

মুক্তচিন্তা

নারী উদ্যোক্তাদের হাতেই বাংলাদেশের উন্নয়ন

Icon

নিশাত আনজুম লোপা

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৩ পিএম

নারী উদ্যোক্তাদের হাতেই বাংলাদেশের উন্নয়ন

নিশাত আনজুম লোপা, নারী উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা, অরাম বাংলাদেশে ও আইন-অধিকার বিশ্লেষক

   

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় নারী উদ্যোক্তাদের অবদান দিন দিন বাড়ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেকারত্ব দূরীকরণে তাদের অংশগ্রহণ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, যা দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। নারী উদ্যোক্তাদের মাধ্যমেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক নতুন ধারার সূচনা হয়েছে। নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস, দারিদ্র বিমোচন, এবং সামগ্রিক সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে তাদের উদ্যোগ বড় ভূমিকা রাখছে।

প্রথমেই বলতে হয়, নারী উদ্যোক্তারা গত শতাব্দীর আশির দশক থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা ও নারীদের বেকারত্ব দূর করার জন্য সমবায় ও ক্ষুদ্র উদ্যোগের বিকাশ ঘটেছে। আশির দশকের পরের চার দশক ধরে নারীরা সমবায়ের পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোগ ও কৃষিখাতে বড় ভূমিকা পালন করেছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় ৩৫ লাখেরও বেশি নারী ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নারীরা নিজেদের উদ্যোগে কর্মসংস্থান তৈরি করছেন, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। এই উদ্যোক্তারা স্থানীয় পর্যায়ে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন, যা তাদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এভাবে নারী উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম দেশের বেকারত্ব হ্রাসে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

নারী ও পুরুষের বৈষম্য কমানো ও দারিদ্র বিমোচনে নারী উদ্যোক্তাদের প্রভাব এখন সুস্পষ্ট। পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও উপার্জনের সুযোগ তৈরি হওয়ায় পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের নারীরা যখন নিজস্ব উদ্যোগে এগিয়ে আসছেন, তখন তারা নিজেদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলছেন। পরিবারের জন্য নতুন আয়ের পথ তৈরি করছেন।  নারী উদ্যোক্তাদের কারণে দরিদ্র পরিবারের আয় বাড়ছে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী ও পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায়।

দেশে বিপুল সংখ্যক নারী উদ্যোক্তা থাকলেও, তাদের বিরাট অংশ এখনো ব্যবসায়িক সুবিধা বা ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আসতে পারেনি। এর একটি বড় কারণ ব্যাংক থেকে সঠিকভাবে সহযোগিতা না পাওয়া। অধিকাংশ নারী উদ্যোক্তা এখনও তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন না। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে আরও ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের সহায়ক ভূমিকার মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের পাশে দাড়াতে হবে। নারী উদ্যোক্তারা কম সুদে ঋণ নেয়ার সুবিধা বাড়াতে হবে। ব্যবসার বিস্তারে প্রশিক্ষণ ও বাজার বিস্তৃতকরণে সহায়তা করতে হবে। প্রায়শই দেখা যায়, বিভিন্ন এনজিও ও ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক প্রতিষ্ঠান নারী উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকলেও এই উদ্যোগগুলোর সাফল্যের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতা জরুরি।

শিক্ষার হার বাড়ার কারণে নারীদের চাকরি ও পেশাভিত্তিক কাজে উপস্থিতি বাড়ছে। চাকরির বাজারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি শিল্প ও ব্যবসায়িক উদ্যোগ শিক্ষিত নারীদের উপস্থিতি বাড়ছে। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। একটি উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে নারীর এমন সরব উপস্থিতি খুবই ইতিবাচক পদক্ষেপ।

নারী উদ্যোক্তাদের সুযোগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। তাদের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিএসআর ফান্ড বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন, যা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করতে পারবে। অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ফান্ড রাখে। এসব ফান্ড নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক সহায়তার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারী উদ্যোক্তারা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা করতে পারেন ও তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন, সে জন্য একটি সহনশীল ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

বিদেশে নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্য রপ্তানি একটি বড় সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তারা দেশে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প, পাটজাত পণ্য, তাঁত এবং অন্যান্য প্রচলিত পণ্য তৈরি করেন। এসব পণ্যের জন্য বৈশ্বিক বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা প্রদান করা উচিত, যা বিদেশি বাজারে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করবে। এটি একদিকে যেমন নারীদের আয়ের উৎস তৈরি করবে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিতেও বিদেশি মুদ্রা আনার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

নারী উদ্যোক্তাদের কার্যক্রমে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যেমন ভূমিকা রয়েছে, তেমনি সরকারকেও কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নারীদের জন্য উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রকল্পে প্রণোদনা, কর ছাড় এবং সহজ ঋণের ব্যবস্থা রাখা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, পল্লী অঞ্চলের নারীরা বিভিন্ন এনজিও এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান থেকে সহায়তা নিয়ে ছোট উদ্যোগ শুরু করেছেন, যা তাদের পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করছে। এসব উদ্যোগের বিকাশে ভূমিকা রাখতে হবে। বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের সাফল্য অর্জনে আর্থিক সহায়তা ও উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি, দক্ষতাবৃদ্ধি কর্মশালা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং সমসাময়িক ব্যবসায়িক তথ্যের সুযোগ তৈরির প্রয়োজন। এভাবেই নারী উদ্যোক্তারা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন।

লেখক: নিশাত আনজুম লোপা, নারী উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা, অরাম বাংলাদেশে ও আইন-অধিকার বিশ্লেষক

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App